ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফাঁসি যে সব অভিযোগে-

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ১১ মে ২০১৬

ফাঁসি যে সব অভিযোগে-

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির আমির মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। আপীলের রায়ে, যে আট অভিযোগে তিনি (নিজামী) ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, তার মধ্যে ১, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে তিনি খালাস পেয়েছেন। আর ২, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে তার দ- বহাল রয়েছে। এর মধ্যে ২, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে পাবনার বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানী সেনারা হত্যা ও ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ; পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা এবং পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। ৪ নম্বর অভিযোগে পাবনার করমজা গ্রামে নয়জনকে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদ- হলেও আপীলে তিনি খালাস পেয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ে ১, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে আটক, নির্যাতন, হত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার চারটি অভিযোগে নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছিল। সর্বোচ্চ আদালত প্রথম দুটিতে খালাস দিয়ে পরের দুটিতে সাজা বহাল রেখেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনার নিজামীর বিরুদ্ধে মোট ১৬টি অভিযোগ আনে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ চার্জ-১: ১৬ জুন ১৯৭১ সালে নিজামী পাবনা জেলার স্কুলের হেড মাওলানা কছিমউদ্দিন আহম্মেদসহ অন্য দুইজনকে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। পাবনা জেলার আতাইকুলা থানার মাধবপুর গ্রামের ইছামতি নদীর পাড়। সেখানে একাত্তরের ১৬ জুন গুলি করে হত্যা করা হয়,পাবনা জেলা স্কুলের হেড মাওলানা কছিমুদ্দিন আহম্মেদকে। ৪ জুন সকাল বেলা উল্লাপাড়া যাবার জন্য বাসযোগে রওয়ানা করেন। পাবনা থেকে বের হওয়ার সময় মোসলেম খার তেমাথার মোড়ে অবস্থিত পাকিস্তান আর্মির চেকপোস্টে আর্মিরা তাকে বাস থেকে নামিয়ে পাবনা শহরের নুরপুর ওয়াপদা পাওয়ার হাউজ আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে আসামি মতিউর রহমান নিজামীর উপস্থিতিতে ও ইঙ্গিতে তার ওপর সীমাহীন নির্যাতন চলে। এর পর একাত্তরের ১০ জুন ভোর অনুমান ছয়টার দিকে মাধপুর আর্মি ক্যাম্প সংলগ্ন ইছামতি নদীর পাড়ে অজ্ঞাত দুই সঙ্গীসহ তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি পাবনা জেলার একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবক ছিলেন। চার্জ -২ : জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নির্দেশে রাজাকার আসাদের সহায়তায় পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনী ডেমরা ও বাউশগাড়ী গ্রামে প্রায় ৪৫০ জন নিরীহ নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে। একই দিন সেখানে কয়েকজন মহিলাকেও ধর্ষণ করা হয়। একাত্তর সালের ১৪ মে শুক্রবার পাবনা জেলার সাঁথিয়া থানার বাউশবাড়ি গ্রামে ভোরে ফজরের আজানের পর নিজামী বেলা ১১টায় মিটিং ডাকে। সেই মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বর্বরোচিত হত্যাকা- ঘটানো হয়। নিহতদের বড় গর্তে জড়ো করে তাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করা হয়। চার্জ -৩ : ১৯৭১ সালে ২৭ মার্চের পর মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকবাহিনী ক্যাম্প তৈরি করে। পরবর্তীতে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হবার পর তারাও উক্ত স্থানে ক্যাম্প করিয়া ট্রেনিং ও অপরাধ মূলক কার্যক্রম চালায়। মে মাসের প্রথম দিক হতে জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযম, নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামীসহ অন্যান্য নেতারা আর্মি ক্যাম্পে যাতায়াত