ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একদিনে সর্বোচ্চ, খুবই উদ্বেগজনক

বজ্রপাতে ৪২ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ১৩ মে ২০১৬

বজ্রপাতে ৪২ জনের মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বৃহস্পতিবার বিকেলে বজ্রপাতে নারী, কৃষক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৪২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বৈশাখের শেষ ভাগে টানা এক সপ্তাহ গরমের পর ঢাকাসহ দেশের অনেক জেলায় বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এর সঙ্গে হয় বজ্রপাত। বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে পাবনায় ৬ জন। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে মারা গেছে ২ জন। এছাড়া রাজশাহীতে ৫, সিরাজগঞ্জে ৫, কিশোরগঞ্জে ৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪, নরসিংদী, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জে ৩ জন করে, গাজীপুর, নাটোর ও বগুড়ায় ২ জন করে মারা গেছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার, বিডিনিউজ ও টিভি চ্যানেলের। পাবনা ॥ জেলার সুজানগর ও বেড়া উপজেলায় বজ্রপাতে নানা-নাতনিসহ ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন- সুজানগর উপজেলার বাঘলপুর গ্রামের ময়েন উদ্দিন (৬৭) ও তার নাতনি শিখা খাতুন (১২), দক্ষিণচর গ্রামের রইচ উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে শহিদুর রহমান মণ্ডল (৩৫) এবং বেড়া উপজেলার অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহত অপর দুই জনের নাম পাওয়া যায়নি। রাজশাহী ॥ এই জেলায় বজ্রপাতে মারা গেছে ৫ জন। মোহনপুরে উপজেলায় মারা যায় ৩ জন। নিহতরা হলেন গোছা গ্রামের রহমত আলী (২৮), হাটরা গ্রামের আব্দুল হাকিম (৫০) ও ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সত্যেন কুমার সত্য (৩৫)। মোহনপুর থানার ওসি আব্দুল হামিদ জানান, ঝড়-বৃষ্টির সময় মাঠে কর্মরত অবস্থায় সাতজন বজ্রপাতে আহত হন। তাদের উদ্ধার করে মোহনপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। সিরাজগঞ্জ ॥ রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় বজ্রপাতে নারী ও শিশুসহ পাঁচজন মারা গেছে। নিহতরা হলেন- রায়গঞ্জের চকপুর গ্রামের নূর নবীর মেয়ে নূপুর খাতুন (৮), বৈকণ্ঠপুর গ্রামের আব্দুল মোতালেব (৪২) ও মাদ্রাসা শিক্ষক আনোয়ার হোসেন (৪৫)। উল্লাপাড়া উপজেলার শিমলা গ্রামের আব্দুল লতিফ (৩৫) ও বেতুয়া গ্রামের গৃহবধূ শাহিনুর বেগমের (৩০) মৃত্যুও হয়েছে বজ্রপাতে। উল্লাপাড়া থানার ওসি দেওয়ান কৌশিক আহমেদ বলেন, বিকেলে বৃষ্টির সময় বজ্রপাত হলে শিমলা গ্রামের লতিফ ও বেতুয়া গ্রামের শহিনুর ঘটনাস্থলেই মারা যায়। কিশোরগঞ্জ ॥ জেলার তিন স্থানে বজ্রপাতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- হোসেনপুর উপজেলার আড়াইবাড়িয়া গ্রামের শরীফুল ইসলাম শুভ (১৮), মমতা বেগম (৪০), বাজিতপুর উপজেলার কৈকুরি গ্রামের রেজিয়া খাতুন (৫৬) ও বাহের নগর গ্রামের স্বপন (১৭)। স্থানীয়রা জানায়, বিকেলে বাড়ি থেকে হোসেনপুরের চর বিশ্বনাথপুর এলাকায় নিজেদের ধানের জমিতে ধান কাটা শ্রমিকদের জন্য খাবার পানি নিয়ে যায় শুভ। হঠাৎ বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়। হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হবিগঞ্জ ॥ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় বজ্রপাতে ৩ জন মারা গেছে। এ সময় আহত হয়েছে একই উপজেলার আরও ৮ জন। নিহতদের একজনের নাম হাবিব বলে জানা গেছে। হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা বজলুর রহমান কৃষক হাবিবের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গাজীপুর ॥ কাপাসিয়া উপজেলায় বজ্রপাতে এক কৃষিশ্রমিক ও এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন মোঃ সাত্তার আলী (২৬) ও রুবিনা (৪০)। কাপাসিয়া থানার এসআই মোঃ শাহজাহান লেন, সাত্তার আলী কাপাসিয়া উপজেলার উত্তরখামের গ্রামে আব্দুর রশীদের জমিতে ধান কাটছিলেন। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে। সাত্তারের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার সাতান্না গ্রামে। প্রায় একই সময় খিরাটি গ্রামের কাজল মিয়ার স্ত্রী গৃহবধূ রুবিনা মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফেরার পথে বজ্রপাতে মারা যান। ঢাকা ॥ যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়ায় ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাতে মারা যান দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন- রুম্মান হাসান লিঙ্কন (২১) ও সাহেদ ওরফে সোহাগ (২১)। সোহাগ আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন, লিঙ্কন পলিটেকনিক্যালে পড়তেন। নিহতদের বন্ধু মাজহারুল ইসলাম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, বিকেল ৫টার দিকে তারা কয়েক বন্ধু কোনাপাড়ার কাঠেরপুল এলাকার কনকর্ড বালুর মাঠে ফুটবল খেলতে যান। ‘সন্ধ্যার আগে বৃষ্টি শুরু হয়। সে সময় প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাত হলে লিঙ্কন আর সোহাগ অচেতন হয়ে যায়।’ দুই শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মোঃ আনিসুর রহমান জানিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ সরাইল ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় বজ্রপাতে জাহানারা বেগম (৪৮), শফিকুল ইসলাম (২৮), কবির হোসেন (৪০) ও শামছুল ইসলাম (৪০) মারা গেছেন। বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি অংশু কুমার দেব বলেন, দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে বিভিন্ন সময় সোনারামপুর ইউনিয়নের চরশিবপুর গ্রামে জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মজিবুর রহমানের ছেলে শফিকুল ইসলাম এবং কানাইনগর গ্রামে নদীতে গোসল করে বাড়ি ফেরার পথে সুলতান মিয়ার ছেলে কবির হোসেন মারা যান। সরাইল থানার ওসি রূপক কুমার সাহা বলেন, দুপুর ১২টার দিকে নিজ বাড়ির উঠানে কাজ করার সময় জাহানারা এবং ইছাপুর গ্রামের জোনাব আলীর ছেলে শামছুল ইসলাম জমিতে ধান কাটার সময় মারা যান। নাটোর ॥ লালপুর উপজেলার চারটি পৃথক স্থানে বজ্রপাতে এক নারীসহ দু’জন নিহত ও দুইজন আহত হয়েছেন। আম কুড়াতে গিয়ে উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মোবারক হোসেন (২৪) এবং উত্তর লালপুর গ্রামের সাহারা বানু নিহত হন বলে লালপুর থানার ওসি আব্দুল হাই তালুকদার জানিয়েছেন। এছাড়া কাজিপাড়া গ্রামের সাজেদুর রহমান ও মহরকয়া গ্রামের পাপিয়া খাতুন আহত হন। তাদের লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বগুড়া ॥ শেরপুর উপজেলায় বজ্রপাতে দুই ভাই মারা গেছে। তারা হলেন সীমাবাড়ী ইউনিয়নের বেতগাড়ী গ্রামের হাদু সরকারের বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩৭) ও ছোট ছেলে আরিফুল ইসলাম (২৫)। মোঃ হারেজ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুই ভাই মাঠে ধান কাটছিলেন। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই আনোয়ার মারা যান। হাসপাতালে নেয়ার পথে আরিফুলেরও মৃত্যু হয়।
×