ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুখ ‘দেখাতে’ উদ্যোগী দুই পড়শিও

প্রকাশিত: ২০:০৭, ৩০ জুন ২০১৬

মুখ ‘দেখাতে’ উদ্যোগী দুই পড়শিও

অনলাইন ডেস্ক ॥ কলকাতা চেষ্টায় নেমেছে। এ বার পড়শি দুই শহরের পালা। ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’র চেনা ছবিটা বদলে ফেলার পথে কলকাতার পিছু পিছু এ বার পা বাড়াচ্ছে বিধাননগর এবং হাওড়াও। কলকাতা পুরসভার পরিসংখ্যান বলছে— অবৈধ ভাবে বসানো বা কর ফাঁকি দেওয়া হোর্ডিং সরানোর ৯২ দিন ব্যাপী অভিযানে ইতিমধ্যেই শহর থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে ১০ হাজার সাময়িক হোর্ডিং (বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ঘোষণা বা বিজ্ঞাপনী)। এ ছাড়াও বাড়ির উপরে লোহার কাঠামোয় বসানো হোর্ডিং সরেছে ১১৯টি, ফুটপাথের উপর থেকে ৩৩টি। তবে বিভাগীয় মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের দাবি, শহরকে পুরোপুরি হোর্ডিং থেকে মুক্ত করতে এখনও অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। তাই এই অভিযান নিয়মিত চালিয়ে যেতে চায় পুরসভা। সল্টলেক, বিধাননগর, রাজারহাট-গোপালপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা এবং হাওড়ার স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডের ছবিটাও যথেষ্টই বেহাল। নানা মাপের হোর্ডিংয়ে ছেয়ে গিয়েছে চারপাশ। সৌন্দর্যায়নের পথে যা বড় কাঁটাও বটে। সেই ছবিটাই বদলাতে চলেছে এ বার, অন্তত তেমনটাই দাবি বিধাননগর পুর নিগম এবং হাওড়া পুরসভার। এক দিকে যেখানে বৈধ হোর্ডিংয়ের সংখ্যা বেঁধে দিয়ে, তার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করে এবং অবৈধ হোর্ডিং সরিয়ে ফেলে লক্ষ্যপূরণের দিকে এগোতে চাইছেন বিধাননগরের পুরকর্তারা, অন্য দিকে বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশন চত্বরের সমস্ত অবৈধ হোর্ডিং ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাওড়া পুরসভা। হোর্ডিং নিয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রবিবার বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের ব্যাখ্যা— এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশলে এক দিকে কয়েকটি এলাকাকে হোর্ডিংমুক্ত করার পাশাপাশি কয়েকটি জায়গা আলাদা করে হোর্ডিংয়ের জন্যও চিহ্নিত করা হবে। অবশ্য এই পরিকল্পনার আর একটি উদ্দেশ্য হল— হোর্ডিং থেকে যত বেশি সম্ভব আয় করা। পরিকল্পনা কার্যকর হলে সেই উদ্দেশ্যও সিদ্ধ হবে বলে মনে করছেন পুর নিগমের কর্তারা। তবে সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে হোর্ডিং নিয়ে নজরদারি, আয়-ব্যয়ের সমতা রক্ষা করার উপরেই। ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে হোর্ডিংয়ের তথ্য সংরক্ষণও করা হচ্ছে। বস্তুত, হোর্ডিং নিয়ে বারবারই সরগরম হয়েছে পূর্ব কলকাতার এই বিস্তীর্ণ এলাকা। বাম আমল থেকেই ভিআইপি রোড, রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা সল্টলেকের ব্রডওয়ে ঘিরে রীতিমতো হোর্ডিং-যুদ্ধ চলছে। বাদ নেই সল্টলেক থেকে রাজারহাট-গোপালপুরের ছোট রাস্তাগুলিও। এর পাশাপাশি, বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি ফ্লেক্স, ব্যানারও লাগানো হয়। এবং পরে সেগুলি খুলে ফেলার কোনও প্রচেষ্টা কোনও মহলের তরফেই দেখা যায় না বলেই অভিযোগ। বাসিন্দাদের দাবি, এ নিয়ে বারবার নালিশ জানিয়েও সুরাহা মেলেনি। তবে বর্তমানে এক দিকে আয় বৃদ্ধি, অন্য দিকে সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প কার্যকর