ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইসল্যান্ড-ধাক্কায় ডুবল ইংরেজবাহিনী

চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে বিদায় করে শেষ আটে ইতালি

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৯ জুন ২০১৬

চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে বিদায় করে শেষ আটে ইতালি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মধুর প্রতিশোধ নিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইতালি। সোমবার রাতে ফ্রান্সের সেইন্ট-ডেনিসে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর ম্যাচে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ২-০ গোলে পরাজিত করে গত দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে। আজ্জুরিদের হয়ে গোল করেন জিওর্জিও চিয়েল্লিনি ও গ্রাজিয়ানো পেল্লে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের পর কোন গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে এটাই স্পেনের বিপক্ষে ইতালির প্রথম জয়। ২০১২ সালের সবশেষ আসরের ফাইনালে এই স্পেনের কাছেই ৪-০ গোলে হেরে রানার্সআপ হতে হয়েছিল ইতালিকে। এবার সেই স্পেনকে শেষ ষোলো থেকেই বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে জিয়ানলুইজি বুফনের দল। সেই সঙ্গে স্প্যানিশ রাজত্বেরও অবসান হলো বলে মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো জিতে অনন্য ইতিহাস গড়েছিল স্পেন। কিন্তু ২০১৪ সালে ব্রাজিলে বিশ্বকাপের মুকুট হারানোর পর এবার ইউরোর ট্রফিও হারালো রামোস, পিকেরা। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে পুঁচকে আইসল্যান্ড। এই প্রথম ইউরো খেলতে আসা দেশটি ফুটবলের জনকদের হারিয়ে দিয়ে পৌঁছে গেছে সেরা আটে। ফুটবলবিশ্বে এটি নিয়ে চলছে তুমুল হৈচৈ। আইসল্যান্ডের এই সাফল্য রূপকথাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করছেন অনেকে। অন্যদিকে ইংলিশরা যে শুধু ফাঁকা বুলি আওড়ায় সেটা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ ছিল ইংল্যান্ডের জন্য সত্যিকারের হতাশার। মাত্র দুই ম্যাচ পরই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়ে ১৯৫৮ সালের পরে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বাজে পারফর্মেন্সের সাক্ষী হয় ইংলিশরা। কিন্তু ইউরো ২০১৬’র বাছাইপর্বে ১০ ম্যাচেই শতভাগ জয় দিয়ে প্রথম দল হিসেবে চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করার পর এবার ইংল্যান্ডকে নিয়ে অনেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু আবারও বড় টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হয়ে হতাশ হতে হয়েছে ইংলিশদের। স্পেনের বিপক্ষে ইতালি জিতেছে যোগ্য দল হিসেবেই। প্রথমার্ধে একতরফা প্রাধান্য বিস্তার করে খেলে এ্যান্টোনিও কন্টের দল। বিরতির পর স্পেন আক্রমণের চেষ্টা করেও প্রতিপক্ষের দুর্ভেদ্য ডিফেন্সে ফাটল ধরাতে পারেনি। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে এগিয়ে যায় চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বক্সের বাইরে গ্রাজিয়ানো পেল্লেকে ফাউল করেন স্পেনের অধিনায়ক সার্জিও রামোস। এডার মার্টিন্সের ফ্রিকিক স্পেনের গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়া ফিরিয়ে দিলেও বল ছিল বক্সে মধ্যেই। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে নেন চিয়েল্লিনি। প্রথমার্ধে ডি গিয়ার দুর্দান্ত গোলরক্ষণের কারণে ব্যবধান বাড়াতে পারেনি ইতালি। তেমনি বিরতির পর ইতালির গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফনের দৃঢ়তা সমতায় ফিরতে দেয়নি স্পেনকে। ‘আজ্জুরি’দের জয় নিশ্চিত করা গোলটি হয় শেষ মুহূর্তে, ইনজুরি সময়ে (৯১ মিনিট) পেল্লের দুর্দান্ত ভলিতে। ফুটবল ঐতিহ্যে ইংল্যান্ড ও আইসল্যান্ডের ফারকা আকাশ-পাতাল। ইংল্যান্ডকে বলা হয় ফুটবলের জন্মদাতা। আর আইসল্যান্ড ইউরোপীয় ফুটবলে অনেক পিছিয়ে থাকা এক দেশ। বিশ্বকাপে কখনও খেলার সৌভাগ্য হয়নি। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও এবারই প্রথম খেলার সুযোগ পেয়েছে তারা। দলটিতে পেশাদার ফুটবলারের সংখ্যা হবে ১০০ জনের মতো। অথচ সেই আইসল্যান্ডই ইউরোর ইতিহাসে অন্যতম অঘটনের জন্ম দিয়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে। ফ্রান্সের নিসের এ্যালিয়াঞ্জ রিভিয়েরায় খেলার শুরুতেই চমক। চতুর্থ মিনিটে বক্সের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে ঢুকে পড়া রহিম স্টার্লিংকে ফেলে দেন আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক হান্নেস হালডোর্সোন। সঙ্গে সঙ্গে রেফারির পেনাল্টির বাঁশি। অধিনায়ক ওয়েন রুনির লক্ষ্যভেদ স্বপ্নের সূচনা এনে দেয় ইংল্যান্ডকে। কিন্তু এগিয়ে থাকার আনন্দ বেশিক্ষণ উপভোগ করতে পারেনি ইংলিশরা। দুই মিনিট পরই রাগনার সিগুর্ডসনের গোলে সমতায় ফেরে আইসল্যান্ড। শুধু সমতায় ফেরেনি, ১৮ মিনিটের সময় এগিয়েও যায় ছোট্ট দ্বীপদেশটি। বক্সের মধ্যে বল দেয়া-নেয়া করে ইংল্যান্ডকে বিভ্রান্ত করে দেয় আইসল্যান্ড। এক সময় বল পেয়ে যান কোলবেইন সিগথর্সন। এই স্ট্রাইকারের শটে গোলরক্ষক জো হার্ট কোন রকমে বলে হাত ছোঁয়ালেও গোল রুখতে পারেননি। পিছিয়ে পড়লেও সমতা ফেরানোর জন্য লম্বা সময় হাতে ছিল ইংল্যান্ডের। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আইসল্যান্ডের রক্ষণদুর্গ ভাঙতে পারেনি তারা। বরং বিরতির পর আইসল্যান্ড দুটো ভাল সুযোগ পায়। তবে জো হার্টের দৃঢ়তায় ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। তাতে অবশ্য কোনো ক্ষতি হয়নি আইসল্যান্ডের। স্মরণীয় জয়ে ইতিহাস গড়ে তারা এখন কোয়ার্টার ফাইনালে। ম্যাচ শেষে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক এ্যালান শিয়ারার রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন রয় হডসন ও তার শিষ্যদের। বিবিসির বিশ্লেষণী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এটাই আমার দেখা ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বাজে পারফর্মেন্স। চিন্তায়, লড়াইয়ে; সবদিক থেকেই হেরেছে তারা। ইংল্যান্ডের এই দলটা পুরোই ব্যর্থ। শুধু শিয়ারারই নন, ইংল্যান্ডের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন আরও অনেকে।
×