ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক দিনে ন’শো ইন্টারভিউ! তাজ্জব আদালত

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ১৭ মে ২০১৬

এক দিনে ন’শো ইন্টারভিউ! তাজ্জব আদালত

অনলাইন ডেস্ক ॥ এক দিনে প্রায় ন’শো জনের ইন্টারভিউ। তা-ও স্রেফ একটা থানায়! সিভিক পুলিশ নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীন সরকারি কৌঁসুলির মুখে এ হেন তথ্য শুনে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে তিনি সরকারি কৌঁসুলিকে বলেন, ‘‘আমাকে জানান, কারা ইন্টারভিউ নিয়েছেন। ওঁদের হাইকোর্টের বিচারপতি পদে বসানোর জন্য আমি সুপারিশ করব। বহু মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।’’ পশ্চিমবঙ্গে সিভিক পুলিশ নিয়োগে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি (গ্রেট স্ক্যাম) হয়ে থাকতে পারে বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল হাইকোর্ট। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, কী ভাবে লোক নেওয়া হয়েছে, হলফনামা দিয়ে তা আদালতকে জানানো হোক। এ দিন বাঁকুড়া জেলায় সিভিক পুলিশ নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে এক দিনে একটি থানায় ৮৭৫ জন প্রার্থীর ইন্টারভিউ হয়েছে শুনে হতবাক বিচারপতির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘কে বা কারা ইন্টারভিউ নিয়েছেন? তাঁদের ক’টা মাথা?’’ এর পরে সরকারি কৌঁসুলির উদ্দেশে তির্যক মন্তব্যগুলি করেন তিনি। পাশাপাশি রাজ্যকে তাঁর নির্দেশ, নিয়োগ সংক্রান্ত আসল (অরিজিন্যাল) নথি মঙ্গলবার আদালতে পেশ করতে হবে। ‘‘মঙ্গলবারের মধ্যে ওই কাগজপত্র জমা না-পড়লে তা বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা।’’— পর্যবেক্ষণ আদালতের। ২০১৩-য় তৃণমূল সরকার ঠিক করেছিল, রাজ্যের প্রতিটা থানায় সিভিক পুলিশ নেওয়া হবে। সেই মতো গোটা রাজ্যে ১ লক্ষ ৩০ হাজার সিভিক পুলিশ নিয়োগ হয়। এর মধ্যে বাঁকুড়ায় ৫ হাজার ১০০ জন। জেলার বরিকুল ও সারেঙ্গা থানার কিছু প্রার্থী চাকরি না-পেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। গত ৯ মে যার শুনানিতে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জয়ন্ত মিত্রকে বলেছিলেন, ‘‘যে কোনও ধরনের নিয়োগে কিছু নিয়ম থাকা দরকার। সিভিক পুলিশের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম করা যায়, সে ব্যাপারে গঠনমূলক কিছু প্রস্তাব হলফনামা আকারে পেশ করুন।’’ একই সঙ্গে বাঁকুড়া জেলায় কী প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়েছে, আলাদা হলফনামা মারফত তা-ও জানতে চেয়েছিলেন বিচারপতি। এমন প্রেক্ষাপটে এ দিনের শুনানি। এজি হাজির ছিলেন না। সরকারি কৌঁসুলি তপন মুখোপাধ্যায় আদালতকে জানান, বারিকুল থানায় সিভিক পুলিশ পদে ৯৪৬ জন আবেদন করেছিলেন। ২০১৩-র ৮ এপ্রিল ইন্টারভিউ হয়। ইন্টারভিউ দেন ৮৭৫ জন। শুনে বিচারপতি জিজ্ঞাসা করেন, কত জন মিলে ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন? সরকারি কৌঁসুলির জবাব, ‘‘পাঁচ জনের একটি কমিটি।’’ বিস্মিত বিচারপতি বলেন, ‘‘এক দিনে ৮৭৫ জনের ইন্টারভিউ হয়ে গেল! এক দিনে ক’মিনিট হয় জানেন?’’ উত্তরটা বিচারপতি নিজেই দেন। ‘‘১৪৪০ মিনিট। এর মধ্যে ৮৭৫ জনের ইন্টারভিউ নিয়ে নিল!’’— পরম বিস্ময়ে মন্তব্য করেন তিনি। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×