করতেন। মতিউর রহমান নিজামী ছাত্র সংঘের নেতা ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে আর্মি ক্যাম্পে উপস্থিত উর্ধতন আর্মি অফিসারদের সহিত স্বাধীনতাকামী বাঙালী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হত্যা নির্যাতন ইত্যাদি মানবতবিরোধী অপরাধের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করতেন। এ ধরনের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্রের ফলে সারা বাংলাদেশের পাকবাহিনীসহ সহযোগী বাহিনী হত্যা, নির্যাতন বিতাড়ন ইত্যাদি অপরাধ সংঘটিত করে। চার্জ -৪ : ৮মে ভোরে পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার করমচা গ্রামে হামলা চালিয়ে সুরেন্দ্র নাথ ঠাকুরের বাড়ির লোকজন ও পাশের বাড়ির লোকজনকে ধরে এনে মন্দিরের সামনে লাইনে দাঁড় করে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে নিজামীর নির্দেশে আজগর মিয়ার স্ত্রীকে ধর্ষণ ও আহেদ প্রামাণিকের বাড়ি লুট করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। শিবানী (বর্তমানে ভারতে আছে), পাশের গ্রামের হালদারের বোন ও আজগার মিয়ার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে মেঘা ঠাকুরের ঘরের সমস্ত মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। চার্জ -৫ : পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার আড়পাড়া ও ভূতের গাড়ি গ্রামের হাফেজ ওমর আলীসহ ১৯ জনকে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। একাত্তরের ১৬ এপ্রিল বেলা অনুমান ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার সময় আসামি মতিউর রহমান নিজামীর সহযোগিতায় তার পক্ষের অনুসারীরা পাকিস্তানী আর্মির সহায়তায় পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার আড়পাড়া ও ভূতের গাড়ি গ্রামে একই সময়ে একযোগে আক্রমণ করে উভয় গ্রামের নিরীহ নিরস্ত্র হাফেজ ওমর আলীসহ ১৯ জনকে গুলি করে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে এবং পাতিলাখালী গ্রামের আয়েস ফকির, পিতা-জুব্বার ফকির, রিজু সরদার, পিতা-সবরাজ, নারিচা, গ্রামের কুলসুম বেওয়াসহ উক্ত এলাকার আরও অনেক লোককে গুলি করে হত্যা করে। এবং তাদের বাড়ি ঘর লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। চার্জ -৬ : একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা ধুলাউরা গ্রামে ডাঃ আব্দুল আউয়ালের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে,এ খবর পেয়ে নিজামী পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকার নিয়ে ওই বাড়ি ঘেরাও করে মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩০ জনকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। ৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করে ইছামতি নদীর পাড়ে দাঁড় করিয়ে উপর্যুপরি বেয়োনেট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। সে দিন হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো ধটনাও ঘটে। ওই দিন মুক্তিযোদ্ধা তল্লাশির নামে কয়েকটি বাড়ি ঘেরাও করে উপযুপরি গুলিবর্ষণ করে এদের হত্যা করা হয়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান আলীকে আসামি মতিউর রহমান নিজামীর নির্দেশে তার একান্ত অনুগত রাজাকার সাত্তার গরু জবাই করা ছুরি দিয়ে জবাই করে। সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। চার্জ -৭ : পাবনা জেলার বেড়া থানার বৃশালিকা গ্রামের শহীদ সোরহাব আলী প্রামাণিক পিতা মৃত নয়ন উদ্দিন প্রামাণিক সাং বৃশালিকা, থানা বেড়া, জেলা পাবনা। একাত্তরের ১৪ আগস্ট তিনি ও তার ছেরে আঃ সেলিম লতিফ এবং ভাতিজা আলাউদ্দিন ভারতে চলে যায়। তার ছেলে ও ভাতিজা সামরিক ট্রেনিং নিলেও তিনি কোন প্রকার ট্রেনিং গ্রহণ করেননি। তিনি সেখানে আবু সাঈদের কাছে থেকে যান। ২/১২/৭১ তারিখ বিকেলে ভারত হতে বাড়িতে আসার খবর পেয়ে নিজামী বিষয়টি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে অবহিত করে। বৃশালিকা গ্রামটি ঘিরে তাকে ভোর সাড়ে ৫টায় ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে তার ওপর