ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সন্দেহভাজন ৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মিতু হত্যার চক্রান্তকারী চক্রের মুসা ও নবী গুম!

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩০ জুন ২০১৬

মিতু হত্যার চক্রান্তকারী চক্রের মুসা ও নবী গুম!

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর চাঞ্চল্যকর খুনের আসল রহস্য আদৌ উদঘাটিত হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭ জন গ্রেফতার হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন হত্যা চক্রান্তে জড়িত, ২ জন কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করেছে এবং একজন অস্ত্র যোগান দিয়েছে, আরেকজন হত্যাকা-ের পর নিজ হেফাজতে অস্ত্র রেখেছে। মূলত কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৭ থেকে ৮। বুধবার সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ৫ দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই ৫ দুর্বৃত্ত হচ্ছে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া মুসা, নবী, রাশেদ, শাহজাহান ও কালু। স্থল, বিমান ও নৌ পথে কোনভাবেই এরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সে বিষয়ে প্রতিটি স্পটে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে এবং তাদের ছবিও সংযোজন করা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মুসা ও নবী গুম হয়ে গেছে বলে গুঞ্জন রটেছে। কিন্তু গুমের সঙ্গে কারা জড়িত তা অজ্ঞাত। তবে পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও বাবুল আক্তারের বিশ্বস্ত সোর্স মুসা এ ঘটনার বিষয়ে সবকিছু জেনেই হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে কয়েক ভাড়াটিয়া খুনীদের নিয়ে। এদিকে, গত ১২ জুন মুসাকে বহদ্দারহাট থেকে পুলিশ আটক করে। এরপর একে একে নবী, রাশেদ, শাহজাহান, কালু, ওয়াসিম, আনোয়ার, ভোলাইয়া ও মনিরকে আটক করা হয়। আটক ওয়াসিম ও আনোয়ার গত রবিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এরপর গত মঙ্গলবার গ্রেফতার হয় অস্ত্র সরবরাহকারী ভোলাইয়া ও হত্যাকা-ের পর ব্যবহৃত দুটি অস্ত্র হেফাজতে রক্ষণকারী মনির হোসেনকে। এদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা ডিবি। এ নিয়ে এখনও শুনানির দিন ধার্য হয়নি। এদিকে, মিতু হত্যাকা- নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ধীরে ধীরে নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। অফিসিয়ালি তারা কিছু বলতে নারাজ। কিন্তু আনঅফিসিয়ালি বলছেন অনেক কিছু। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী কিলিং মিশনের মূল প্ল্যানার মুসা ও নবীকে পুলিশ হেফাজতে আটক রাখার কথা এতদিন প্রচার ছিল। এখন বলা হচ্ছে এদের ধরার জন্য আকাশ ও জলপথে সীমান্তের পয়েন্টগুলোতে জরুরী বার্তা পাঠানো হয়েছে, যাতে তারা দেশত্যাগ করতে না পারে। কিন্তু বেশ কয়েক কর্মকর্তা অভিন্ন সুরে স্বীকার করেছেন মুসা ও নবীকে ইতোমধ্যে গুম করে ফেলা হয়েছে। অথবা তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে। কোনটিরই শতভাগ সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে। যেহেতু ওয়াসিম ও আনোয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে মুসার মাধ্যমে ভাড়ায় অস্ত্র এনে মিতুকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে। সেক্ষেত্রে মুসা ও নবীকে আটক করার কথা এখন পর্যন্ত বলা হয়নি গ্রেফতার তো দূরের কথা। এখন তথ্য বেরিয়েছে এদের গুম করে ফেলা হয়েছে। গুম কারা করেছে, কেন করেছেÑএসব প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। মিতু হত্যা তদন্তে মুসার নাম পর্যন্ত থেমে যেতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। মুসাকে কে দায়িত্ব দিয়েছে, কত লাখ টাকায় তার সঙ্গে দফারফা হয়েছেÑতা হয়তো অফিসিয়ালি কখনও জানা যাবে না। তবে মিতু হত্যার সমস্ত