ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুই ফেবারিট ফ্রান্স ও জার্মানির দৃষ্টি শেষ আটে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৬ জুন ২০১৬

দুই ফেবারিট ফ্রান্স ও জার্মানির দৃষ্টি শেষ আটে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হারলেই বিদায়, দ্বিতীয় কোন সুযোগ নেই। গ্রুপ পর্বের গ-ি পেরিয়ে আসার পর এখন ইউরো ফুটবলের প্রি-কোয়ার্টার উত্তেজনা। স্বাগতিক হিসেবে ফেবারিট ফ্রান্স আজই আরেক ধাপ এগোনোর লক্ষ্যে মাঠে নামবে। গতবার ইউরো ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়া ফরাসীদের লক্ষ্য এবার শিরোপা জয়। আজ থেকেই অগ্নিপরীক্ষা শুরু হয়ে যাচ্ছে তাদের। রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে লিওতে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় আজ মুখোমুখি হচ্ছে তারা। আর ২০০৯ সালের নবেম্বরে ফরাসীদের কাছে হেরে বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার প্রতিশোধ চায় আইরিশরা। সেই ম্যাচে থিয়েরি অঁরি তার হাত ব্যবহার করেছিলেন গোলের জন্য এমন অভিযোগ আছে। তাই আইরিশ ফুটবল ভক্তরাও এ ম্যাচটি নিয়ে বেশ উত্তেজনায় আছে। রাত ১০টায় গত আসরের সেমিফাইনালিস্ট এবং ২০১৪ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন জার্মানি মুখোমুখি হবে নবাগত স্লোভাকিয়ার। গ্রুপ পর্বে নিজেদের নৈপুণ্যে সন্তুষ্ট না হতে পারা বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা স্লোভাকদের বিরুদ্ধে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে চায়। শেষ ষোলোর আরেক ম্যাচে রাত ১টায় নিজেদের অতীত রেকর্ডে উন্নতি করার লক্ষ্যে মুখোমুখি হবে বেলজিয়াম ও হাঙ্গেরি। ‘হ্যান্ড অব গড’ বা ‘ঈশ্বরের হাত’ শব্দটি ফুটবলের সঙ্গে একেবারে ওতপ্রোতভাবেই জড়িয়ে গেছে। ২০০৯ সালের ১৮ নবেম্বর সেই বিভীষিকাময় ঐশ্বরিক হাতের নির্মম শিকার হয়েছিল রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ফরাসীদের বিরুদ্ধে ২-১ গোলে হেরে গিয়েছিল তারা। অভিযোগ আছে ম্যাচে অঁরি হাত ঠেকিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন এবং উইলিয়াম গ্যালাসের দেয়া শেষ মুহূর্তের গোলে হেরে যায় আয়ারল্যান্ড এবং চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় তাদের। ১৯৯০ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলা দলটি কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। এরপর ১৯৯৪ ও ২০০২ সালে খেলেছে তারা। সেই শেষ। এ কারণেই ফুটবল ময়দানে ফ্রান্স একটা বড় শত্রু হয়ে গেছে আইরিশদের কাছে। দেশটির ফুটবল ভক্ত-সমর্থকরা এবার প্রতিশোধ চান। যদিও এ বিষয়টি নিয়ে উভয়দলই এখন কোন তিক্ততা অবশিষ্ট রাখেনি এবং অতীত সেই স্মৃতি মনেও করতে চান না। তবে ভক্তরা সেটা ভুলছেন না। ওই ম্যাচে উভয়দলের হয়ে যারা খেলেছিলেন, তাদের মধ্যে আজও খেলবেন কয়েকজন। ফ্রান্সের হয়ে গোলরক্ষক হিউহো লরিস, ডিফেন্ডার ব্যাকারি সাগনা, প্যাট্রিক এভরা ও স্ট্রাইকার আন্দ্রে পিয়েরে গিগনাক আছেন এবারও। সেই ম্যাচে সাইডবেঞ্চে থাকা মুসা সিসোকো ও গোলরক্ষক স্টিভ মানদান্দাও আছেন। অপরদিকে আইরিশদের পক্ষে এবারও আছেন শাই গিভেন, জন ও’শি, গ্লেন হুয়িলান, রবি কিন ও এইডেন ম্যাকগিডি। এসব ভুলে ফ্রান্সের সহকারী কোচ গাই স্টিফেন বলেন, ‘এরপর অনেক জল গড়িয়েছে। অবশ্যই আমরা বিষয়টি আলোচনা করেছি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমরা মনে করি না যে এটা ম্যাচে কোন প্রভাব ফেলবে।’ ‘এ’ গ্রুপ থেকে ফ্রান্স ৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে প্রি-কোয়ার্টারে উঠে আসে। আর ‘ই’ গ্রুপ থেকে সেরা তৃতীয় দল হিসেবে সুযোগ করে নেয় আয়ারল্যান্ড। এখন পর্যন্ত ফ্রান্স-আয়ারল্যান্ড ১৫ বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে ৬ ম্যাচ হারলেও ৪ জয় তুলে নেয়া আইরিশরা ফরাসীদের রুখে দিয়েছে ৫ বার। এ কারণে সবমিলিয়ে আজকের ম্যাচটিতেও থাকবে টানটান উত্তেজনা। তবে স্বাগতিক হওয়ার সুবাদে কিছুটা এগিয়েই থাকবে ফ্রান্স। গ্রুপ পর্বে তেমন আহামরি কোন খেলা উপহার দিতে পারেনি জার্মানরা। তবে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষস্থান নিয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে আসে ২০১৪ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা। এবার ইউরো সেরা হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছে দলটি। গত আসরে অবশ্য সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। ইতালির কাছে ২-১ গোলের পরাজয়বরণ করে। এবার একই ভুল করতে চায় না জার্মানরা। কিন্তু গ্রুপ পর্বে নিজেদের যে নৈপুণ্য তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি তারা। নকআউট পর্বে নিজেদের নৈপুণ্যে যে ঘাটতি সেটা পুষিয়ে উঠতে চায় জোয়াকিম লোর শিষ্যরা। গ্রুপ পর্বে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সহজ জয় পেলেও উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জয় এবং পোল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করে জার্মানি। গত বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক হিসেবে গোল্ডেন গ্লাভ জয়ী গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নিউয়ের চলতি ইউরোতেও দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। এখন পর্যন্ত সে কারণে কোন গোল হজম করতে হয়নি জার্মানদের। লিলে আজ স্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে পুরো দলের নৈপুণ্যের ঘাটতি পুষিয়ে সেরাটা দিতে উন্মুখ তারা। এ বিষয়ে নিউয়ের বলেন, ‘আমরা যে তিনটি ম্যাচ খেলেছি প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা বলের সঙ্গে সঙ্গেই লেগে ছিল। এ কারণে আমরা তেমন ফুরসত পাইনি বল নিয়ে নির্বিঘেœ ছোটার। এরকম ম্যাচে বড় ব্যবধানে জেতা কঠিন। ইউক্রেন ও উত্তর আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়াটা দারুণ মেধা ও সাফল্য এমনটা ভেবে চিৎকার করে আনন্দ উদযাপনের কিছুই নেই। তবে আমরা নিজেদের কাজটা ঠিকই করেছি। কিন্তু এখন নকআউট পর্ব। যে কোন কিছুই ঘটতে পারে। আমরা নিজেদের শতভাগ দিতে চাই এবং নিজেদের নৈপুণ্যের ঘাটতি পুষিয়ে সেরাটা উপহার দিতে চাই।’ উল্লেখ্য, এবারই প্রথম ইউরো আসরে খেলছে স্লোভাকিয়া। সেদিক থেকে ইতোমধ্যেই দলটি সেরা সাফল্য পেয়ে গেছে। এবার নিজেদের আরেকটু উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য তাদের। জার্মানদের নিয়ে তেমন আতঙ্কিতও নয় তারা। সেরা তৃতীয় দলগুলোর মধ্যে সেরা হিসেবেই তারা ‘বি’ গ্রুপ থেকে প্রি-কোয়ার্টারে উঠেছে। ২০১০ বিশ্বকাপেও একমাত্র অংশগ্রহণে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল দলটি। জার্মানির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১১ ম্যাচ খেলে ৪ বার জিততে পেরেছে স্লোভাকরা, হেরেছে ৭টি। তাই জোয়াকিম লোর শিষ্যদের জন্য স্লোভাক পরীক্ষাটা তেমন সহজ হবে না এবারও। ৪৪ বছর পর আবার ইউরোতে সুযোগ পেয়ে হাঙ্গেরি বেশ চমক দেখিয়েছে গ্রুপ পর্বেই। ‘এফ’ গ্রুপ থেকে ৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান দখল করে উঠে এসেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে। যদিও গ্রুপে ছিল পর্তুগালের মতো শক্তিশালী দল। এখন পর্যন্ত অপরাজিত অবস্থাতেই আছে হাঙ্গেরি। ইউরোতে অংশগ্রহণ মানেই সেমিফাইনাল। মাত্র দুইবার ইউরো খেলে দু’বারই সেমি খেলেছে তারা। ১৯৬৪ সালে তৃতীয় ও ১৯৭২ সালে চতুর্থ হয়েছিল। এরপর আর এ আসরে খেলেনি দলটি। এবার ফিরেই দ্বিতীয় রাউন্ড। তাই হাঙ্গেরিকে নিয়ে বেশ সতর্ক বেলজিয়াম। বেলজিক কোচ মার্ক উইলমট নিজেদের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে বড় হুমকি মনে করছেন হাঙ্গেরিয়ান বাধাকে। গত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা বেলজিকরা অবশ্য দারুণ উজ্জীবিত। ‘ই’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় সেরা দল হিসেবেই শেষ ষোলোয় পা রেখেছে তারা। তবে ইতালির কাছে ২-০ গোলের হারটি নিজেদের দুর্বলতাটাকে প্রকাশ করিয়ে দিয়েছে। গত তিন আসরে ইউরো খেলারই সুযোগ করে নিতে পারেনি দলটি। ১৯৮০ সালে ইউরো রানার্সআপ হওয়া দলটি সর্বশেষ ২০০০ সালে খেলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল। এবার অতীতের সব সাফল্যকে পেছনে ফেলতে চায় বেলজিকরা। এখন পর্যন্ত হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ১৩ ম্যাচ খেলেছে বেলজিয়াম। এর মধ্যে ৮ বারই জয় আছে আর হাঙ্গেরি জিততে পেরেছে মাত্র ২ বার। তবে চলতি ইউরোর নৈপুণ্য বলছে বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই অপেক্ষা করছে। ইউরোতে অতীতের সাফল্য এবং মর্যাদা পুনরুদ্ধারের মিশনে আরেক ধাপ এগোনোর লক্ষ্যেই নামবে উভয় দল।
×