ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিটফোর্ড মার্কেট থেকে সরকারী ওষুধের বিপুল মজুদ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৮ মে ২০১৬

মিটফোর্ড মার্কেট থেকে সরকারী ওষুধের বিপুল মজুদ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী হাসপাতালের ওষুধ থাকবে হয় সরকারী হাসপাতালের স্টোর রুমে আর না হয় ওষুধাগারে। কিন্তু সেই ওষুধ কেন মিলবে মিটফোর্ডের পাইকারি মার্কেটে। চারটি গোডাউনে সরকারী হাসপাতালের ওষুধের মজুদ দেখে বিস্মিত হয়ে যান র‌্যাব পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মোঃ ফিরোজ আহমদ। সোমবার রাতে রাজধানীর মিটফোর্ডের হাজিরানী মার্কেটের চারটি গোডাউন থেকে উদ্বার করা হয় ওষুধের বিশাল চালান। এ সময় দুই কোটি টাকার ওষুধ জব্দ করা হয়। একই সময় পাশের দিদার মার্কেটের নৈরাশ মেডিসিন প্লাজায় অভিযান চালিয়ে নকল ওষুধ তৈরি ও বিক্রির দায়ে জুয়েল নামের একজনকে দুই বছরের কারাদ- ও দশ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া চকবাজার থানার পুলিশ ওয়ার্টার ওয়ার্কস রোডের মা মেডিসিন পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে বিক্রয় নিষিদ্ধ বিপুল পরিমাণ সরকারী ওষুধ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় র‌্যাব-১ পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ আহমদ মিটফোর্ডের হাজিরানী মার্কেটের চারটি গোডাউনে হানা দেয়। এ সময় ওই গোডাউন তালাবদ্ধ ছিল। মালিকরা টের পেয়ে পালিয়ে যান। আদালত তখন জানতে পারে এসব গোডাউনের মালিক মাহবুব আলম, এরশাদুল হক, জামাল উদ্দিন ও কামরুন নাহার। ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ তাদের অনুপস্থিতিতেই তালা ভেঙ্গে গোডাউনে প্রবেশ করে দেখতে পান বিপুল পরিমাণ ওষুধের মজুদ। সেগুলোর প্যাকেটে লেখাÑ ‘সরকারী হাসপাতলের জন্য বিক্রয়ের জন্য নহে।’ এরপর কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ওষুধের পৃথক পৃথক নমুনা তৈরি করে সিজারলিস্ট তৈরি করা হয়। পরে দুই ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া সরকারী ওষুধগারে। এ ঘটনায় ওষুধ প্রশাসন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। তবে র‌্যাব এটা নিশ্চিত হতে পারেনি সরকারী হাসপাতালের ওষুধ ওই মার্কেটের গোডাউনে গেল কিভাবে। কারা কারা এতে জড়িত সেটা শনাক্ত করার জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে। একই সময় আদালত পাশের দিদার মার্কেটে গিয়ে নৈরাশ মেডিসিন প্লাজায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ জব্দ করে। এ সময় জুয়েল নামের একজনকে দুই বছরের কারাদ- ও দশ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় স্কয়ার, ইনসেপটা, বায়োফার্মা ও রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যালের নামে এসব ওষুধ তৈরি করা হয়। জুয়েল নিজে এসব ওষুধ তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতেন। এদিকে চকবাজার থানাধীন ৬৩/১১ নম্বর ওয়ার্টার ওয়ার্কস রোডের ওষুধের দোকানে এ অভিযান চালানো হয়। ওই দোকান থেকে পাইরেক্সিন-১৫২ পাতা মোট ১৫২০ পিস ট্যাবলেট, প্যারাসিটামল ১৫৮ পাতা, মোট ১৫৮০ পিস ট্যাবলেট, রিসেট ৫০ পাতা মোট ৫০০ পিস ট্যাবলেট, এলবেনডাজল-এলজেড ২০০ পিস ট্যাবলেট, সিডোপাস-৫০, ৬০ পাতা-৬০০ পিস ট্যাবলেট, লিপিকন-২০মিঃ গ্রাঃ ১২ পাতা মোট ১২০ পিস, সেফ্রাডিন ক্যাপসুল ৯ পাতা ৯০ পিস, রেনিটিডিন ১৪০ পিস ট্যাবলেট, লুমনা-৫ মোট ৫০ পিস ট্যাবলেট, ল্যাকলোজ সিরাপসহ কিলমা এক্স, নপ্রোক্স, এমোক্সোসিলিন, ফিনিক্স-২০, ক্যালশিয়াম ল্যাকটেট, সালবিটামল, পেইনো, মেট্রোনিটাজল, জেনটিন, ইছোরাল, লিপিকন, সেফ্রাডিন, বিপুল পরিমাণ সরকারী ওষুধ জব্দ করা হয়। প্রতিটি ওষুধের ‘লেভেলে সরকারী সম্পত্তি বিক্রয় নিষিদ্ধ’ লেখা ছিল বলে জানান চকবাজার জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার কানিজ ফাতেমা। চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শামীম অর রশিদ তালুকদার জানানÑ গ্রেফতারকৃত নজরুল দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল হতে সরকারী ওষুধ সামগ্রী হাসপাতালের লোকজনের সহযোগিতায় সংগ্রহ করে। এরপর তা অবৈধভাবে ক্রেতাদের কাছে বিক্রয় করছিল। এই সিন্ডিকেটের আরও মান্নান হাজী ও মোঃ জামালকে গ্রেফতারে খোঁজা হচ্ছে। এ ব্যাপারে চকবাজার মডেল থানায় ১৯৮২ সালের ড্রাগ অধ্যাদেশের ২০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
×