ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় উন্নত বিশ্বের ন্যায় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৭ মে ২০১৬

ঢাকায় উন্নত বিশ্বের ন্যায় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সদ্য যোগ হওয়া আট নতুন ইউনিয়নকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে (ডিএসসিসি) নতুন ঢাকায় রূপান্তর করতে চান সংস্থাটির প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। একই সঙ্গে ঢাকাকে গ্রীন ঢাকায় রূপান্তরে সহায়তাকারী বাড়ির মালিকদের শতকরা ১০ ভাগ হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করারও ঘোষণা দেন তিনি। সোমবার সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। সম্মেলনে মেয়র ঢাকা দক্ষিণ সিটি নিয়ে বর্তমানের সব উন্নয়ন কর্মকা-, বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও বাধা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বর্ধিত ও বর্তমান ঢাকা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, সিটি কর্পোরেশনে নতুন যোগ হওয়া আট ইউনিয়ন নিয়ে আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা এর মধ্যে সিঙ্গাপুরের কনসালটেন্ট থেকে এ বিষয়ে পরিকল্পনা চেয়েছি। তারা সরেজমিন গিয়ে আমাদের একটা পরিকল্পনা জমা দেবেন। সেই অনুযায়ী পরবর্তী কাজ শুরু করব। এছাড়া বর্তমান ঢাকাকে উন্নত বিশ্বের মতো নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করতে নাগরিকদের কাছে আমাদের দৃঢ় সংকল্প রয়েছে। নির্বাচনী ওয়াদা বাস্তবায়নে শুরু থেকেই আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী ৪ বছর পর নাগরিকগণ নতুন ও আধুনিক ঢাকার সব সুবিধা ভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে কাজ চলমান রয়েছে। যা কখনও বন্ধ হবে না অবিরাম চলবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সাঈদ খোকনের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক কর্নেল (অব) ফারুক খান এমপি, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, সচিব খান মোঃ রেজাউল করিম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জেনারেল মোঃ সাইদুর রহমান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন রকিব উদ্দিন। এছাড়া দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংস্থার কর্মকর্তারা। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর বিগত ১ বছরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও চিত্র তুলে ধরা হয়। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের পুত্র সাঈদ খোকন বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ঢাকাকে বসবাসের যোগ্য আধুনিক নগরী গড়তে কাজ করছি। এ জন্য পুরো ঢাকায় ১৭ শত কোটি টাকার প্রকল্প কাজ চলমান রয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন করা হলে নগরীর চেহারা অনেকটা বদলে যাবে। ডিএসসিসি মেয়র বলেন, পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নগরীর ৫৭ ওয়ার্ডে ৫ হাজার ৭০০ ওয়েস্টবিন স্থাপন করেছি। বিভিন্ন স্থানে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দিনের বেলায় নয় সন্ধ্যার পর গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহ করছি, পরিচ্ছন্নকর্মীদের কাজে ফাঁকি ঠেকাতে বিভিন্ন এলাকায় ৪০টি মোবাইল ফেন্সিং স্থাপনের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এর মাধ্যমে কর্মীদের অবস্থান নিশ্চিত করা যাচ্ছে যে পরিচ্ছন্নতার জন্য তারা রাস্তায় কাজ করছেন কি না? সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই মেয়র বলেন, গ্রীন ঢাকা গড়তে কর প্রদানকারী ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে যারা নিজ বাড়িতে বাগান, ছাদ বা বারান্দায় গাছ লাগাবেন তাদের জন্য সংস্থার পক্ষ থেকে ১০ শতাংশ হোল্ডিং কর মওকুফের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ঢাকার প্রায় সবস্থানে ভবন নির্মাণের ফলে গাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। সে কারণে কখনও অতিবৃষ্টি আবার কখনও প্রচ- গরম পড়ে। নগরীর আকাশে আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ পড়ছে। সমস্যাটি নিরসনে ৫২টি ফুটপাথ ও মিডিয়ানে গাছ লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। নগরবাসীর নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে কাউন্সিলরদের সহায়তায় ৪০ ভাগ এলাকা সিটি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ৪৭টি পাবলিক টয়লেট ২২টি কমিউনিটি সেন্টার সংস্কার ও আধুনিক করা হচ্ছে। ২৭টি মার্কেট পুনঃনির্মাণ হচ্ছে। অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের প্রক্রিয়া চলছে। বুড়িগঙ্গার প্রাণ ফিরে আনতে বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই এর কাজ শুরু হবে। ঢাকার বুড়িগঙ্গা হবে আরেক হাতিরঝিল। যাত্রাবাড়ীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের ভাঙ্গাচোরা সড়ক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নর জবাবে মেয়র বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া পুরো ঢাকায় আমাদের ১৭শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। মাত্র দুই মাস আগে এক যোগে ৩০০ সড়ক মেরামত শুরু হয়েছে। জলাবদ্ধতা বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি বর্ষায় শান্তিনগরের ৫০ ভাগ জলাবদ্ধতা দূর হবে। তাছাড়া এই সড়কটি আমাদের না। এরপরেও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে খুব দ্রুত কাজ শেষ করে সড়ক মেরামতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী বছর থেকে এখানে আর কোর জলাবদ্ধতা থাকবে না। মেয়র হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পিছুটান রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাঈদ খোকন মুচকি হেসে বলেন, রাজনীতির প্রতি পিছুটান নেই তবে টান আছে। সেটা মনের গভীর থেকেই আছে। যতদিন বেঁচে থাকি এই টান থাকবে ইনশাল্লাহ। সিটি কর্পোরেশন ভাগের ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হয়েছে দাবি করে মেয়র বলেন, দুই সিটির বিভাজনটা ছিল অসম। আমাদের দক্ষিণে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশের ৩৫ শতাংশ রাজস্ব আয় দক্ষিণে আর ব্যয় ৬৫ শতাংশ। এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অনেক হাসপাতাল, ক্লিনিক রয়েছে সেগুলোতে ব্যয় করতে হয়। মেয়র নগরীর উন্নয়নে সহযোগিতা করতে সমাজের সব শ্রেণীর নাগরিকদের সহযোগিতা কামনা করেন। পাশাপাশি যে কোন নাগরিক সমস্যায় সরাসরি মেয়রের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার আহ্বান জানান।
×