ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ- এখন টক অব দ্য কান্ট্রি

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৭ জুন ২০১৬

বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ- এখন টক অব দ্য কান্ট্রি

শংকর কুমার দে ॥ রহস্যে ঘেরা স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের বিষয়ে স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে গভীররাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। মধ্যরাতের এই নাটটের কারণে গল্প, গুজব-গুঞ্জনের ডাল-পালা মেলে অনেক প্রশ্নের উদয় হয়েছে। সকল প্রশ্নের মধ্যমণি হয়ে সামনে ওঠে এসেছে, মাহমুদা খানম মিতু খুনের উদ্দেশ্য (মোটিভ) কি? যারা খুন করেছে বলে ধরা পড়েছে এবং স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে তারা পেশাদার খুনী। পেশাদার খুনীরা মিতুকে খুন করবে কেন? তাহলে খুন করিয়েছে কারা? এই খুনে লাভবান কে? পুলিশ সুপারের পদমর্যাদার মতো এত উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে মধ্যরাতে যেই প্রক্রিয়ায় ডেকে নেয়া হয়েছে তাতেই অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। তাকে ডেকে নেয়ার সময়ে সেই শ্বশুরবাড়িতে শ্বশুর, বাবা, আত্মীয়স্বজন, সন্তানরা অসহায় চোখে অনেক কথাই বলেছেন, যা সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হয়েছে। বিশেষ করে তাকে ডেকে নেয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগের মোবাইল ফোনে সংযোগ না পাওয়া এবং জিজ্ঞাসাবাদের নামে পনেরো ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনায় পরিবারটিতে দেখা দেয় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। এই পুলিশ কর্মকর্তাকে যখন বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তার গলায় জাপটে ধরে কাঁদতে থাকে তার সন্তান। ‘রাতেই যেতে হবে? সকালে গেলে হয় না’ জানতে চান তিনি। কিন্তু যারা তাকে নিতে এসেছেন তারা বলেছেন, ‘এখনই যেতে হবে, আইজি স্যার যেতে বলেছেন’। মধ্যরাতে এই ধরনের কথোপকথনে (ডায়ালগ) ঘটনাটিকে মিডনাইট ড্রামা ছাড়া আর কি বলা যায়! পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়ে ঢাকায় আসার পর পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় গত ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামে তার স্ত্রী মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে খুন করে দুর্বৃত্তরা। খুনের অভিযোগে ওয়াসিম, আনোয়ার, মুছা নামে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে রবিবার চট্টগ্রাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার। কিন্তু কেন তাকে হত্যা করা হলো? এই প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যায়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া রবিবার বলেছেন, স্ত্রীর খুনের ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে গভীর রাতে ডেকে নিয়ে দীর্ঘ সময় যেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তা তদন্তের ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ’। তিনি বলেছেন, এটা নিয়ে অপব্যাখ্যার কোন দরকার নেই। কোন সুযোগ নেই। বাদীকে তদন্তকারী জিজ্ঞাসা করবে, প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করবে... স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া এটা। রবিবার দুপুরে রাজধানীর ধোলাইপাড়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব বিষয়ে কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ডিএমপি কমিশনার বলেন, বাবুল আক্তারকে তারা টেলিফোন করে বলেছিলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন, তিনি যেতে পারবেন কি-না। জবাবে বাবুল বলেছিলেন, গাড়ি পাঠালেই তিনি যাবেন। আমরা গাড়ি পাঠাইছি, উনি এসছেন। আমাদের ডিবি অফিসে বসে সিএমপির তদন্তকারী দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এখানে ডিএমপির কোন বিষয় নয়। ডিএমপি কোন জিজ্ঞাসাবাদ করেনি, ডিএমপি কাছেই যায়নি। বাবুল আক্তারের সম্মতি নিয়ে, গাড়ি পাঠিয়ে তাকে নিয়ে আসার পর চট্টগ্রামের তদন্তকারী দলই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে জানিয়ে ঢাকার কমিশনার বলেন, ডিবি অফিস ব্যবহার করতে দেয়া ছাড়া আর কোন ভূমিকা তাদের ছিল না। এখন তারা সকাল বেলা কমফোর্টেবল, না বিকেলে কমফোর্টেবল, না রাতে কমফোর্টেবলÑ দ্যাটস এ্যানাদার থিং। সেটা উভয়পক্ষের সম্মতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সুতরাং এর ভিন্ন কোন ব্যাখ্যার সুযোগ এক্ষেত্রে নেই বলে মন্তব্য করেন আছাদুজ্জামান মিয়া। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানান, পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকার বনশ্রীতে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ডেকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় দীর্ঘ সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শনিবার বিকেলে তিনি বাসায় ফেরার আগ পর্যন্ত পরিবার তার কোন খবর না পাওয়ায় এবং পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের ফোন না ধরায় নানা প্রশ্নের উদয় হয়। বাবুল গ্রেফতার হয়েছেন বলেও একপর্যায়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যদিও পরে বাবুল নিজে টেলিফোনে তা অস্বীকার করেন। এমনকি মিতু হত্যার ঘটনায় পরকীয়া, দাম্পত্য কলহসহ নানা কারণের কথা উল্লেখ করে পুলিশ বাবুলকেও সন্দেহ করছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে কয়েকটি সংবাদপত্র, যদিও পরবর্তীতে তার কোন নির্ভরযোগ্য সমর্থন পাওয়া যায়নি। খুনের মোটিভ কী ॥ চট্টগ্রামে জঙ্গী দমন অভিযানের জন্য আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে সম্প্রতি এসপি করে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। তিনি ঢাকায় যোগ দেয়ার তিন দিনের মাথায় ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গিয়ে খুন হন তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। মোটরসাইকেলে করে আসা তিন হামলাকারী তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। খুনের ঘটনার পর চট্টগ্রামের পুলিশ বলে আসছিল, গত দুই বছরে চট্টগ্রামে জঙ্গী দমন অভিযানে বাবুলের ভূমিকার কারণে জঙ্গীদেরই সন্দেহের তালিকায় প্রথমে রেখেছেন তারা। আর সেভাবেই মিতু হত্যার তদন্ত করছেন তারা। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, মোহাম্মদ ওয়াসিম মোটরসাইকেলে করে হামলায় অংশ নেয় এবং মিতুকে ‘গুলি’ করে।
×