করছে পুরসভা। সেই কাজেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শহরের যত্রতত্র হোর্ডিং। পুরসভা সূত্রের দাবি, যে পরিমাণ হোর্ডিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তার দ্বিগুণেরও বেশি পরিমাণ হোর্ডিং রয়েছে পুর নিগমের ৪১টি ওয়ার্ড এলাকায়। কী ভাবে অনুমতি ছাড়াই হোর্ডিং বসানো হল, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন এক পুরকর্তা। বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘সল্টলেক থেকে রাজারহাট-নিউ টাউন-গোপালপুর এলাকায় মোট কত বৈধ হোর্ডিং রয়েছে, তার সম্পূর্ণ তথ্য ছিল না পুর নিগমের কাছে। সেগুলি এখন শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু তার বাইরে আর কোনও হোর্ডিং রাখা হবে না।’’ পাশাপাশি তিনি আরও জানান, হোর্ডিং ব্যবসায়ীদের একটি অংশ টাকা বকেয়া রেখেছেন। প্রথমে তাই বকেয়া টাকা জমা করার আবেদন জানানো হবে। তা না মেটানো হলে সংশ্লিষ্ট হোর্ডিংগুলির ক্ষেত্রেও কড়া পদক্ষেপ করবে পুর নিগম। যদিও সাবেক তৃণমূল-পরিচালিত বিধাননগর পুরসভা নির্দিষ্ট করেই হোর্ডিংয়ের সংখ্যা জানিয়ে দিয়েছিল বলে তাদের দাবি। অন্য দিকে, সোমবার হাওড়ার পুর-কমিশনার নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড চত্বরে প্রায় এক হাজার অবৈধ হোর্ডিং চিহ্নিত করা হয়েছে। যেগুলি বেআইনি ভাবে এত দিন ধরে পুরসভাকে ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করেছে। শহরে ঢোকার মুখে এই ধরনের দৃশ্যদূষণ যাতে আর না হয়, তাই অবৈধ হোর্ডিং ভাঙার এই সিদ্ধান্ত।’’ আজ বৃহস্পতিবার থেকে এই অভিযান শুরু হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। হাওড়া স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড চত্বরে সৌন্দর্যায়নের জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করেছে পুরসভা। ইতিমধ্যে হাওড়া সেতুর কাছে জিআর রোড বরাবর তৈরি হয়েছে তিনটি পার্ক। আগামী দিনে পরিকল্পনা রয়েছে স্কাইওয়াক তৈরি করার। পাশাপাশি এত বছর ধরে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের জমিতে গঙ্গাতীর বরাবর যে একাধিক বেআইনি নির্মাণ গড়ে উঠেছিল, তা ভেঙে দিতে পুরসভার সাহায্য চেয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। স্থির হয়েছে, ওই জমিতে সৌন্দর্যায়ন করবে পুরসভা। এর মধ্যে গোটা চত্বর জুড়ে হোর্ডিংয়ের রমরমা যে সৌন্দর্যায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা মানছেন পুর-কর্তৃপক্ষই। হাওড়া পুরসভার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গোটা চত্বর অবৈধ হোর্ডিং-এ ছেয়ে গিয়েছে। ওই হোর্ডিংগুলো শহরের প্রবেশ পথের মুখে আবর্জনা। তাই ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ কিন্তু কী অর্থে অবৈধ ওই হোর্ডিংগুলি? হাওড়ার পুর-কমিশনার বলেন, ‘‘পুরসভার অনুমতি না নিয়েই ওই হোর্ডিংগুলি বসানো হয়েছে। ফলে সেগুলি থেকে বছরের পর বছর ধরে কোনও রাজস্ব আদায় হতো না। এই ধরনের হোর্ডিং চিহ্নিত করার পরেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য নবান্নের নির্দেশও আমরা পেয়েছি।’’ কিন্তু এত দিন ধরে এই অবৈধ হোর্ডিং থাকল কী করে? হাওড়া পুরসভার জঞ্জাল ও হোর্ডিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ গৌতম চৌধুরী বলেন, ‘‘ভোটের আগেই অবৈধ হোর্ডিংগুলি চিহ্নিত করা হয়েছিল। তখনই ঠিক হয়েছিল, সেগুলি ভেঙে দেওয়া হবে। কিন্তু ভোটের বিধিনিষেধ থাকায় সেই কাজ শুরু করা যায়নি। তাই এ বার অভিযান শুরু করা হচ্ছে।’’ সূত্র : আনন্দাবাজার পত্রিকা
×