ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভাঙন এড়িয়ে শান্তিনীড় রচনা

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১৯ মে ২০১৬

ভাঙন এড়িয়ে শান্তিনীড় রচনা

হাসিনা সাঈদ বর্তমানে বিবাহ-বিচ্ছেদ একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। একজন খ্যাতিমান তার বিচ্ছেদ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বিবাহ বিচ্ছেদ মৃত্যুর চেয়েও কষ্টের।’ কথাটার সারমর্ম সত্যি অনুধাবনযোগ্য। কথা ছিল সারাটা জীবন পাশে থাকবে, অথচ আজ পাশে থাকতে পারছে না কিংবা সহাবস্থান অসম্ভব হয়ে উঠেছে; তাই অনন্যোপায় হয়ে সম্পর্ক ভেঙে ফেলতে হচ্ছে। কিন্তু এই এতগুলো বছরের সুখ-দুঃখের স্মৃতি, মায়া, ভালবাসার ফসল সন্তান- তার সবই কি ব্যর্থ হয়ে যাবে? জানি না যারা এই অভিশপ্ত ভাঙনকে বেছে নেন তাদের হৃদয়ে এমন প্রশ্নের উদয় হয় কিনা। অনেকের আবার সংসারে কয়েকটা বছরও গড়ায় না, বিশেষ করে শহরে। মাত্র এক মাস বা তার চেয়ে কিছু বেশি সময়ের ভেতর দেখা যায় আলাদা থাকতে শুরু করেছেন। সংসারে ভাঙনের নেপথ্যে হিন্দি বা ইন্ডিয়ান বাংলা সিরিয়াল, মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অবাধ মেলামেশা, পরকীয়া ইত্যাদি বিষয় দায়ী বলে অনেকে মত দেবেন। তাছাড়া আরেকটি বিষয়Ñ পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা ক্রমে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছেন। স্ত্রী যখন দেখেন স্বামী কর্মদক্ষতায় বা আর্থিক ভারসাম্যে হতাশাব্যাঞ্জক অবস্থানে কিংবা স্বামীর পরিবারের সদস্যরা উচ্চশিক্ষিতা কর্মজীবী স্ত্রীটিকে কোনভাবেই স্বীকৃত দিতে পারছেন না; তখনই স্ত্রীর আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগে। বর্তমান পরিসংখ্যানে দেখছি নগরে তালাকের ক্ষেত্রে মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। এছাড়া এযুগেও যৌতুকের চাহিদা, স্বামী বা শ্বশুরবাড়ী কর্তৃক নির্যাতন, স্বামী বা স্ত্রীর পরকীয়া, যৌন অতৃপ্তি এসব বিচ্ছেদ সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞগণ উল্লেখ করেন। ফলস্বরূপ শুধু একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে কয়েক বছরের সাথীকে নিতে হয় এই বিচ্ছেদভার। আর তাতে বলি হয় তাদেরই প্রিয় সন্তান। হয়ত বা সেই পুরুষ বা নারী আবারও নতুন জীবন শুরু করেন। কিন্তু তাতে কি তাদের সন্তানেরা নিশ্চিত জীবন পায়? আর যারা বিচ্ছেদের পর আর বিয়ে করেন না তাদের সন্তানদের তো আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। সমাজে মানুষ তাদের অবজ্ঞার চোখে দেখে। স্কুল, কলেজ বা কর্মপ্রতিষ্ঠানে নানা কটুক্তির শিকার হতে হয়। মা বা বাবা যার কাছেই থাকুক না কেন তাদের কেউ যদি কর্মজীবী হয় তবে প্রচন্ড অপমানবোধ ও মানসিক হতাশায় আত্মহত্যার মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে। ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানের বিয়ে নিয়েও অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। পাত্র/পাত্রীপক্ষ তাদের সহজে গ্রহণ করেন না। পত্র-পত্রিকায় এর উদাহরণ কম নয়। যেমন এক বিবাহযোগ্য পাত্রীর সম্মন্ধ এল। পাত্র বিরাট অফিসার। পাত্রের আত্মীয় প্রথমে জানাল পাত্রের মা-বাবা একসাথে থাকেন না। পরবর্তীকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেল আসলে পাত্রের বাবা-মার ডিভোর্স হয়ে গেছে। তখন পাত্রীর বাবা-মা সুপাত্র জেনেও পাত্রপক্ষের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। কেননা তারা দ্বিধায় থাকেন মেয়েটিকে যে পরিবারে পাঠানো হচ্ছে সে সেখান থেকে কী শিখবে? কার কাছ থেকে শিখবে এবং কাকে ভরসা করবে? এছাড়া যার বাবা মা এমন সম্পর্কহীন, সেই পরিবারের ছেলেইবা বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্ক সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারবে কিনা, ইত্যাদি। ছেলের বউ নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। যদি পাত্রীর মা-বাবা ডিভোর্সী হয় তখন তাকেও নানা খেসারত দিতে হয়। কেননা তখন পাত্র বা পাত্রীর অভিভাবক ভাবেন সমাজে তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণœ হবে। সামাজিকভাবে পরিচয় দিতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। কাজেই বিচ্ছেদ রোধের জন্য স্বামী স্ত্রী দু’জনকেই সহনশীল হতে হবে। আসতে হবে সমাধানে। সেক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মা-বাবা ও নিজ নিজ পরিবারের অগ্রণী ভূমিকা পালন করা যুক্তিযুক্ত বটে। একটা সুন্দর সম্পর্ক, একটু স্পর্শ, আদর-ভালবাসা, অন্তরঙ্গতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ধৈর্য্য, আত্মত্যাগের মানসিকতা, মানানসই বোঝাপড়া গড়ে নিলে, আর অহমবোধের তাড়না থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারলে বিয়ে বিচ্ছেদ থেকে মুক্তি মিলবে। সেইসঙ্গে সন্তান তার মা বাবার বুকে নিরাপদ আশ্রয় পাবে, পাবে সামাজিক স্বীকৃতি। একাকিত্ব ও অভিশপ্ত জীবন থেকে মিলবে মুক্তি। লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা থেকে
×