ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেনাকাটায় সর্বত্র ঈদের প্রস্তুতি

দিনের মতোই উজ্জ্বল রাত, ব্যস্ত শপিংমল থেকে ফুটপাথ

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৯ জুন ২০১৬

দিনের মতোই উজ্জ্বল রাত, ব্যস্ত শপিংমল থেকে ফুটপাথ

মোরসালিন মিজান ॥ বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণ। আজ এটা। কাল ওটা। লেগেই থাকে। বহুকাল ধরে চলা উৎসব অনুষ্ঠানের সংস্কৃতি এখনও অটুট। তবে ঈদের কথা একেবারেই আলাদা। বিপুল আনন্দের উপলক্ষ হয়ে আসে ঈদ। আর মাত্র ক’দিন পর সেই মহাযজ্ঞ। সারা দেশের মতো রাজধানী শহর ঢাকায়ও চলছে প্রস্তুতি। দিনে তো বটেই, রাতভর চলছে কেনাকাটা। সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে গম গম করছে মার্কেট-শপিংমল। হৈ হুল্লোড় হাসিরাশি আনন্দের পরিবেশ জানিয়ে দিচ্ছে- ঈদ আসন্ন! বড় উৎসব যেহেতু। অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রস্তুতি। আর ঈদ প্রস্তুতি মানে ঈদের কেনাকাটা। মোটামুটি প্রথম রমজান থেকেই পোশাকের বাজার প্রস্তুত হয়ে ছিল। দ্বিতীয় দিন থেকে মার্কেট-শপিংমল ঘুরে ঈদ কালেকশন সম্পর্কে ধারণা নেয়ার চেষ্টা করেন সৌখিন শহুরে মানুষ। যারা আগেভাগে গ্রামের বাড়ি যেতে চান তারা কেনাকাটাও সেরেছেন আগেভাগে। আত্মীয় পরিজনের জন্য পোশাক কিনে একটি অংশ ইতোমধ্যে গ্রামের বাড়ি ফিরে গেছেন। তার মানে এই নয় যে, শহরে লোক কিছু কমেছে। বরং ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, বাড়ছে ক্রেতার ভিড়। এখন সকাল হতে না হতেই মার্কেটের উদ্দেশ্যে ছুটছে সবাই। চলছে বিরতিহীন কোনাকাটা। শহর ঢাকার বেশকিছু শপিংমল ও ফুটপাথ ঘুরে এমন অসংখ্য দৃশ্য দেখা গেছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টায় বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের কাছাকাছি পৌঁছতেই দেখা গেল, সব গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কেন? জানতে চাইলে দয়িত্বে থাকা গার্ড জানান, আরও আধা ঘণ্টা আগে শপিংমলের কারপার্কিং এলাকার পুরোটা ভর্তি হয়ে গেছে। কোন জায়গা খালি নেই। মার্কেটের অনেক প্রবেশপথ। প্রবেশ পথেও লম্বা লাইন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়। চলন্ত সিঁড়িতেও পিঁপড়ের মতো উঠেছে মানুষ। দোকানের ভেতরে গায়ে গা লাগা অবস্থা। ইনফিনিটি, ইয়োলো, ফ্রিল্যান্ড, দর্জিবাড়ি ইত্যাদি ব্র্যান্ডের শোরুমে জায়গা অপেক্ষাকৃত বেশি। পোশাক দেখার কিছুটা সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বাকিগুলোতে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। পাঞ্জাবির জন্য বিখ্যাত ‘লুবনান’র একটি ছোট্ট শোরুম। এখানে ঢুকতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। সবুজ নামের এক তরুণ ঢোকার কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটা