ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানের চরম ঔদ্ধত্য

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১৪ মে ২০১৬

পাকিস্তানের চরম ঔদ্ধত্য

আলবদর নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় নাক গলানো অব্যাহত রেখেছে পাকিস্তান। এ ঘটনায় ইসলামাবাদে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করা হয়। পাশাপাশি পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে পাল্টা তলব করে যোগ্য জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ সর্বসম্মতভাবে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করে। গণহত্যায় নিজামীর সম্পৃক্ততাকে ‘কথিত অপরাধ’ উল্লেখ করে দেশটি ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। সেইসঙ্গে বলেছে, ‘পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন সমুন্নত’ রাখাই ছিল তার অপরাধ। একাত্তরে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনক্সা প্রণয়নকারী নিজামীকে নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সপ্তাহের মধ্যে দুই দফা বিবৃতি দিয়ে কূটনৈতিক সংস্কৃতিতে খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এ প্রসঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘নিজামী যদি পাকিস্তানের এতটাই অনুগত থেকে থাকেন তবে পাকিস্তান কেন তাকে নিয়ে গিয়ে নাগরিকত্ব দেয়নি?’ স্মরণযোগ্য সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদÑ এই জোড়া যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ-ের রায় কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তান তার দীর্ঘকালের ওই দুই মিত্রের জন্য কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ করে। একই ইস্যুতে পুরনো বন্ধুদের জন্য এর আগেও মায়াকান্নার নজির রেখেছিল পাকিস্তান। ‘পাকিস্তানের প্রতি অনুগত এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সমর্থন করায়’ কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে দাবি করে সে সময় দেশটির পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। যুদ্ধাপরাধীদের একের পর এক ফাঁসির পরিপ্রেক্ষিতে একই ধরনের ধৃষ্টতা দেখিয়ে চলেছে পাকিস্তান। এ জাতীয় ধৃষ্টতার কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ সরকার। একাত্তরে বাংলার মাটিতে নারকীয় গণহত্যা চালানোর পরও পাকিস্তানের ভেতর সামান্যতম অনুতাপ পরিলক্ষিত হয়নি। বরং বিভিন্ন সময়ে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ভেবেছিল একাত্তরে সংঘটিত তাদের দোসরদের অপরাধ ধামাচাপা পড়ে গেছে। কৃতকর্মের জন্য তাদের দোসরদের কখনোই আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই একাত্তরের দালালদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। পরবর্তীকালে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের ঘাতকদের বিচার শুরু হলে তাদের সঙ্গে তাদের প্রভু পাকিস্তানও নড়েচড়ে বসে। এরপর একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হওয়ায় সন্ত্রাসবাদের স্বর্গ পাকিস্তান আর নিশ্চুপ থাকতে পারেনি। সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়া তারই বহিঃপ্রকাশ। আমরা বারবার বলে আসছি, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের দেনা-পাওনা শেষ হয়ে যায়নি। এখন কড়ায়-গ-ায় সে হিসাব মেটানোর জোরালো দাবি তুলতে হবে। দীর্ঘ সাড়ে চার দশক ধরে বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানীদের মানবিক কারণে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে এসেছে। আর কতকাল এভাবে চলবে? চুক্তি অনুযায়ী সম্পদের ন্যায্য হিস্যাও পাকিস্তানকে মিটিয়ে দিতে হবে। পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করাই সমীচীন। সেইসঙ্গে আশা করব, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বক্তব্য প্রকাশে পাকিস্তান সর্বদা সতর্ক ও সংযত থাকবে।
×