ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুস্তাফিজ বিস্ময় প্রতিভা ॥ রবি শাস্ত্রী

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ১৫ মে ২০১৬

মুস্তাফিজ বিস্ময় প্রতিভা ॥ রবি শাস্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক ॥ ক্রিকেট বিশ্বে বিস্ময়বালক হিসেবে আবির্ভূত হওয়া বাংলাদেশি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান আইপিএলে গত দু'ম্যাচে উইকেটশূন্য ছিলেন। তারপরও কাটার মাস্টারের প্রতিভা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারছেন না। বরং তাকে সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহারের ইঙ্গিত দিচ্ছেন অনেকে। তাদের মধ্যে একজন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ও টিম ইন্ডিয়ার সাবেক ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী। তিনি মুস্তাফিজকে বুঝেসুঝে ব্যবহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। আজ রবিবার ভারতের জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজারের একটি কলামে তিনি একথা বলেন। কলামটি হুবহু বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো- আজ বলব মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে। খুব বড়সড় চেহারার মালিক ও নয়, প্রচণ্ড গতি আছে বোলিংয়ে এমনও না। ওই একমাত্র বোলার নয় যে ক্রিকেট বলকে সুইং করাতে পেরেছে। এখন তো সবাই কাটার করতে পারে। তার উপর মাঝে মাঝেই ছেলেটা হাসে। ফাস্ট বোলারদের ক্ষেত্রে যেটা সচরাচর দেখা যায় না। তা হলে কেন বিশেষজ্ঞরা মুস্তাফিজকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন বিশ্বের সেরা তরুণ ফাস্ট বোলার হিসেবে প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছে? পরিসংখ্যান কিন্তু বলছে এ ছেলে বিস্ময়প্রতিভা। ভাবুন ভারতের বিরুদ্ধে একটা ওয়ানডে সিরিজে দুটো পাঁচ উইকেট নেওয়া পারফরম্যান্স দিয়ে শুরু। বা আমলা, দুমিনি আর ডি’কককে আউট করে টেস্ট অভিষেক। বা চলতি আইপিএলে ওকে দেখেই ব্যাটসম্যানরা যে রকম গলে যাচ্ছে। কয়েক মাসের মধ্যেই মুস্তাফিজের এমন একটা সমীহ আদায় করে নিয়েছে যেটা অনেক পেশাদার বোলারের তৈরি করতে সারাজীবন লেগে যায়। মনে হচ্ছে যেন গতকালই ছেলেটা বাংলাদেশে ওর গ্রামের পুকুরের পাশে বসে ছিল। ইতিহাস বলছে, বিশ্বের সেরা বোলাররা কিন্তু খুব কৃপণও। কুম্বলে, ওয়ার্ন, মুরলিধরন, ম্যাকগ্রা তাদের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ওভার পিছু গড়ে রান দিয়েছেন খুব বেশি হলে দুই। তারা সফল হয়েছে তাদের কাজটা নিপুন ভাবে করে দেখানোর জন্য। এরা শিকারের সঙ্গে খেলতে ভালবাসত, তারপর আচমকা এমন একটা কড়া ঘুষি কষাত যেটা গোটা একটা ব্যাটিং প্রজন্ম সামলানোর উপায় খুঁজে পায়নি। সেই সোনার ডেলিভারি যেটা কখনও এদের হতাশ করেনি। অমোঘ আঘাতে শিকার শেষ। মুস্তাফিজের ভাণ্ডারেও তেমন একটা বিরল ডেলিভারি আছে। এমনিতে ওর অস্ত্র দুরন্ত সুইং, ধারালো কাটার আর এমন একটা ইয়র্কার যেটা ব্যাট থামাবে সাধ্য কী! তবে মুস্তাফিজের শোকেসের ব্রহ্মাস্ত্র হল সেই ডেলিভারিটা যেটা পিচে পড়ে থমকে গিয়ে ব্যাটসম্যানের সামনে লাফিয়ে ওঠে। আর বেশির ভাগ সময়ই ব্যাটসম্যান সেটা কভারের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে ফেরে। এই বলটা করার সময় ওর বোলিং অ্যাকশনে কিন্তু কোন পরিবর্তন হয় না। আসল খেলাটা থাকে ওর কব্জিতে। সবটাই বলটা ছাড়ার কায়দা। আগের দিন আর এক তরুণ ক্রিকেটার ঋষভ পন্থ মুস্তাফিজের জারিজুরি কিন্তু ধরে ফেলেছিল। এক ডজন বলের মধ্যে বেশ কয়েকটা চার আর ওভার বাউন্ডারি খেতে হয়েছে মুস্তাফিজকে। বাংলাদেশে আলোচনা হচ্ছে মুস্তাফিজ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। অন্তত বোলারের ঘনিষ্ঠমহলের তেমনই দাবি। এদিকে, মুস্তাফিজের অপেক্ষায় নববধূর মতো আকুল হয়ে বসে থাকা সাসেক্স এ সব দেখে স্বাভাবিক ভাবেই টেনশনে পড়েছে। বাংলাদেশের বিস্ময় বোলারের এবার এই কাউন্টির জন্যই খেলার কথা। একই অবস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও। যারা পারলে মুস্তাফিজের মতো রত্নকে তুলোয় মুড়ে রাখে। কোথাও মনে হচ্ছে মুস্তাফিজের আরও যত্ন নেওয়া জরুরি। এরকম খাঁটি প্রতিভাকে লালন করার আরও লোক চাই। ছেলেটা কিন্তু এখনও শরীর আর মনের দিক থেকে কিশোরই, পুরুষ হয়ে ওঠা বাকি। শরীরটাও তাই পুরোপুরি শক্তপোক্ত হয়ে ওঠেনি। ওর মতো প্রতিভাকে কিন্তু খুব সাবধানে, বুঝেসুঝে ব্যবহার করতে হবে। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
×