ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চম দফা ইউপি নির্বাচনে প্রচার শুরু, সহিংসতার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৫ মে ২০১৬

পঞ্চম দফা ইউপি  নির্বাচনে  প্রচার শুরু, সহিংসতার  আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কঠোর সতর্ক পদক্ষেপ না নেয়া হলে আগামী দুদফা ইউপি নির্বাচনে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। অন্য দফার মতো আওয়ামী লীগ ও তাদের দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে। জানা গেছে, দলের নির্দেশ অমান্য করে পঞ্চম দফায় দলের অনেকেই বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ ইউপিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিতে বেশ কিছু ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কোণঠাসা থাকায় বিএনপি ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে সংঘাতের কোন আশঙ্কা না থাকলেও আওয়ামী লীগ তার বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে এ আশঙ্কা রয়েছে ব্যাপক। ইসির তফসিল অনুযায়ী পঞ্চম দফায় ভোট গ্রহণ করা হবে ৭৩৩ ইউপিতে। শনিবার থেকে এসব ইউপির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন। ইসি বলছে, প্রত্যেক প্রার্থীকেই আচরণবিধি মেনে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সমান সুযোগ রয়েছে। গত শুক্রবার পঞ্চম দফায় প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ প্রতীক পেয়েই ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনী আচরণবিধি তদারকিতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও কাজ করছেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়াও তফসিল অনুযায়ী ষষ্ঠ দফার প্রার্থীরা ২০ মে থেকে নির্বাচনী প্রচার চালাবেন। ৪ জুন এ দফায় ভোট গ্রহণ করা হবে। যদিও ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী দু’দফা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে তারা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের গ্রেফতারে জোরালো পদক্ষেপ না নেয়ায় এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় দিন দিন সহিংসতা বাড়ছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের গ্রেফতার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, যে কোন সহিংসতা কঠোর হস্তে দমন, সহিংসতাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার, নির্বাচনী এলাকায় পুলিশী টহল বৃদ্ধি এবং দৃশ্যমান করে প্রার্থী, ভোটার তথা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তবে ইসির পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ ধরনের নির্দেশ পাঠানো হলে নির্বাচনী এলাকায় কি ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সে বিষয়ে ইসির কোন মনিটরিং নেই। বৈধ অস্ত্র জমা নেয়া এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য কেবল নির্দেশ দিয়েই দায় সেরেছেন তারা। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইউপি নির্বাচনে কতসংখ্যক অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে তার কোন তথ্য নেই। অস্ত্র উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযানের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হলেও সে কাজের কোন অগ্রগতি জানতেও চাওয়া হয়নি ইসির পক্ষ থেকে। যদিও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, আগামী দুই দফায় শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন চায় দলটি। এ লক্ষ্যে সংহিংসতা নিয়ে দেশব্যাপী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। তৃতীয় দফায় নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সহিংসতামুক্ত পরিবেশে নির্বাচনের জন্য কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। তারপরও ওই নির্বাচন সম্পূর্ণ সহিংসতামুক্ত করা সম্ভব হয়নি। নির্বাচন শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আক্ষেপ করে বলেন বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার জন্যই গোটা নির্বাচন ব্যবস্থার দুর্নাম হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম দফায় আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় এবারও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে প্রথম চার ধাপে নির্বাচনে বিভিন্ন ইউপিতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে দলীয় প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতা ঘটেছিল। এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। বিভিন্ন সংস্থার জরিপে চারদফায় ৭০ জনের বেশি প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে ভোটের দিন। কেন্দ্র দখল ছাড়াও নির্বাচন পরবর্তী ভোট গণনা নিয়ে সহিংসতায় অনেকেই মৃত্যুবরণ করেন। ২১ এপ্রিল পঞ্চম ধাপে ভোটের জন্য ৭৩৩ ইউপির তফসিল ঘোষণা করে ইসি। এ ধাপে ৩ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন ছিল। চেয়ারম্যান পদে মোট ৩৭১৭ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে দলীয় প্রার্থী এক হাজার ৮২৭ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এক হাজার ৬৯০। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ৭৩৩ ও বিএনপির প্রার্থী ৬৮০। এ দফায় সবক’টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন। তবে অর্ধশত ইউপিতে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। চার দফায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। ভোটের মাঠে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি হলেও ভোটের হিসেবে তাদের অবস্থান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিচে। কমিশনের হিসেবে প্রথম ধাপের চূড়ান্ত ফলে আওয়ামী লীগের ৪৯৪ ও বিএনপির ৫০ চেয়ারম্যান হয়েছেন। এ দফায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ১০৯ ইউপিতে। দ্বিতীয় ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪১৯ ও ধানের শীষের ৬৩ জন বিজয়ী হন। ১১৭ ইউপিতে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তৃতীয় ধাপের ভোটে আওয়ামী লীগের ৩৬৬ জন চেয়ারম্যান হয়েছেন। এ ধাপে বিএনপি প্রার্থীরা ৬০ ইউপিতে জয় পেয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন ১৩৯ ইউপিতে। চতুর্থ ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪৪০ জন জয়ী হয়েছেন। বিএনপির ৭০ ও ১৬১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন এ ধাপে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউপিতে অন্যান্য দফার মতো পঞ্চম দফায় সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। এখন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া না হলে সংঘাত এড়ানো যাবে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পঞ্চম দফায় অধিকাংশ ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। আগের নির্বাচনগুলোতে মূলত সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগ দলীয় ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে।
×