ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীঘ্রই সম্ভাব্যতা যাচাই

এবার সারাদেশে মাটির নিচ দিয়ে হাইভোল্টেজ বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৪ মে ২০১৬

এবার সারাদেশে মাটির নিচ দিয়ে হাইভোল্টেজ বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন

রশিদ মামুন ॥ মাটির নিচ দিয়ে হাইভোল্টেজ বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। রাজধানী ঢাকায় বিতরণ কোম্পানিগুলো স্বল্প পরিসরে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুত বিতরণ লাইন সম্প্রসারণ করলেও দেশে বিদ্যুত সঞ্চালন করা হয় মাটির ওপর দিয়ে। মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা যায় কিনা সে বিষয়ে শীঘ্র সম্ভাব্যতা জরিপ শুরু করা হবে। সম্প্রতি এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাটির নিচ দিয়ে হাইভোল্টেজ লাইন সম্প্রসারণের নির্দেশ দেন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। বৈঠকে ঢাকা-মাওয়া-মংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্প উত্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে বলেন, টাওয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন না করে মাটির নিচ দিয়ে সঞ্চালন ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে অবিলম্বে একটি সম্ভাব্যতা জরিপ পরিচালনার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। বিদ্যুত বিভাগের তরফ থেকে জানানো হয়, রাজধানী ঢাকায় বিতরণ কোম্পানি মাটির নিচ দিয়ে বিতরণ লাইন সম্প্রসারণের কাজ করছে। যদিও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি সূত্র বলছে, মাটির ওপর দিয়ে হাইভোল্টেজ লাইন নেয়া সুবিধাজনক। এতে খরচও কম পড়ে। সাধারণত প্রতি কিলোমিটার ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ ব্যয় দেড় কোটি টাকা আর ৪০০ কেভির ক্ষেত্রে এই ব্যয় আট কোটি টাকার ওপর। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি সূত্র জানায়, মংলা-মাওয়া-ঢাকা ছাড়াও এখন পিজিসিবি ছয়টি হাইভোল্টেজ লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এগুলো হচ্ছে মাতারবাড়ি-মদনঘাট ৪০০ কেভি, মদনঘাট-মহেশখালি ৭৬৫ কেভি, বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি, রূপপুর-বগুড়া ৪০০ কেভি, রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি এবং পটুয়াখালি-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন। এসব লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের বড় বিদ্যুত কেন্দ্রে সঞ্চালন করার জন্য। দেশের যেসব এলাকায় কয়লা চালিত এবং পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে সে সব এলাকাকে সংযুক্ত করবে সঞ্চালন লাইনগুলো। দেশের বর্ধিত বিদ্যুত উৎপাদনকে মাথায় রেখে এই পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মংলা-মাওয়া-ঢাকা সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিলে ৫৩৮ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য নেয়া হবে ৬৬২ কোটি টাকা। চলতি বছর জুলাই থেকে কাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুনে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে রাজধানীতে বিদ্যুত আনতে এই সঞ্চালন লাইন ব্যবহার হবে। রাপমাল বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদনে আসার সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রকল্পটি শেষ করা হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সব সঞ্চালন লাইনই সম্প্রসারণ করা হচ্ছে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর উৎপাদনে আসার সময় বিবেচনা করে। রামপালের পরই পটুয়াখালিকে সম্পৃক্ত করা হবে গোপালগঞ্জের সঙ্গে। পটুয়াখালিতে তিনটি বড় কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। প্রতিবিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হবে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এছাড়াও মাতারবাড়ি এবং মহেশখালিতে চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, শীঘ্রই সম্ভাব্যতা জরিপ চালানো হবে। মাটির নিচ দিয়ে সঞ্চালন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা গেলে বিপুল পরিমাণ জমিও বেঁচে যাবে। আর আধুনিক ব্যবস্থায় সঞ্চালন লাইনে কোথাও ত্রুটি হলে তাও খুঁজে বের করা সম্ভব। এখন কোন কোন সঞ্চালন লাইন মাটির নিচ দিয়ে স্থাপন করা যায় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মাটির নিচ দিয়ে সঞ্চালন লাইন থাকলে ঝড় ঝঞ্ঝা বা অন্যকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন ক্ষতি হবে না। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সঞ্চালন লাইন নির্মাণের ক্ষেত্রে জমির প্রাপ্যতা অনেক ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মাটির নিচ দিয়ে লাইন সম্প্রসারণ করা হলে এসব ঝামেলা থাকবে না। সরকার ঢাকার বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থার সব কিছু মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। শুধু বিতরণ লাইনই নয় সাবস্টেশনও নির্মাণ করা হবে মাটির নিচে। এর মধ্যে প্রথম সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের নিচে। ওপরে খেলার মাঠ ঠিকই থাকবে নিচে থাকবে সাবস্টেশন। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) সাবস্টেশনটি নির্মাণ করবে।
×