ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাইবান্ধায় স্রোতের তোড়ে সøুইসগেট বিধ্বস্ত, ২০ গ্রাম প্লাবিত

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৮ জুন ২০১৬

গাইবান্ধায় স্রোতের তোড়ে সøুইসগেট বিধ্বস্ত, ২০ গ্রাম প্লাবিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২৭ জুন ॥ উজানের ঢলে যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে স্রোতের তোড়ে সাঘাটার হলদিয়া ইউনিয়নে সøুইসগেট বিধ্বস্ত হয়েছে। ফলে পার্শ্ববর্তী তিন ইউনিয়নের ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পাটক্ষেত, সদ্য রোপণকৃত বীজতলা, খাদ্যশস্যসহ প্রায় ৬শ’ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় এক হাজার পরিবার। ২০০০ সালে এলজিইডি ২ ভেন্টের এ সøুইসগেটটি নির্মাণ করে জুমারবাড়ি, হলদিয়া ও সাঘাটা ইউনিয়নকে বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে গত সপ্তাহে এটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে দেবে যায়। চলতি সপ্তাহে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি প্রবেশ করে সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, ঘুড়িদহ, জুমারবাড়ি ইউনিয়নের মদনেরপাড়া, আমদিরপাড়া, কঠুয়া, গোবিন্দপুর, জটিরপাড়া, থৈকরেরপাড়া, জুমারবাড়ি, চিনিরপটল, পালপাড়া, চকপাড়া, পবনতাইর, কু-ুপাড়া, চানপাড়া, মিয়াপাড়াসহ প্রায় ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জুমারবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল হাই জানান, সøুইসগেট দেবে যাওয়ার ফলে তীব্র বেগে পানি প্রবেশ করায় তার প্রায় ১৫ বিঘা জমির জন্য লাগানো বীজতলা ডুবে গেছে। ফলে এবার তার আমন ধান চাষ করা হবে না। ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল গ্রামের কৃষক আঃ গফুর জনান, হঠাৎ বন্যার পানি এসে তার সাত বিঘা জমিতে পাটের আবাদ তলিয়ে গেছে। হলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার কৃষক। তীব্র ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে হলদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ত্রিতলা কানাইপাড়া দাখিল মাদ্রাসা। সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাফিউজ্জামান ভূঁইয়া জানান, হলদিয়া ইউনিয়নের কানাইপাড়া সøুইসগেট ধসে যাওয়ার ফলে যে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পুনর্বাসনের জন্য সরকারীভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। হলদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ত্রিতলা কানাইপাড়া দাখিল মাদ্রাসা ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কুড়িগ্রাম ॥ স্টাফ রপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, উজানের ঢল আর ভারি বৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামের ১৬ নদ-নদীর পানি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ফলে দেখা দিয়েছে বন্যা। সোমবার সকালে ধরলা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপদসীমার সমান্তরালে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে ৬ সেন্টিমিটর। তবে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৬ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার কমেছে। পানিবৃদ্ধির কারণে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় প্রায় দেড় শতাধিক চর নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে অন্তত ১২ হাজার পরিবারের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। বন্যায় পাট, সবজি, কলা ও আমন বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে ভেসে গেছে বেশকিছু পুকুর ও জলাশয়ের মাছ। কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর, ঘোগাদহ, উলিপুরের সাহেবের আলগা, হাতিয়া, চিলমারীর রানীগঞ্জ, অষ্টমীরচর, নয়ারহাটসহ কয়েকটি ইউনিয়নের চর-গ্রামগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত পরিবারের মাঝে ৮ হাজার ৪শ’ ৪৯ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা ঈদের আগে বিতরণ করা হবে। বন্যাকবলিত এলাকায় শুকনা খাবারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। স্টাফ রির্পোটার, নীলফামারী থেকে জানান, বানের পানি কমলেও ভাঙ্গন থামছে না। তিস্তার ভাঙ্গনে সোমবার বিকেল পর্যন্ত নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়িসহ ৬ গ্রামের আরও শতাধিক বাড়ির ভিটা বিলীন হয়েছে। এর আগে সহায়-সম্বল হারিয়েছে ৬১০টি পরিবার। হুমকির মুখে পড়েছে চরখড়িবাড়ি বিজিবির বিওপি ক্যাম্পটি। বন্যায় চুলা ও টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ার কারণে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গবাদি পশু নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে গ্রামবাসী। ওই সব গ্রামে কোন রাস্তাঘাট বলতে কিছুই নেই। অনেকে বাধ্য হয়ে বাঁধের উপর ঘর নির্মাণ করেছে। রোজার মাসে বানের এই দুর্ভোগ এলাকাবাসীকে চরম হেনস্তা করে দিয়েছে। সোমবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও নদীর গতিপথ পরিবর্তনে তিস্তা ব্যারাজের উজানে তিস্তার নতুন পথ চরখড়িবাড়িসহ ৬টি গ্রাম মধ্য চরখড়িবাড়ি পূর্বখড়িবাড়ি, টাপুরচর, ঝিঞ্জিরপাড়া ও মেহেরটারী পুরাতন টাপুরচরে ওপর দিয়ে এখনও প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে বালির বাঁধ বিধ্বস্ত্য হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃস্টি হয়েছে। ওই এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। তারা ঠাঁই নিয়েছে বিভিন্ন উঁচু স্থানে।
×