ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে সন্তানদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা

প্রকাশিত: ২২:২৫, ২৭ জুন ২০১৬

বরিশালে সন্তানদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধে নয় মাসের সশস্ত্র সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাক হানাদারদের কবল থেকে দেশকে রক্ষার মুক্তির সংগ্রামে জয়ী হলেও জীবন যুদ্ধে আজ পরাজিত সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার হাওলাদার। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়াদিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য পদ ছেড়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেদিনের যুদ্ধে শত্র“দের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারলেও সম্পত্তির লোভে আজ নিজ ঘরে সৃষ্টি হওয়া শত্র“ সন্তানদের হাত থেকে বাঁচার জন্য গত দু’মাস থেকে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ঘটনাটি জেলার বানারীপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের নরেরকাঠি গ্রামের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট অতিশপর বৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা জব্বার হাওলাদার অভিযোগ করেন, সম্পত্তির লোভে তার দুই পুত্র ও এক কন্যা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাড়িয়ে ফিরছে। ফলে জীবন বাঁচাতে তিনি গত দু’মাস ধরে বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি আরও জানান, তার বড় পুত্র সাইফুল ইসলামকে মুক্তিযোদ্ধার কোঠায় পুলিশে কনষ্টবল পদে তিনি চাকুরী পাইয়ে দিয়েছেন। পরে তিনি চেষ্টা তদবির করে ছেলেকে ঢাকা র‌্যাব-১ এ পোষ্টিং করিয়েছেন। অপর পুত্র শফিকুল ইসলাম একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত। দুই কন্যাকে লেখাপড়া করিয়ে পাত্রস্থ করেছেন। ২০১০ সালে তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। বৃদ্ধ বয়সে ছেলে-মেয়েরাই বিউটি বেগম নামের বন্ধা হতদরিদ্র এক স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন। সম্প্রতি সময়ে ছেলে-মেয়েরা তার (জব্বার) বিশাল সহয় সম্পত্তি তাদের সৎ মা লিখে নিয়ে যেতে পারেন এ আশংকায় তাদের নামে সব সম্পত্তি লিখে দেয়ার জন্য চাঁপ প্রয়োগ করে। এতে সে রাজি না হওয়ায় ছেলে-মেয়েরা একত্রিত হয়ে তাকে মানসিক ও শারিরীকভাবে নির্যাতন শুরু করে। গত ১২ মে তিনি (জব্বার হাওলাদার) জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ও মানসিক এবং শারিরীক নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য ছেলে সাইফুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও মেয়ে বেবী বেগমের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা ১৩ মে গভীর রাতে তাকে বেদম মারধর করে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র গলায় ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিউটি বেগমকে তালাক দিতে বাধ্য করে। ওই রাতেই জব্বার হাওলাদারকে তার ছেলেরা বালিশ চাঁপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। এসময় পরের দিন সব সম্পত্তি লিখে দেয়ার অঙ্গীকার করে প্রাণ বাঁচান তিনি। সেদিন ভোর রাতে স্ত্রী বিউটিকে নিয়ে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। অভিযোগে আরও জানা গেছে, গত ১৫ মে তিনি (জব্বার) বানারীপাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীর জমানো ৫২ হাজার টাকা তুলে ফেরার সময় ছেলেদের ভাড়া করা নরেরকাঠী এলাকার জনৈক আলমের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাদেরকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেয়। উপায়অন্তুর না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা জব্বার তার স্ত্রীকে নিয়ে বরিশাল নগরীর এক নিকট আত্মীয়র কাছে আশ্রয় নেয়। সেখানেও পুলিশ ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী পাঠিয়ে তাদেরকে অপহরনের চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে তালাকপ্রাপ্ত বিউটিকে নিয়ে অবৈধভাবে ঘর সংসার করার কুৎসা রটিয়ে জব্বার হাওলাদারকে নাজেহাল করা হলে অপবাদ থেকে বাঁচতে তিনি আবারও বিউটি বেগমকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধা জব্বার হাওলাদার জীবনের বাকিটা সময় নিজ বাড়িতে বসবাসসহ ছেলে-মেয়েদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেছেন।
×