ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেক্সিটে ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক খাতকে সহায়তা দিতে হবে ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৭ জুন ২০১৬

ব্রেক্সিটে ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক খাতকে সহায়তা দিতে হবে ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা করতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যে সুবিধা বর্তমানে পাওয়া যায়, তা যুক্তরাজ্যেও অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের করণীয় নির্ধারণে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে শীঘ্রই একটি কমিটি গঠন করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত সাতটি সংস্থার সঙ্গে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের কর্মপরিকল্পনা চুক্তি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ইইউ থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাওয়ার কারণে নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের অনেক করণীয় আছে। বাংলাদেশ যে পরিমাণ তৈরি পোশাক রফতানি করে, তার মধ্যে ৫৪ শতাংশ ইইউতে যায়। যুক্তরাজ্য একক রফতানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশী পণ্যের তৃতীয় গন্তব্যস্থল। ইতোমধ্যে ইউরো ও পাউন্ডের দরপতন হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ ডলারের ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। শুধু তাই নয়, পাউন্ডের দর ১১৮ থেকে ১০৩-এ নেমে গেছে। এ অবস্থায় তৈরি পোশাক খাতকে সহায়তা করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই খাতকে সহায়তা করতে হবে, যাতে এটি থমকে না দাঁড়ায়। তোফায়েল আহমেদ বলেন, সম্প্রতি ভারত তাদের তৈরি পোশাক খাতকে সহায়তা দিতে ছয় হাজার কোটি টাকা নগদ সহায়তা দেয়ার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর প্রভাবও দেশে পড়তে পারে। আর সে কারণে বিদেশে তৈরি পোশাক খাতকে সহায়তা করার পক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, ইইউ থেকে বেক্সিট অর্থাৎ যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যে গণরায় হয়েছে তাতে আমাদের সামনে নতুন পরিস্থতির সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় সবকিছু করা হবে। প্রসঙ্গত, গণভোটের রায়ে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাচ্ছে। এই খবর বিশ্ব মিডিয়ায় আসার পর থেকেই উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। বিশেষ করে পোশাক রফতানি খাতের উদ্যোক্তারা শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রফতানি বাজার। সেখানে যে অবস্থা শুরু হয়েছে, তাতে আমরা বড়সড় একটা ধাক্কা খাব। ইতোমধ্যে পাউন্ডের দাম কমে গেছে। কমে গেছে ইউরো ও ডলারের দামও। ফলে যুক্তরাজ্য ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য ২৭টি দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে আগের দামে পোশাক বা অন্য পণ্য রফতানি করলে বাংলাদেশের রফতানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আশা করছি, যুক্তরাজ্য খুব দ্রুত তাদের অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে উঠবে। না হলে সার্বিকভাবে ব্রিটেনসহ সমগ্র ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশের রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, এ সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ পোশাক রফতানি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে। রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জনকণ্ঠকে বলেন, ব্রিটেন আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে দেশের তৈরি পোশাক খাত তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে যাবে। যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে আলাদা হওয়ার খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ডলারের বিপরীতে পাউন্ড এবং ডলারের বিপরীতে ইউরোর দরপতন ঘটেছে। গত ৩০ বছরে এ ধরনের দরপতন হয়নি। ফলে ব্রিটেনে ইইউর বিনিয়োগ কমে যাবে। যার প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানে। এতে ব্রিটেনের জনগণের ক্রয়ক্ষমতাও কমে যাবে। যার প্রভাব পড়বে দেশটির পোশাক আমদানিতে।
×