কিছুই এখন পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। সাক্ষ্য সাবুদের অভাবে হয়তো এ মামলার গতি কি হয় তা একমাত্র ভবিষ্যতই বলে দেবে। উল্লেখ্য, মুসার পরিবার থাকত নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায়। এখন পরিবারের সদস্যরাও গা-ঢাকা দিয়েছে। কোথায় গেছে, কেন গেছে তাও কেউ জানে না। বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, মিতু হত্যার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মিতুর বাবা-মার পরিবার। কিন্তু তারা এ হত্যাকা-ের বিচার চাচ্ছে ঠিকই কিন্তু সন্দেহের তীর কোনদিকে তা বলছেন না। মিতুর স্বামী এসপি বাবুল আক্তার ঘটনার পর চট্টগ্রামে এসে ঢাকায় গিয়ে তাদের বাসায় অবস্থান করছেন। সে বাসা থেকেই বাবুল আক্তারকে গভীর রাতে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় এবং প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়া হয়। ছেড়ে দেয়ার পর থেকে তিনি ওই বাসায় রয়েছেন। ওই বাসার নিরাপত্তায় পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছিল। সোমবার থেকে সে পুলিশও উধাও। বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজি থেকে উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা যারা এ হত্যাকা-ের তদন্ত বা মনিটরিংয়ের সঙ্গে জড়িত তারা সবাই পরিষ্কার হয়ে গেছেন মিতু হত্যাকা-ের অন্তর্নিহিত রহস্য। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সবাই মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। কেন কুলুপ এঁটেছেন তা বলা হচ্ছে না। সময় হলে এবং তদন্ত শেষ হলে সবই জানা যাবে এমন তথ্যই দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ও তদন্ত সংস্থায় জড়িত কর্মকর্তারা। যারাই মুখ খোলেন তারাই বলেন ‘খবরদার আমার নাম যাতে কোনভাবেই প্রকাশ না হয়।’ উল্লেখ্য, মিতু হত্যাকা-ের পর একদফা আইও বদল হয়েছে। বর্তমানে ডিবির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান তদন্তে নিয়োজিত। তাকে সহায়তা দেয়ার জন্য আইজির নির্দেশে ৫ কমিটি কাজ করছে। এছাড়া কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, সিআইডি, র‌্যাব ও থানা পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে। বুধবার পর্যন্ত জানা গেছে, তদন্ত কার্যক্রম একপ্রকার শেষ হয়ে গেছে। আনঅফিসিয়ালি যে তদন্ত চলছে সেটা সময়ক্ষেপণ ও কিলিং মিশনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কয়েক আসামিকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া। জানা গেছে, সব আসামিকেই পুলিশের আওতায় আনা হয় মিতু হত্যার কয়েকদিন পরই। মোটর সাইকেলে কিলিং মিশনের ৩ সদস্য মুসা, নবী ও ওয়াসিম ধরা পড়েছে বহু আগে। কিন্তু এদের মধ্যে ওয়াসিম ও আনোয়ারকে গ্রেফতার দেখানো হয় পরে। অনুরূপভাবে অস্ত্র সরবরাহকারী ভোলাইয়া ও অস্ত্র সংরক্ষণকারী মনির হোসেনের অবস্থাও একই। আগে থেকেই এরা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে, গ্রেফতার দেখানো হয়েছে গত মঙ্গলবার। বর্তমানে এরা সকলেই জেলহাজতে রয়েছে। কিলিং মিশনের সদস্য ওয়াসিম এবং রেকিতে অংশ নেয়া আনোয়ার ধরা পড়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল প্রায় সকল আসামিকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শীঘ্রই প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে। কিন্তু পরবর্তীতে নাটক সিনেমার মতো যে দৃশ্যপট চলছে তাতে সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গত কারণে বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে যেহেতু মুসা ও নবী এ হত্যাকা-ে জড়িত এবং মুসা হত্যাকা- বাস্তবায়নকারীদের প্রধান সেহেতু তদন্ত আর ওপর পর্যন্ত হয়ত যাবে না। এখন বলা হচ্ছে মুসা ও সহযোগীদের ধরার জন্য আকাশ ও স্থলপথের পয়েন্টগুলোতে জরুরী বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে যাতে তারা দেশত্যাগ করতে না পারে।
×