ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও গতি আসবে, যানজট থেকে মুক্তি পাবে জনগণ

দুই মহাসড়কে চার লেন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩ জুলাই ২০১৬

দুই মহাসড়কে চার লেন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চার লেনে উন্নীত ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ফলক উন্মোচন করে এই দুই মহাসড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো দেশের দুই জাতীয় মহাসড়কের। অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত এই সড়ক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের পথ আরও সুগম হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন এই দুই সড়কের চার লেন উদ্বোধন করায় মানুষ যানজট থেকে মুক্তি পাবেন। স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি যেতে পারবেন। শেখ হাসিনা বলেন, রাজধানীর সঙ্গে দেশের সব স্থানের যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য মহাসড়কের এই চার লেন উন্নীত করার কাজ উদ্বোধন করা হলো। যোগাযোগ খাতকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশবাসীকে ঈদ উপহার হিসেবে মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হলো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, সড়ক উদ্বোধন হলো। এখন সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন। আইন মেনে চললে সড়ক দুর্ঘটনাও ঘটবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্যের হার আমরা ২২ ভাগে কমিয়ে আনতে পেরেছি এবং জিডিপি বেড়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এ সময় অন্যদের মধ্যে সড়ক পরিহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সড়ক সচিব এম এন সিদ্দিক, সেনাবাহিনীর প্রধানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দুটি প্রকল্প শুরুর মধ্য দিয়ে দেশের যোগাযোগ খাত আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগবে আগের চেয়ে অর্ধেক। এতে দুই অঞ্চলেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়বে। কমবে সড়ক দুর্ঘটনা ও পরিবহন ব্যয়। যানজট সমস্যারও সমাধান হবে ফোন লেন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরামদায়ক, সহজতর, নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করতে উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া মোড় থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৮৭ দশমিক ১৮ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়। যা ২০১৩ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা এ পর্যন্ত আসে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক চালু হলে দেশের সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেনের উদ্বোধনের পর দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার মহাসড়কে চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়া এবং আসা যাবে। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চারলেন চালু হলে ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে উৎপাদিত শিল্প ও কৃষিপণ্য ঢাকাসহ দেশের অন্য স্থানে সহজেই পরিবহন করা যাবে। মহাসড়ক দুটি চারলেনে উন্নীত হলে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট কমে যাবে, পরিবহন ব্যয়ও কমে যাবে বলে জানান পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম প্রকল্পের কাজ ১০টি প্যাকেজে ভাগ করে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়। এর মধ্যে দেশীয় প্রতিষ্ঠান রেজা কনস্ট্রাকশনকে দুটি ও টিবিএল-এসিএলকে দেয়া হয় একটি প্যাকেজ। বাকি সাত প্যাকেজের কাজ দেয়া হয় চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশনকে। প্রথম প্রস্তাব অনুযায়ী এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় সময় বাড়ানো হয় দ্বিতীয় দফা ডিপিপিতে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ব্যয়ের পরিমাণও। কিন্তু নতুন সময়সূচী অনুযায়ীও শেষ করা যায়নি। তৃতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয় ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত। এই সময়ে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। পরে আরও এক দফা সময় এবং ব্যয় বাড়ে এ প্রকল্পের। তাতে রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য কাজের জন্য ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। আর সর্বশেষ অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী এ প্রকল্পের ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা।
×