পাঞ্জাবি নিয়ে নিয়ে বের হলেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, এক ঘণ্টা আগে একটি পাঞ্জাবি দেখে গিয়েছিলাম। এখন এসে দেখি বিক্রি হয়ে গেছে। তাই দ্বিতীয় পছন্দটি আর হাতছাড়া করতে চাইনি। বসুন্ধরা থেকে বের হয়ে আসার সময় বিস্তৃত সিঁড়ি। এখানেও মানুষ গুনে শেষ করা যায় না। দিনের মতো রাতেও চলছে কেনাকাটা। রাতে নয় শুধু, গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকছে মার্কেট। তবে রাতের কোন আবহ চোখে পরে না। প্রতিটি মার্কেট ও শপিংমলে বাড়তি আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর ধানম-ির রাপা প্লাজায় গিয়ে দেখা যায়, বাইরের অংশটি চমৎকার সাজানো। আলো ঝলমল ভবনের ভেতরে বিদেশী পোশাকের জমজমাট কেনাকাটা। দাম অনেক বেশি। তাতে কী? কেউ থেমে নেই। চলছে কেনাকাটা। একেবারে উপরের দুটি ফ্লোরে দেশী কারু ও হস্তশিল্প সামগ্রী। দাম অপেক্ষাকৃত কম। এখানে সাধারণ ও সৌখিন ক্রেতার ভিড়। শপিং শেষ করে পরিবারের তিন সদস্যসহ নিচে নামছিলেন আদাবরের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, কেনাকাটা শেষ হয়েছে বলা যাবে না। ছেলের পোশাক কেনা হয়েছে। এখন মেয়ের জন্য কিনতে হবে। সোবহানবাগের একটি দোকানে যাব এখন। ঈদের আমেজটা বিশেষভাবে টের পাওয়া যায় বেইলী রোডে। সরু রাস্তার দুই ধারে মার্কেট। প্রতিটি ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এই আলো রাতে গোটা এলাকাটি আলোকিত করে রাখে। গত কয়েকদিন বেইলী রোডে গিয়ে দেখা যায়, শোরুমগুলোতে গিজ গিজ করছে মানুষ। রাস্তায় গাড়ি আর গাড়ি। যানজট এত যে, অনেকেই গাড়ি ছেড়ে হেঁটে ছুটছেন। কেউ আসছেন। কেউ শপিং করে চলে যাচ্ছেন। এই আসা-যাওয়া শতভাগ উৎসবমুখর। বাচ্চাদের পোশাকের জন্য প্রসিদ্ধ ‘মাদারস কেয়ার’ থেকে একটি শিশুকে নতুন জামা গায়ে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল। তার আনন্দ আর ধরে না। মাকেও সে আনন্দ যেন ছুঁয়ে দিয়েছে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ড্রেসটি ওকে পরিয়েছিলাম কেমন লাগে তা দেখার জন্য। কিন্তু মেয়ে আমার এত খুশি হয়ে গেল যে, আর খুলতে দিল না! শহরের অলিগলি, ফুটপাথেও চলছে ঈদের কেনাকাটা। ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজ সংলগ্ন ফুটপাথে অনেক অস্থায়ী দোকান। হকাররা তাদের নিজস্ব ভঙ্গিতেই হাঁকডাক দিচ্ছেনÑ বাইচ্যা লন, দেইখ্যা লন...। ফুটপাথে পোশাকের দাম একটু কম। এর পরও চলছে দামাদামী। এক ক্রেতা তো দামদর করতে করতে ক্লান্ত হয়ে কাপড় ছুড়ে ফেলে দিলেন। বললেন, না দিলে নাই। ক্রেতা যেখানে শেষ করলেন সেখান থেকেই শুরু করলেন বিক্রেতা। এক পর্যায়ে ঠিকই বনিবনা হলো। হ্যাঁ, গোটা শহরেই এমন নানা দৃশ্য এখন দেখা যাচ্ছে। হাসিরাশি আনন্দের সঙ্গে চলছে কেনাকাটা। দিনে যেমন রাতেও। এখন দিনের মতোই আলোকোজ্জ্বল রাত।
×