ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রা

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ ঈদে বাৎসরিক বিড়ম্বনা

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৩০ জুন ২০১৬

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ ঈদে বাৎসরিক বিড়ম্বনা

শফিক শামীম সংসারে একমাত্র আয়ের উৎস সেলিম খান। বাড়ি যশোর জেলায়। ঢাকায় একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। বাড়িতে ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, ছোট ভাই-বোন, বাবা-মা ও দাদা-দাদির জন্য নতুন কাপড় কিনেছেন। অনেক দিন বাড়িতে যাওয়া হয় না। চাকরির কারণে পরিবারের সঙ্গে থাকা হয় না। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে সকলের সঙ্গে আনন্দ করবেন। গাবতলী থেকে শত কষ্টে একটি টিকেট সংগ্রহ করেছেন। টিকেট পাওয়াতে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। কিন্তু বাড়িতে যেতে পারেননি। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে পাটুরিয়া ঘাটে ধুলাবালির মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলেন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। ঈদের দিন সকালে জ্ঞান ফিরলে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রতি ঈদে সেলিমের মতো অনেকেই অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরে সর্বস্ত হারাচ্ছেন। ঈদ উপলক্ষে ছিনতাইকারী, পকেটমার, পরিবহন দালাল, রিক্সা, টেম্পো, সিএনজি, অটো চালকদের দৌরাত্ম্য কাটিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করতে হয়। এর মধ্যে তো খালাখ- রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা আছেই। সমস্যাগুলো যেন ঘরমুখী সাধারণ মানুষের শরীরে সহ্য হয়ে গেছে। ঈদ আসলে কর্তৃপক্ষ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সকল সমস্যা সমাধান করেন এবং প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বাস্তবে ঘরমুখী মানুষ কতটা উপভোগ করতে পারছে। প্রতিবছর একই রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বরং রাস্তায় অকারণে ট্রাফিক পুলিশদের অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। ঈদে বাড়তি চাপ হবে স্বাভাবিক। তবে কৃত্রিম সমস্যা তৈরি করে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করে লাভবান হচ্ছে একটি মহল। প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কোন কিছু হচ্ছে না। ঈদে বেশি সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় রাজধানীর বাসস্ট্যান্ডে, লঞ্চ ঘাটে, রেলস্টেশনে এবং রাজধানীর বাইরে ঘাটে ঘাটে। যেমন রাজধানী বাসা থেকে বের হলে রিক্সা, সিএনজি, টেম্পোওয়ালাদের দৌরাত্ম্যের শিকার হতে হয়। বাসস্ট্যান্ডে এসে পরিবহন দালালদের হাতে পড়ে বাড়তি খরচ করতে হয়। অনেক সময় ভাড়া নিয়ে উধাও হয়ে যায়। প্রতিযোগিতা করে গাড়িতে উঠলেও মৌসুমী গাড়িওয়ালাদের কারণে দুর্ঘটনা তো আছেই। ফেরিঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। লঞ্চে পার হলে কুলি, ইজারাদার, রিক্সা, ভ্যান ও দালালদের খপ্পরে পড়তে হয়। এর মধ্যে অনেকে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে হয়। এদিকে সেতু ও পরিবহনমন্ত্রী এবং নৌমন্ত্রী প্রতিবছর আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে আসছেন। আর রুটিন ওয়ার্কের মতো প্রতি বাসস্ট্যান্ডে এবং নৌরুটে পরিদর্শন করছেন। বরং পরিদর্শনের কারণে আরও দুর্ভোগ পোহাতে হয় ঘরমুখী মানুষের। আর সাধারণ জনতা আশ্বাসের বাণী শুনে আশ্বান্বিত হয়ে পায়ে পায়ে সমস্যার মোকাবেলা করে ঘরে ফিরতে হয়। ঈদে ঘরমুখী মানুষের জন্য সমস্যাগুলো স্থায়ীভাবে সমাধান করা প্রয়োজন। কারণ কর্মের কারণে অনেককে ঈদ ছাড়া বাড়িতে আসতে পারেন না। আর ঈদেও যদি নানা প্রকার সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় তাহলে ঈদের আনন্দ করার উৎসাহ হারাবে সাধারণ মানুষ। গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী থেকে
×