ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেই ৫ মে নেই, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আছেন

প্রকাশিত: ২০:০৯, ১৪ মে ২০১৬

সেই ৫ মে নেই, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আছেন

অনলাইন ডেস্ক ॥ ৫ মে মনে পড়ছে? ‘‘নাহ্।’’ একেবারেই না? ‘‘নাহ্। ওই পুণে আর এই পুণে আলাদা। মালিক অন্য। টিম অন্য। ইটস ডিফারেন্ট।’’ কিন্তু কানেক্ট তো আছে। কলকাতা সঞ্জীব গোয়েন্কারও শহর। ‘‘আমার কাছে ইটস হিজ টিম।’’ বলছেন কাল শহরের ধর্মসঙ্কটের সম্ভাবনা নেই? ‘‘সেটা কী করে বলি? কালই বোঝা যাবে।’’ কিন্তু সত্যি এতটুকু নস্ট্যালজিক লাগছে না আপনার? ‘‘ফেলে চলে এসেছি আসলে। এত কাজ এখন। ইটস পাস্ট। ইটস গন। প্রসঙ্গ না তুললে মনেই পড়ত না!’’ নীল শার্ট, ফর্মাল ট্রাউজার্সের ভদ্রলোক এ বার হাসতে শুরু করেন। শুনে আশ্চর্য লাগে। প্রাসঙ্গিক মনে হয় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রেসিডেন্টস রুমের নৈঃশব্দ। ইডেনে কেকেআর বনাম পুণে মহাযুদ্ধের চলমান স্মারক। আইপিএলে ম্যাচটা যত বার ইডেনে হবে, স্মৃতির সরণি দিয়ে হেঁটে আসবেন তিনি তত বার। অথচ তাঁর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কি না আজ আর সেই ৫ মে মনেও পড়ে না! চরিত্রদের দেখে নয়। প্রেক্ষাপট দেখে নয়। কিছুতে নয়। এক দিক থেকে অনস্বীকার্য যে, ইডেনে শনিবাসরীয় কেকেআর বনাম পুণে কোনও ভাবে ঐতিহাসিক ৫ মে নয়। হওয়া সম্ভব নয়। যতই সিএবি গমগমে থাক। যতই দর্শকদের বক্স-অফিস আগাম হিট হয়ে যাক। শোনা গেল চারশো-পাঁচশো-বারোশো-কমপ্লিমেন্টারি, সব নাকি নিঃশেষ। হোক। সেটা উইকএন্ড বলে হতে পারে। ধোনি-দর্শনের উৎসাহে হতে পারে। কিন্তু চার বছর আগে নিজের সন্তান বনাম নিজের অস্তিত্ব ঘিরে শহরকে যে ধর্মসঙ্কটে পড়তে হয়েছিল, ঘরের টিমের সঙ্গে শহরের শিল্পপতির টিম মুখোমুখি হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা আগে তেমন পূর্বাভাস পাওয়া গেল না। ধোনিদের দিকে সমর্থন অবশ্যই থাকবে। কিন্তু চার বছর আগের ইডেন আবহাওয়ার সেই আগুনটা থাকবে কি? মজার হল, অতীতের কুশীলবরা আজও কেউ কেউ থেকে গিয়েছেন। গৌতম গম্ভীর যেমন। সে দিন কেকেআর অধিনায়ক ছিলেন। আজও আছেন। রজত ভাটিয়া আর একজন। বঙ্গসন্তানকে আউট করার ‘অপরাধে’ অর্ধেক শহর তাঁকে কাঠগড়ায় তুলে দিয়েছিল। এ দিন দেখা গেল, দিল্লি অলরাউন্ডার কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোরের সঙ্গে কথাবার্তায় ব্যস্ত। ভাটিয়া যে এখন পুণেয় খেলেন, কেকেআরে আর নেই, দেখলে মনে হবে না। যুদ্ধ কোথায়? এ যে নিপাট আন্তরিকতা। অন্তত বাহ্যিক ভাবে তো বটেই। পুণে কর্তাদের কেউ কেউ ইডেনে বলছিলেন যে, ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের শহরে ম্যাচ বলে টিমের উপর প্রত্যাশার বাড়তি লাগেজ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। জিতলে সেটা অবশ্যই আনন্দের, কিন্তু হারলেও সব চুরচুর হয়ে যাবে এমন নয়। পুণে এখন পরের বার নিয়ে ভাবছে। কেকেআর ম্যাচ জিতুক না জিতুক, টিমের আইপিএল তো শেষ। শেষ এবং শেষ নয়। অন্তত মহেন্দ্র সিংহ ধোনির জন্য অবশ্যই নয়। সন্ধে ছ’টা নাগাদ যে এমএস ধোনি ইডেনে আবির্ভূত হলেন, প্রথম দর্শনে তাঁর আকর্ষণ শীতল আগ্রাসন নয়। চুল। চুলের নতুন ছাঁট। কানের দু’পাশ যা চেঁচে দিয়ে চলে গিয়েছে। টুর্নামেন্ট ভাগ্যে নতুনত্ব আমদানির চেষ্টায় সেটা করা কি না, জানা সম্ভব নয়। কিন্তু মাঠে কিছু চমক তো দেখা গেল। উসমান খোয়াজাকে নেটে আউট করে ‘বোলার’ ধোনির দু’হাত ছড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ, দু’বার ব্যাটিং প্র্যাকটিসে নিজেকে ডুবিয়ে দেওয়া, টিমমেটরা ড্রেসিংরুমে ঢুকে যাওয়ার পরেও তা চালিয়ে যাওয়া— রোজ রোজ এ সব দেখা যায় না। ইডেনে ঢোকা ও বেরনোর সময় এমএসডি-কে দেখে যে উল্লাসের গর্জনটা উঠল, ভারতের জার্সিতে এলেও সব সময় তা পাওয়া যায় না। কেকেআর কন্ট্রোলরুম কিছু একটা বোধহয় আন্দাজও করেছে। এমনিতে দু’টো টিমের টিমলিস্ট পাশাপাশি রাখলে কেকেআরকেই তুলনায় শক্তিধর দেখাবে। পুণের ব্যাটিং বলতে তিন জন। খোয়াজা-রাহানে-ধোনি। বোলিংয়ে অশ্বিন এবং অ্যাডাম জাম্পা। তা জাম্পা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় দুপুরে টিম হোটেলে পীযূষ চাওলা বলে দিলেন, ‘‘আমাদের স্পিন স্কোয়াডও বা কম কী? হগ। নারিন খেললে নারিন। মিডিয়া লিখুক না লিখুক, আমিও আছি।’’ বোঝা গেল, স্পিন নয়। তা হলে? কেকেআর কিন্তু বলে গেল যে, এই যে পুণের কিছু হারানোর নেই বলা হচ্ছে। হারানোর যথেষ্ট আছে। ক্রিকেটে গর্ব বলেও একটা ব্যাপার থাকে। যা এমএস ধোনির মতো ক্রিকেট-প্রজাতির কাছে অতীব গুরুত্বের। অধিনায়কত্বের সফরে এত দুঃসময়ের একমাত্র তুলনা হতে পারে কাপ জয়ের পর বিদেশে ০-৮ বিপর্যয়। যখন তাঁকে ভারত অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠে গিয়েছিল। যা আজ আবার উঠছে। এমএস ধোনি প্রত্যুত্তর দেবেন না? রক্তাক্ত হয়ে পাল্টা রক্ত ঝরাবেন না? চার বছর আগে তাঁর পূর্বসূরি কিন্তু পেরেছিলেন। টিমকে জেতাতে না পারলেও নিজে জিতে বেরিয়েছিলেন। এই শহরে, এই ম্যাচে। ক্রিকেট-অদৃষ্ট যেখানে আজ তাঁর উত্তরসূরিকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ৫ মে হোক না হোক। মহারাজের শহরে অস্তিত্বরক্ষার মহেন্দ্র-রাজ— শিরোনাম হিসেবে খারাপ কী! সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×