ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নীলফামারীতে বাঁধ বিলীন, ৬ গ্রাম তছনছ

‘আমরা রিলিফ চাই না নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা চাই’

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৭ জুন ২০১৬

‘আমরা রিলিফ চাই না নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা চাই’

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ‘দুই দিন আগত (আগে) এইখানে সোনার সংসার আছিল মোর (আমার)। তিল তিল করে তৈয়ার করছিলাম ভিটে-মাটি, গাছপালা। মাঠে আছিল ফসলের দুই বিঘা চাষের জমিন। সর্বনাশা রাক্ষুসী তিস্তা নদী মোর (আমার) সাজানো বাড়িঘর ফসলি জমি গিল্লা খাইল। এহন পরিবার পরিজন নিয়া মাথাগোঁজার ঠাঁই লইছি খোলা আকাশত। এ্যালা কূলকিনারা খুঁজি পাওনা বাহে।’ কথাগুলো বলছিলেন তিস্তার ভাঙ্গনের শিকার নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি গ্রামের মোতালেব হোসেন (৫৫)। তার মতো শত শত পরিবার নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে আজ দিশেহারা। ইতোমধ্যে এ ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে সহায়-সম্বল হারিয়েছে ৬১০ পরিবার। রবিবার একই এলাকার আরাজুল ইসলাম (৫০) জানান, প্রতি বছরই নদী ভাঙ্গছে। কিন্তু স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমরা রিলিফ চাই না, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা চাই।’ ডিমলার তিস্তা অববাহিকার বন্যা ও নদী ভাঙ্গনকবলিত মানুষ অভিযোগ করে জানান, এলাকার সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার আমাদের একটিবারের জন্যও খোঁজখবর নেননি। বন্যার সময় এমপি সাহেব ডিমলার বাসভবনে ছিলেন। আমাদের বানভাসীদের খবর না নিয়ে তিনি ঢাকায় চলে যান। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জানান, গত দুই দফায় ২৩ ও ২৫ জুন তিস্তার উজানের ঢলের তা-বে তিনটি ওয়ার্ডের ৬ গ্রামÑ চরখড়িবাড়ি, মধ্য চড়খড়িবাড়ি, পূর্বখড়িবাড়ি, টাপুরচর, ঝিঞ্জিরপাড়া ও মেহেরটারী পুরাতন টাপুরচর তছনছ হয়ে গেছে। গৃহহীন হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। কর্মহীন, গৃহহীন এ সকল পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। তিস্তা নদী হঠাৎ গতিপথ পরিবর্তন করে চরখড়িবাড়ি দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত এক হাজার মিটার বালির বাঁধটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধটি বিলীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৬টি গ্রাম তছনছ করে দিয়েছে তিস্তা। বিলীন হয়েছে মধ্য চরখড়িবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন পাকা ভবন। এখন স্কুলের নতুন ভবনটিও নদীতে বিলীন হতে শুরু করেছে। এদিকে চরখড়িবাড়ি সীমান্তে রয়েছে বিজিবির ক্যাম্প। এ ক্যাম্পটিও তিস্তার ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পড়েছে। ৭ বিজিবির পক্ষে ওই বিওপি ক্যাম্প থেকে মূল্যবান সম্পদ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সূত্র বলছে, নদী এখন চরখড়িবাড়ি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের ঢলে আমনের বীজতলা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গেছে। অপরদিকে তিস্তার বন্যা ও ভাঙ্গনের শিকার হাজার হাজার পরিবার এখন ঘরবাড়ি ভেঙ্গে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। রবিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০ মিটার) ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙ্গন ॥ স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে কুড়িগ্রামে প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমারে। ফলে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার দেড় শতাধিক চর নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী রয়েছে অন্তত ৭০ হাজার মানুষ। এসব চরের উঁচু ভিটা ছাড়া সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ধরলা নদীর প্রবল স্রোতের কারণে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বাংটুরঘাট এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। শনিবার এ বাঁধের ৩০ মিটার অংশ আকস্মিকভাবে ধসে যায়। আতঙ্কগ্রস্ত এলাকাবাসী দোকানপাট দ্রুত সরিয়ে নেয়। স্থানীয়রা জানান, এই বাঁধ ভেঙ্গে গেলে সংলগ্ন ১০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়বে কুড়িগ্রাম-রংপুর সড়ক। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জরুরীভিত্তিতে গাছপালা ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সদর উপজেলার যাত্রাপুর, নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া, নারায়ণপুর, উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ, চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট, রাণীগঞ্জসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
×