ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষায় পাশ করেও প্রতিবন্ধী বলে কপালে জুটছেনা চাকুরী

প্রকাশিত: ০১:৩৩, ২৭ জুন ২০১৬

পরীক্ষায় পাশ করেও প্রতিবন্ধী বলে কপালে জুটছেনা চাকুরী

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ শারীরিক প্রতিবন্ধীতা কোন প্রতিবন্ধকতা নয় কাউচার বেগমের। দারিদ্রতাও প্রধান কোন সমস্যা নয়। প্রয়োজন শুধুই ইচ্ছে শক্তি। ইচ্ছা থাকলে সবই করা সম্ভব। তাইতো শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হয়েও ইচ্ছে শক্তির কারণে তিনি ঠিকই শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছেন। প্রতিবন্ধীতা ও দারিদ্রতা দুই-ই জয় করে এনেছেন। কাউচার জানেন, একতো দরিদ্র পরিবার, তারপর তিনিই বড় মেয়ে। পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ব একটু বেশীও বটে। তিনি সেই দায়িত্ব বুঝতে পারলেও পালন করতে পারছেন না। অভাবের সংসারে একটু স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে হবে- এটিই তার প্রতিনিয়ত ভাবনা। চাকুরীর জন্য কয়েকবার পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ছিলেন কাউচার বেগম। লিখিত পরীক্ষায় পাশও করেছিলেন। প্রতিবারই শারীরিক প্রতিবন্ধীতাই তার চাকুরীতে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার পরও প্রতিবন্ধীতার কারণে চাকুরী তার কপালে জুটেনি আজও। এখনও বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা দিয়ে চলছেন। একটি চাকুরী করবেন, বাবার অভাবী সংসারের হাল ধরবেন, এই স্বপ্ন নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে কক্সবাজারের চকরিয়ার ঢেমুশিয়া খাঁস পাড়ার নুরুল ইসলামের শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষিত মেয়ে কাউচার বেগম। কাউচার বেগমের জন্ম ১৯৯১ সালের ১ জুলাই চকরিয়া ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের খাঁস পাড়া ৭নং ওয়ার্ডে। পিতা নুরুল ইসলাম একজন দরিদ্র কৃষক। বয়সের ভারে বর্তমানে কোন কাজ করতে পারেন না। মা মুর্শিদা বেগম একজন গৃহিনী। কাউচার বেগমরা দুই ভাই, ৫ বোন। কাউচার বেগম ভাই বোনদের মধ্যে দ্বিতীয়। কাউচার সাফল্যের সঙ্গে এইচএসসি পাশ করে বর্তমানে চকরিয়া বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজ থেকে ডিগ্রী পরীক্ষা দিয়েছে। তিনি জানান, রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েও তার চাকুরী হয়নি। আবার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সরকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি হয়নি। মা মুরশিদা বেগম জানান. কাউচার বেগমের বয়স যখন সাত বছর তখন হঠাৎ মাটিতে পড়ে ডান পায়ে আঘাত পায়। চকরিয়া মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রীস্টান হাসপাতাল ও চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পরও সম্পূর্ণ ভাল হয়নি। তার মা মুর্শিদা বেগম আরও জানান, যা সম্বল ছিল, সব কিছু দিয়ে চেষ্ঠা করেছি মেয়েকে ভাল করতে। এখন আমার মেয়ের পায়ে ব্যাথা ও পা ছোট হয়ে গেছে। তাই তার হাটতে সমস্যা হয়। ডা: বলেছেন ক্রাচ নিয়ে হাটতে হবে সারাজীবন। তিনি আরও জানান আমার মেয়ে লেখাপড়ায় ভাল, কিন্তু টাকা পয়সার অভাবে লেখাপড়া যাতে বন্ধ না হয়- তার জন্য একটি চাকুরি পেলে লেখাপড়া ও পরিবারে সহযোগিতা করতে পারতো। কাউচার জানান. বড় ভাই সিএনজি চালিয়ে এতো বড় পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই কাইচার পরিবারে বড়, সেই দায়িত্ববোধ থেকে একটি চাকুরীর খুবই প্রয়োজন। অন্য এক ভাই ও এক বোন লেখাপড়া করে। পরিবারে সহযোগিতার জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি চাকুরীর জন্য সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে লিখিত পরীক্ষায় টিকেও শেষে চাকুরী চাকুরী হয়না। কারণ শুধু আমার শারীরিক প্রতিবন্ধীতাই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। কাউচার বেগম আরও জানায়, এসএআরপিভি প্রকল্প কর্মকর্তা রাজেশ খান্না শর্মার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর পিআরডিপিডি প্রকল্পের কার্যক্রম জানতে পারেন এবং এসএআরপিভি’র এফএফ ইয়াছমিন সুলতানা বিনা বেতনে ৬ মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষনে ভর্তি করিয়ে দেন। ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন ও পরবর্তী বিধি মালা পাশ হওয়ায় আশার আলো দেখছেন তিনি। কয়েকটি পরীক্ষায় পাশ হওয়ার পর চাকুরী হয়নি তাতে কী, কাউচার বেগম একবারে হাল ছাড়ে নি।
×