ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়েলস-বেলজিয়ামের ইতিহাসের হাতছানি

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১ জুলাই ২০১৬

ওয়েলস-বেলজিয়ামের ইতিহাসের হাতছানি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গৌরবময় ইতিহাসের হাতছানি সামনে রেখে ইউরো ফুটবলের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ওয়েলস ও বেলজিয়াম। আজ দিবাগত রাতে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ফুটবলের আলোচিত দু’দলের খেলা। ম্যাচটি জিতে বেলজিয়াম ও ওয়েলস দু’দলই সেমিফাইনালে খেলার প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছে। শেষ আটে উঠেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছে দল দুটি। এবার সেমিফাইনালের টিকেট পেলে রেকর্ডটা আরও মজবুত হবে। বলা হচ্ছে, ওয়েলস ও বেলজিয়ামের বর্তমান দল দেশ দুটির সোনালি প্রজন্ম। ধারাবাহিক তাক লাগানো সাফল্য দেখানো বেলজিয়াম ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরে অবস্থান করছে। আজকের ম্যাচ জিতলে দেশটি ১৯৮৬ সালের পর বড় কোন টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠবে। ১৯৮৬ সালে দিয়াগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার কাছে সেমিতে হেরেছিল বেলজিকরা। অন্যদিকে ওয়েলস তাদের ইতিহাসে ৫৮ বছর পর কোন বড় টুর্নামেন্টে খেলছে। সুযোগ পেয়েই নিজের সামর্থ্যরে প্রমাণ রেখে চলেছে দেশটি। গ্যারেথ বেলের নেতৃত্বাধীন দলটি সেমিফাইনালে খেলতে আশাবাদী। দলটির অধিনায়ক বেল এখন পর্যন্ত তিন গোল করে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা। বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বেল বলেন, আমাদের জন্য অনেক প্রাপ্তি অপেক্ষা করছে। সবাই মুখিয়ে আছে দেশকে আরও ভাল কিছু দিতে। রিয়াল মাদ্রিদ তারকা বলেন, আমরা জানি ১৯৫৮ সালে (বিশ্বকাপ ফুটবল) কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল ওয়েলস। কিন্তু এই ম্যাচটিও ওয়েলসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস রচনার সুযোগ আমরা হাতছাড়া করতে চাই না। বেলজিয়ামের অধিনায়ক ইডেন হ্যাজার্ড ফরাসী দর্শকদের সমর্থন আশা করতেই পারেন। বর্তমানে চেলসিতে খেলা উইঙ্গার ২০১২ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ফ্রান্সে দল লিলেতে। মূলত ফ্রান্স থেকেই তার উত্থান। যে কারণে ফ্রান্সে তার অসংখ্য ভক্ত-সমর্থক আছে। ফ্রান্সকে নিজের দেশের মতোই মনে করেন হ্যাজার্ড। বেলজিয়ামের কোচ মার্ক উইলমেটও দর্শকদের সমর্থন আশা করছেন। দু’দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, সবসময় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত ১২ বারের মুখোমুখিতে বেলজিয়ামের জয় ৫ ম্যাচে, ৪টিতে জয় ওয়েলসের। বাকি ৩ ম্যাচ অমীমাংসিত থাকে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েও অনেক এগিয়ে বেলজিকরা। আর্জেন্টিনার পরে তাদের অবস্থান দুইয়ে। আর ওয়েলস আছে ২৬ নম্বরে। ওয়েলস বিশ্বকাপ খেলেছে মাত্র একবার। সেই ১৯৫৮ সালে। আর বিশ্বকাপ খেলাটা নিয়মিতই করে ফেলেছে বেলজিয়াম। এ পর্যন্ত ১২ বার বিশ্বকাপে খেলা দেশটি ২০১৪ সালে ব্রাজিলেও দাপটের সঙ্গে খেলেছে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচগুলোতে অবশ্য বেলজিকদের কাছে পাত্তাই পায়নি ওয়েলস। ছয়বারের মুখোমুখিতে বেলজিয়ামের জয় চার ম্যাচে। একটিতে মাত্র ওয়েলসের। বাকি ম্যাচটি ড্র হয়। শেষ ষোলোতে বেলজিয়াম ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে হাঙ্গেরিকে। প্রতিপক্ষকে পাত্তা না দিয়ে সেরা আটে নাম লেখায় উইলমেটের দল। বিশ্বফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরের দল বেলজিয়াম। ইউরোতেও ফেবারিটের তকমাটা গায়ে মেখে খেলতে নামে তারা। এর কারণটা হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যাচেই বুঝিয়ে দিয়েছেন হ্যাজার্ড, ফেলাইনিরা। ফুটবলের মেজর টুর্নামেন্টে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় তুলে নেয় বেলজিয়ানরা। দারুণ ওই জয়ের আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করেই কোয়ার্টার ফাইনালে মাঠে নামছে দলটি। অন্যদিকে নর্দান আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আত্মঘাতী গোলের সৌজন্যে ওয়েলস জয় পায় ১-০ গোলে। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে ওয়েলস জয়সূচক গোলটি পায়। লেফট উইং দিয়ে ঢুকে পড়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ক্রস করেন বেল। গ্যারেথ ম্যাকলি চেয়েছিলেন দলকে বিপদোন্মুুক্ত করতে। কিন্তু উল্টো নিজেদের পোস্টেই বল ঢুকিয়ে দেন আয়ারল্যান্ডের এই ডিফেন্ডার। ওই জয়ে সেরা আটে এসেছে ওয়েলস। বেলজিয়াম কঠিন প্রতিপক্ষ হলেও জয় ছাড়া কিছুই ভাবছে না দলটি। ৫৮ বছর পর বড় কোন আসরে খেলতে এসে নিজেদের সেরা সাফল্যকে ছাপিয়ে যেতে চায় তারা। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে শেষ আটে খেলেছিল ওয়েলস। কিন্তু সেমিফাইনালে ওঠার দ্বৈরথে ব্রাজিলের কাছে লড়াই করে ১-০ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিল। সেই ম্যাচে সেলেসাওদের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার পেলে। এবার ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে আবারও সেরা আটে উঠে এসেছে ওয়েলস। এখন লক্ষ্য একটাই, আগের সাফল্যকে ছাপিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা। ওয়েলস না বেলজিয়াম কোন দলের লক্ষ্য পূরণ হয় সেটাই এখন দেখার।
×