ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রফতানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা, কারণ সেই ‘ব্রেক্সিট’

প্রকাশিত: ২০:২৫, ২৮ জুন ২০১৬

রফতানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা, কারণ সেই ‘ব্রেক্সিট’

অনলাইন ডেস্ক ॥ সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ থেকে বেঙ্গালুরুর ইলেকট্রনিক সিটি— কফি-ব্রেকের আড্ডায় বার বার ফিরে আসছে শব্দটা। ‘ব্রেক্সিট’। সোমবার সকাল থেকেই ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম পড়তে শুরু করেছে। দুশ্চিন্তা বেড়েছে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলোর ক্যাম্পাসে। শুধু তথ্যপ্রযুক্তি নয়, পোশাক থেকে চা, গয়না থেকে চামড়া— সব ক্ষেত্রেই এখন একটি প্রশ্ন। তা হল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার জেরে এ দেশের অর্থনীতিতে কতখানি ধাক্কা লাগবে? এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বা অন্য সংস্থাগুলো সেই ধাক্কা সামলাতে পারবে কি না? নাকি ব্রেক্সিট-এর ধাক্কায় শুরু হবে ছাঁটাই, বন্ধ হবে বেতন-বৃদ্ধি? তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলোর কর্মীদের এই চিন্তা অমূলক নয়। কারণ, প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলারের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের ৩০ শতাংশ আয়ই হয় ইউরোপের বাজার থেকে। ব্রিটেনে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা রফতানি করে ১৭ শতাংশ আয় হয়। এমনিতেই গত আট মাস ধরে রফতানি লাগাতার কমছে। রফতানি না বাড়লে যে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৮ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তা অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা খুব ভালই জানেন। তার পরে ব্রেক্সিট-এর ধাক্কায় ব্রিটেন এবং ইউরোপের বাকি দেশে রফতানি কমলে বিপদ। অরুণ জেটলি, রঘুরাম রাজনরা আশ্বাস দিয়েছেন, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুতই রয়েছে। কিন্তু মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণিয়নের মতে, রফতানিতে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা প্রবল। এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি না নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি কমিটি তৈরির কথা ভাবছেন। যে কমিটি ব্রেক্সিট-এর প্রভাব খতিয়ে দেখে তা মোকাবিলার পরিকল্পনা তৈরি করবে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, মূলত তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র নিয়েই দুশ্চিন্তা বেশি। তার সঙ্গে বস্ত্র-পোশাক শিল্পও রয়েছে। কেন এই দুশ্চিন্তা? তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলোর আশঙ্কা ছিল, ব্রিটেন ‘ব্রেক্সিট’-এর পক্ষেই রায় দিলে ডলারের তুলনায় ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম কমে যাবে। সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। শুক্রবারই পাউন্ডের দর এমন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল, যা গত তিন দশকে হয়নি। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সংগঠন ন্যাসকম সূত্রের বক্তব্য, পাউন্ডের দাম এ ভাবে কমে গেলে ব্রিটেনের অধিকাংশ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের বরাতই আর লাভজনক থাকবে না। নতুন করে দর কষাকষি করতে হবে। ব্রিটেনকে ‘গেটওয়ে’ হিসেবে কাজে লাগিয়ে বাকি ইউরোপেও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা রফতানি করে এ দেশের সংস্থাগুলো। ব্রিটেনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক কী হবে, তা নিয়ে এখন আলোচনা শুরু হবে। শেষ হতে দু’বছর লাগতে পারে। তত দিন নতুন বড় মাপের বরাত নিয়ে সিদ্ধান্ত পিছিয়ে যেতে পারে। সব থেকে বড় আশঙ্কা হল, ব্রিটেনের অর্থনীতি মন্দার কবলে চলে যেতে পারে। ন্যাসকম-এর প্রেসিডেন্ট আর চন্দ্রশেখর বলেন, ‘‘আমরা চাই, ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কী রকম দাঁড়াবে, সেই বিষয়টা খুব দ্রুত স্পষ্ট হোক।’’ কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, ব্রিটেনের সঙ্গে ইইউ-র বাণিজ্যিক সম্পর্কটা আগের মতো মসৃণ না হলে ভারতের পক্ষে ভাল। সে ক্ষেত্রে বাকি ইউরোপের তথ্যপ্রযুক্তি ও অন্য ক্ষেত্রের পেশাদারদের উপর ব্রিটেনে চাকরি করাতে বাধানিষেধ তৈরি হবে। তার ফলে ভারতের কর্মীদের সামনে নতুন সুযোগ তৈরি হবে। রফতানির ক্ষেত্রেও ব্রিটেন ভারতকে বিশেষ সুবিধা দিতে চাইবে। ব্রিটেনে ভারতের রফতানি বাড়বে। কিন্তু ব্রিটেনের অর্থনীতিই মন্দার মুখে পড়লে চা, পোশাক, চামড়া, গয়নার রফতানি ধাক্কা খেতে পারে। দুই দেশেরই মুদ্রার দর যে ভাবে ওঠানামা করছে, তাতে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, তা নিয়ে কেউই নিশ্চিত হতে পারছে না। টাকার দর পড়তে শুরু করায় রফতানিকারীরা ভাবছিলেন, রফতানিতে সুবিধা হবে। ভারতের পণ্য বিদেশের বাজারে সস্তা হবে। কিন্তু পাউন্ডও যে ভাবে তলানিতে পৌঁছতে শুরু করেছে, তাতে চিন্তা বেড়েছে। কারণ পাউন্ডের দাম কমলে ব্রিটেনের আমদানির খরচ বাড়বে। তুলনামূলক ভাবে ব্রিটেনের দেশীয় পণ্য সস্তা হবে। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন-এর সভাপতি এস সি রলহনের মতে, সে ক্ষেত্রে ভারতের রফতানি ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×