ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘আবারও মাঠে ফিরে ভাল পারফর্ম করাটা চ্যালেঞ্জের’

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৪ মে ২০১৬

‘আবারও মাঠে ফিরে ভাল পারফর্ম করাটা চ্যালেঞ্জের’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দুর্ভাগ্যের যে কালো মেঘ ভর করেছিল, অবশেষে সেই মেঘ কেটে গেছে। আর এই মেঘ কাটানোর ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মাস তিনেক আগে চার ফুটবলারকে নিষিদ্ধ করেছিল তারা। বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে দুই জনের ওপর আরোপিত সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে দেশীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরা হলেন- মামুনুল ইসলাম এবং সোহেল রানা। শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য তারা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিলেন এক বছরের জন্য। তবে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞায় থাকা অপর দুই ফুটবলার ইয়াসিন খান এবং জাহিদ হোসেনের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি বাফুফে। কেননা এই দুই ফুটবলার এখনও ক্ষমা চেয়ে বাফুফের কাছে আবেদন করেননি। উল্লেখ্য, এএফসি এশিয়ান কাপের প্লে অফ রাউন্ডে খেলবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। আগামী ২ ও ৭ জুন তাদের খেলতে হবে প্রতিপক্ষ তাজিকিস্তানের বিপক্ষে। এই ম্যাচকে কেন্দ্র করেই এখন চলছে জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্প। ইতোমধ্যেই পুরনো ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফকে আবারও হেড কোচ হিসেবে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছে ন্যাশনার টিমস ম্যানেজমেন্ট কমিটি। বাফুফের ভাষ্যমতে ক্রুইফ আসছেন আগামী ১৬ মে। তবে ক্রুইফ জানিয়েছেন তার আসতে ২-১ দিন দেরি হবে। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় ফুটবল দলের অনুশীলন করার কথা ছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। কিন্তু দুপুরে প্রবল বর্ষণ হলে মাঠ অনুশীলনের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে জাতীয় ফুটবল দলের অনুশীলনের ব্যবস্থা করা হয় বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফে। ৩৬ জনের প্রাথমিক স্কোয়াডের ৩২ ফুটবলার ছিলেন টার্ফে। তবে ইমন বাবু জ্বরের কারণে এবং মোনায়েম খান রাজু পায়ের চোটের কারণে অনুশীলন করতে পারেননি। অনুপস্থিত চার ফুটবলার হলেনÑ মাজহারুল ইসলাম হিমেল, কেষ্ট কুমার বোস, মোহাম্মদ লিংকন এবং জামাল ভূঁইয়া। জামাল এখনও ফেরেননি ডেনমার্ক থেকে। বাকিরা শেখ জামালের হয়ে ফিলিপিন্সে এএফসি কাপে খেলে ফিরেছেন। তবে এখনও রিপোর্টিং করেননি। শুক্রবারই দলের সঙ্গে প্রথম অনুশীলন করেন মামুনুল ও সোহেল রানা। নিষিদ্ধ থাকার সময়টাতে তিনি মিস করেছেন ১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও ১টি প্রীতি ম্যাচ। মাঠে ফিরে কতটা স্বস্তিতে? মামুনুলের উত্তর, ‘তিন মাস ছিলাম খেলার বাইরে। এই সময়টা ছিল আমার জন্য খুবই বাজে একটা ব্যাপার। অবশেষে সেই সময়টা থেকে মুক্তি পেলাম। যখন শুনলাম আমার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে, তখন যেন মুক্তির স্বাদ পেলাম। বড় একটা নিঃশ^াস নিলাম প্রাণভরে, যেটা শান্তির নিঃশ^াস। এই তিন মাসে অনেক মানসিক কষ্টের মধ্যে যেতে হয়েছে। আমি চাই আমি যে কষ্ট পেয়েছি, এমন কষ্টে যেন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোন খেলোয়াড় না পড়ে।’ মাঠে ফেরাটা কতটা চ্যালেঞ্জের ছিল? ‘আবারও মাঠে ফিরে ভাল পারফর্ম করাটা আমার জন্য অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ। ফুটবলে সবসময় যা হয়Ñ যখন ভাল রেজাল্ট করি, তখন সবাই বাহবা দেয়। কিন্তু যখন খারাপ খেলি, তখন সবাই গালমন্দ করে, সমালোচনা করে। এটার জবাব একটাইÑ মাঠে নেমে ভাল পারফর্ম করা। ফিরে আসাটা যেন সত্যিকারের ফিরে আসার মতোই হয়, জোরালোভাবে হয়, সেই চেষ্টাই করব আপ্রাণ।’ নিষিদ্ধ থাকার সময়টাতে কি কিছু শিখলেন, যা সামনের দিনগুলোতে কাজে লাগবে? মামুনুল বলেন, ‘এই তিনমাস সময়ে শিক্ষা পেয়েছি অনেক কিছুই। কাদের কাছে শাস্তি পেলাম, কাদের জন্য পেলাম, কেন পেলাম, কেন এই ঘটনাগুলো ঘটেছে ... এসব কিছুই গভীরভাবে ভেবেছি এবং এ থেকে ইতিবাচক অনেক কিছু শিক্ষা পেয়েছি। নিজেকে বলেছি, সামনে চলার পথে যে বাধা আসবে, সেটা এখনই দরকার ছিল। এখনকার প্রেক্ষাপটে কামব্যাক করার সময় এগুলো লাগবে। কিন্তু আরও অনেক পরে এমনটা হলে তখন হয় তো কামব্যাক করার ক্ষেত্রে সেগুলো কাজে না-ও লাগতে পারত। তখন কিছু বলারও থাকত না। এখানে শিক্ষণীয় বিষয় আছে। এখানে সাংবাদিকদের সাহায্য সবচেয়ে দরকার। আমার শাস্তি পাওয়ার শতকরা আশি ভাগ দায়ভার সাংবাদিকদের।’ এখন করণীয় কি? ‘এখন থেকে যা করব, যা বলব ... তা সবই হবে মাঠে। মিডিয়াকে ধন্যবাদ খেলোয়াড়দের খারাপ সময়ে তাদের পাশে থাকার জন্য। এটাই আমরা চাই। আমি বলব সবসময় নয়, শুধু খারাপ সময়েই খেলোয়াড়দের পাশে থাকুন। তাহলে খেলোয়াড়রা সারাজীবন আপনাদের মনে রাখবে।’ শাস্তি পাওয়ার আগে জাতীয় দলের মূল একাদশে ছিলেন অটোমেটিক চয়েস। কিন্তু এখন বাফুফের ভাষ্য হচ্ছেÑ দলে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই পারফর্ম করতে হবে। জাতীয় দল তো বটেই, ঘরোয়া ফুটবলেও এই কয়েক মাস খেলতে পারেননি অন্য একটি আইনী জটিলতায়। এ প্রসঙ্গে মামুনুলের ভাষ্য, ‘এটা সত্যি, বাফুফে-ক্লাব দ্বন্দ্বে আইনী জটিলতায় আমি স্বাধীনতা কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে পারিনি। তারপরও দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার জন্য আমাদের বাফুফের ন্যাশনাল টিম ম্যানেজমেন্ট কমিটি সবাই আবারও ডেকেছে। আমি মনে করি এক্ষেত্রে আমাদের আসলে সম্মানই করেছে বাফুফে। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই সম্মান রক্ষা করা। আমি চাই অবশ্যই পারফর্ম করেই মূল একাদশে ঠাঁই করে নিতে। আগামী বিশ দিন সময় হাতে আছে আমাদের। এই বিশ দিন আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি কঠিন পরিশ্রম করার সময়।’ দলে ফিরে আবারও পুরনো পরিবেশ ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি ফিরে পাচ্ছেন পুরনো কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ, এ প্রসঙ্গে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের কূটনৈতিক উত্তর, ‘এ পর্যন্ত একাধিক কোচের অধীনেই জাতীয় দলে খেলেছি। তারা সবাই আমার খুব আপন। কিন্তু আমি যদি টিমে পারফর্ম করতে না পারি, তাহলে সেই কোচ আমাকে দলে রাখবেন কেন?’
×