ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৬ জুন ২০১৬

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র মাহে রমজানের ২০তম দিবস। দিবসটি প্রত্যেক মহল্লাবাসীর জন্য ব্যস্ততারও বটে। কারণ, আজ নারী-পুরুষের অনেকেই ইতিকাফ জীবন বরণ করে নেবেন। ইতিকাফের শাব্দিক অর্থ অবস্থান করা, কোন বস্তুর ওপর স্থায়ীভাবে থাকা। ইতিকাফের মধ্যে নিজের সত্তাকে আটকিয়ে রাখা হয় এবং নিজেকে মসজিদ হতে বের হওয়া ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। শরিআতের পরিভাষায় ইতিকাফের নিয়্যতে পুরুষের ঐ মসজিদে অবস্থান করা যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা হয় অথবা মহিলাদের নিজ ঘরে নামাজের স্থানে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে একমাত্র ইবাদাতে মশগুল থাকা। যে মসজিদে নিয়মিতভাবে আজান, ইকামাত সহকারে জামাআতের সাথে নামাজ আদায় হয় সেই মসজিদে ইতিকাফ করা সহীহ হবে। ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী, এরপর মসজিদে আকসা। এরপর ঐ জুমাআর মসজিদ যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ একসাথে আদায় করা হয়। এরপর সে মসজিদ যেখানে মুসল্লিদের সংখ্যা অধিক হয়ে থাকে। (শামী, ২য় খ- ও আলমগীরি, ১ম খ-)। ইমাম আবু হানিফা (র.) হতে বর্ণিত আছে যে ইতিকাফ সহীহ হবে এমন মসজিদে যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাআতে আদায় করা হয়। (হিদায়া ১ম খ-)। মহিলাগণ নিজ ঘরে নামাজের জন্য ইতিকাফের জায়গা নির্ধারিত করবেন, নামাজের জন্য জায়গা না থাকলে ইতিকাফে বসার সময় জায়গা নির্ধারিত করলেও সহীহ হবে। মসজিদে ইতিকাফ করা তাদের জন্য মাকরুহ। (শামি ২য় খ-)। ইতিকাফের শর্তাবলী ১. নিয়ত করা। নিয়ত না করলে ইতিকাফ সহীহ হবে না। ২. পুরুষের জন্য এরকম মসজিদ হতে হবে, যেখানে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করা হয়। (তবে নফল ইবাদাত যে কোন মসজিদে হতে পারে।) মহিলাগণ নিজেদের ঘরে সালাত আদায়ের স্থানে ইতিকাফ করবেন। তারা প্রয়োজন ব্যতীত ঐ স্থান থেকে বের হবেন না। ৩. রোজা রাখা, তবে নফল ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত নয়। ৪. প্রাপ্তবয়স্ক বা বালেগ হওয়া ইতিকাফের জন্য শর্ত নয়। এজন্য জ্ঞানবান, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক, বালিকার ইতিকাফ সহীহ, যেমনিভাবে তাদের নামাজ রোজা দুরস্ত হয়। ৫. নারী পুরুষ সকলের জানাবাত গোসল ফরজ হয় এমন অপবিত্রতা থেকে এবং নারীদের হায়িজ নেফাজ থেকে পবিত্র থাকা একান্ত জরুরী। (আলমগীরি ১ম খ- ও বাদায়েউস সানায়ে, ২য় খ-)। ইতিকাফের নিয়ম রমজানুল মুবারকের বিশ তারিখ আসরের পর সূর্যাস্তের পূর্বে শেষ দশকের ইতিকাফের নিয়্যত করে ইতিকাফকারী মসজিদে প্রবেশ করবে। শরয়ীভাবে ঈদের চাঁদ দেখা গেলে ইতিকাফ খতম করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মিরকাত শরহে মিশকাত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে চার ইমামের সকলেরই এ মত যে, একমাস ইতিকাফ করার ইচ্ছা থাকুক বা দশ দিন, উভয় অবস্থায়ই ইতিকাফকারী ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে আগের দিন সূর্যাস্তের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবে। (মিশকাত, ৪র্থ খ-)। মহিলাগণ নিজেদের ইতিকাফের স্থানে এবং পুরুষগণ মসজিদে প্রবেশ করার সময় অথবা প্রবেশ করে মনে মনে এরূপ নিয়্যত করবে যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রমজানুল মুবারকের শেষ দশ দিনের সুন্নাত ইতিকাফ শুরু করছি।
×