ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রুশ জঙ্গী বিমান ভূপাতিতের ঘটনায় পুতিনকে চিঠি এরদোগানের

তুরস্কের দুঃখ প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৯ জুন ২০১৬

তুরস্কের দুঃখ প্রকাশ

তুর্কি-সিরীয় সীমান্তে রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করার ঘটনায় সোমবার দুঃখ প্রকাশ করার মাধ্যমে তুরস্ক কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি একই দিন ইসরাইলের সঙ্গে সমঝোতা করার ঘোষণাও দেয় তুরস্ক। তবে তুরস্কের এই দুঃখ প্রকাশকে বিলম্বিত ও অপর্যাপ্ত বলে মন্তব্য করেছে মস্কো। রুশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান কোন্সটেনটিন কোসাচেভ একথা বলেছেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসির। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের কাছে সোমবার পাঠানো এক চিঠিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান গত বছরের নবেম্বরের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে রুশ প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিন একথা জানিয়েছে। বার্তায় রাশিয়ার ভূপাতিত হওয়া বিমানের নিহত পাইলটের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন এরদোগান। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, যা ঘটেছে, তার জন্য এরদোগান গভীরভাবে অনুতপ্ত। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চান। এরদোগানের চিঠিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া তুরস্কের একটি বন্ধুরাষ্ট্র, একই সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারও। তাই মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না আঙ্কারা। পাশাপাশি তুরস্ক আরও ঘোষণা দিয়েছে, রুশ পাইলটকে গুলি করে হত্যাকারী তুর্কি নাগরিক আলপার্সলান সেলিকেরও বিচার করা হবে। রাশিয়া সেলিকের বিচার দাবি করেছিল। কোসাচেভ বলেন, স্বাভাবিক যুক্তি মেনে চললে ঘটনার পরপরই এ ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। সবক্ষেত্রে তুর্কি পররাষ্ট্র নীতি ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য এরদোগানকে দায়ী করেন তিনি। কোসাচেভ বলেন, এ অবস্থায় তুরস্ক কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ছোট একটা বিজয় দেখতে চায় আর রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাটাই হয়তো সে বিজয় হতে পারে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইলে দুঃখ প্রকাশ করে একটি চিঠি দেয়ার চেয়েও আরও অনেক বেশি কিছু তুরস্ককে করতে হবে। গত বছরের নবেম্বরে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে রাশিয়ার একটি সামরিক বিমান ভূপাতিত করে তুরস্ক। এতে বিমানের এক পাইলট নিহত হন। ঘটনার পর তুরস্ক দাবি করে, রুশ বিমানটি তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল। বিমানটিকে বারবার সতর্কও করা হয়েছিল। আঙ্কারার দাবি নাকচ করে রাশিয়া বলে, তাদের বিমান তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি এবং বিমানটি কোন সতর্ক সঙ্কেতও পায়নি। বিমান ভূপাতিত করার জেরে মস্কো ও আঙ্কারার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। তুরস্কের ওপর খাদ্য রফতানির ওপর অবরোধ আরোপ ও তুর্কিদের ভিসা ফ্রি ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে বেশ কিছু পাল্টা পদক্ষেপ নেয় রাশিয়া। তখন পুতিন বলেছিলেন, বিমান ভূপাতিত করার জন্য তুরস্ককে ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা না চাইলে অবরোধ প্রত্যাহার করা হবে না। এর জবাবে এরদোগান জানিয়ে দেন, তুরস্ক ক্ষমা চাইবে না। এদিকে এরদোগান কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তার ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী অবস্থান, আন্তর্জাতিক শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে ইউরোপের সঙ্গে লড়াকু অবস্থান এবং সিরিয়া বিষয়ে ব্যর্থ কৌশলসহ নতুন পেশী প্রদর্শনী পররাষ্ট্র নীতির কারণে। তুরস্কের সোমবারের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিকে এই বিচ্ছিন্নতা মেরামতের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আসলি আয়দিনতাসবাস বলেছেন, তুরস্ক গত কয়েক বছর ধরেই একঘরে হওয়া ব্যাপকভাবে অনুভব করছে। ‘প্রতিবেশীর সঙ্গে কোন সমস্যা নয়’ এমন নীতি থেকে সরে এসে দেশটির এখন সব প্রতিবেশীর সঙ্গেই সমস্যা রয়েছে। তুরস্ক এখন ইতিহাসের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে এবং দেশটির শুধু কাতার ও সৌদি আরবের সঙ্গেই সম্পর্ক রয়েছে। এরদোগানের অধীনে তুরস্ক অতীতের নীতি থেকে সরে এসে তার মুসলিম প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। তবে এটা স্পষ্ট নয় যে, তুরস্ক এখন কেন রাশিয়ার সঙ্গে পুনর্মিলন চাইছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এরদোগান বিদেশে তার হৃত ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে চান।
×