নির্যাতন করা হয়। চার্জ -৮ : ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট রাতে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ও আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী ও পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সেক্রেটারি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ পুরাতন এমপি হোস্টেলের আর্মি ক্যাম্পে যান। সেখানে বন্দী জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল আজাদের উদ্দেশ্য করে গালাগালি করে। এবং আর্মি ক্যাপ্টেনকে বলে যে, প্রেসিডেন্ট সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আদেশের পূর্বেই তাদের মেরে ফেলতে হবে। চার্জ -৯ : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাত্র কয়েকদিন আগে নিজামীর নির্দেশে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বেড়া থানার বৃশালিকা গ্রাম ঘেরাও করে প্রায় ৭০ জনকে গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকা-ের পর ৭২টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এর পর পাকিস্তানী সৈন্যরা প্রফুল্ল প্রামাণিক, ষষ্ঠী প্রামাণিক, ভাদু প্রামাণিক, মনু প্রামাণিক, জ্ঞানেন্দ্র হালদার, পল্টুসহ প্রায় ৭০ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর রাজাকার বাহিনী ও পাকি সৈন্যরা প্রায় ৭২টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। চার্জ -১০ : পাবনা সাঁথিয়ার সোনাতলা গ্রামের অনিল চন্দ্র কু-ু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তার পিতা ভাই-বোনসহ ভয়ে ভারতে চলে যান। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য ভারত থেকে ট্রেনিং নেন। ট্রেনিং শেষে আগস্ট মাসে সাঁথিয়া এলাকায় এসে জানতে পারে যে, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার কারণে মতিউর রহমান নিজামীর নির্দেশে স্থানীয় রাজাকার তাদের বাড়িসহ আশপাশের অনেক বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের পর প্রাণভয়ে সপরিবারে নীলফামারী জেলায় বসবাস করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি মতিউর রহমান নিজামীর ভয়ে তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেননি। চার্জ -১১ : মতিউর রহমান নিজামী ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে বক্তৃতা দিয়েছেন। একাত্তরের ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের নিখিল পাকিস্তান সভাপতি হিসেবে বলেন, পাকিস্তান আল্লাহর ঘর। আল্লাহ একে বার বার রক্ষা করেছেন। ভবিষ্যতেও রক্ষা করবেন। দুনিয়ার কোন শক্তি পাকিস্তানকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, আল্লাহ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তার প্রিয় ভূমির হেফাজত করেছেন। তিনি উপরোক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে ধর্র্মপ্রাণ মুসলমানকে ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে স্বাধীনতাকামী বাঙালী জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে প্ররোচিত করেছেন। উক্ত সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি আবু নাসের বালেন, যেই হিন্দুর অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পাকিস্তান অর্জন করেছি, সেই হিন্দুদের সঙ্গে আমরা কোনদিন এক হতে পারি না। মতিউর রহমান নিজামীর উপস্থিতিতে উক্তরোক্ত ঘৃণ্য ও বিদ্বেষসূচক বক্তব্য নিজামীর মৌনতা উক্ত বক্তব্যের স্বীকৃতির শামিল। চার্জ -১২ : একাত্তরের ২২ আগস্ট ঢাকার ইসলামী একাডেমিতে আল মাদানী স্মরণে এক আলোচনা সভায় মতিউর রহমান নিজামী বলেন,আল মাদানীর রক্তের প্রতিশোধ নিতে পারলেই আমাদরে শ্রদ্ধা বোধ প্রমাণিত হবে। আর এ প্রতিশোধ ইসলামের শত্রুদের সমূলে উৎখাতের মাধ্যমেই সম্ভব হতে পারে। তিনি সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলেন, ইসলামের ইতিহাসে শুধু শাহাদতের ইতিহাস নয়, ইসলামের ইতিহাস শত্রু নিধনের ইতিহাস। গাজী হয়ে আল্লাহর দ্বীনকে গালেব করারও ইতহাস। পাকিস্তানকে যারা বিচ্ছিন্ন করতে চায় তারা এদেশ থেকেই ইসলামকে উৎখাত করতে চায়। তিনি আরও বলেন, আজ ইসলামের শত্রুরা হাতে অস্ত্র নিয়েছে। তিনি সবাইকে মাদানীর পথ অনুসরণ করে জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। চার্জ -১৩ : এ ছাড়া একাত্তরের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্র সংঘ কর্তৃক আয়োজিত ছাত্র সামাবেশে পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বলেন যে, পাকিস্তান কোন ভূখ-ের নাম নয়, একটি আদর্শের নাম। এই আদর্শ পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম। পাকিস্তানের শত্রু ইহুদী, ভারত ও রাশিয়ার পাকিস্তান বিরোধী ষড়যন্ত্রের উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু রাশিয়া নয় সারা দুনিয়ার ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলো ভারতের পেছনে দাঁড়ালেও ভারত পাকিস্তানের এক ইঞ্চি জমিও দখল করতে পারবে না। এই ধরনের অপব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীদের মনে ঘৃণার উদ্রেক সৃষ্টি করে স্বাধীনতাকামী বাঙালী জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে প্ররোচিত করেছে। চার্জ -১৪ : একাত্তরের ৯ ও ১০ ডিসেম্বর যশোর বিডি হলে এক ছাত্র সংঘের সমাবেশে মতিউর রহমান নিজামী বলেন, পাকিস্তাকে যারা আজিমপুর গোরস্তান বলে সেøাগান দিয়েছিল, তাদের পাকিস্তানের মাটি গ্রহণ করেনি। তাদের জন্য কোলকাতা আর আগরতলার মহাশ্মশানই যথেষ্ট। এদেশের মুসলমানরা ভারতীয় হিন্দু দাদাদের ধোঁকায় পড়ে গেল। তিনি পরদিন সকাল বেলায় যশোর জেলা রাজাকার সদর দফতরে সমবেত রাজাকারদের উদ্দেশে পবিত্র কোরান শরীফের সুরায়ে তওবার ১১১ ও ১১২ আয়াতের আলোকে জাতির এই সঙ্কটজনক মুহূর্তে প্রত্যেক রাজাকারকে ঈমানদারীর সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত এই জাতীয় কর্তব্যে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। মাতিউর রহমান নিজামী পবিত্র কোরান শরীফের সুরার উদ্ধৃতি দিয়ে রাজাকারদের স্বাধীনতাকামী বাঙালী জনগোষ্ঠীকে হত্যা করতে প্ররোচিত করে। চার্জ -১৫ : একাত্তরের ৯ এপ্রিল নিজামীর নির্দেশে পাইকরহাটি গ্রামে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়। পাবনা শহর থেকে পাইকরহাটি গ্রাম প্রায় ৫০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। কাশিনাথপুর থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তর ও নগরবাড়ি-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন পূর্ব-পশ্চিমে ৬ কিলোমিটার লম্বা এবং পশ্চিমে মহাসড়ক সংলগ্ন দুইটি পাড়া। একটি পশ্চিম পাড়া, অন্যটি বিশ্বাস পাড়া ‘ডাববাগান’পাড়া। একাত্তরে ৯ এপ্রিল সকাল অনুমান ১০টার সময় বিমান বহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানী সেনাবহিনীর একটি দল পাবনা যাওয়ার সময় নগরবাড়ি ঘাট হতে কাশিনাথপুর মহাসড়কের দুই পার্শে¦র বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে এবং এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী প্রতিরোধ যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানসহ আশপাশ এলাকা ঘিরে ফেলে প্রতিরোধ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে ধরে ধরে গুলি করে হত্যা করা হয়। মহাসড়ক সংলগ্ন পূর্ব ও পশ্চিম পাশে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা মধ্যের প্রায় সাড়ে তিনশত ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়। চার্জ -১৬ : জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে আলবদর বাহিনী, যা প্রথমে জামায়াতে ইসলামীর প্রাইভেট বাহিনী হিসেবে গঠিত হয়। যার প্রধান ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী। উক্ত বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্য শান্তি কমিটির ও ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য যারা পরবর্তীতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে সংঘটিত অপরাধে সরাসরি জড়িত ছিলেন। যা ক্রাইম অব জেনোসাটি। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রেসিডেন্ট ও আলবদরের প্রধান হিসেবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
×