ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হানাহানি বন্ধ করতে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার চাই

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১০ মে ২০১৬

হানাহানি বন্ধ করতে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার চাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বক্তৃতার মাঝখানে বলে উঠলেন, ‘একটা প্রশ্ন করি। তোমরা কী কেউ জানো, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কোন দল কতটিতে বিজয়ী হয়েছে? জাতীয় পার্টি কতটিতে বিজয়ী হয়েছে?’ এরপর তিনি কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষায় থাকলেন উত্তরের জন্য। কেউ কোন কথা বললেন না। সোমবার রাজধানীর ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে এরশাদের পাশে তখন দলের শীর্ষ নেতারা। পার্টির মহাসচিবসহ ডজন খানেক প্রেসিডিয়াম সদস্য। সামনে উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্মমহাসচিব পর্যায়ের শতাধিক নেতা। সবাইকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে হতাশা প্রকাশ করলেন এরশাদ। বললেন, ‘খুব দুঃখ পেলাম, সো স্যাড। পার্টি সম্পর্কে কারও কোন আগ্রহ নেই। তোমরা কেউ পার্টির খবর রাখো না। আমার মনে হয় নেতারাও এই তথ্য জানে না।’ এবার এরশাদ নিজেই বললেন, চারদফা ইউপি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জিতেছে ৩৫টিতে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে জাতীয় পার্টি। মানুষ আমাদের ভুলে যায়নি। এটাই তার প্রমাণ।’ এরশাদ আরও প্রশ্ন করলেন, তোমরা কী জানো এই নির্বাচনী সহিংসতায় কতজন মারা গেছেন, তারা কোন দলের? তোমরা কেউ খবর রাখো না, দুঃখ পেলাম। যারা মারা গেছেন, সবাই আওয়ামী লীগের লোকজন। বিএনপি, জাতীয় পার্টির কেউ মারা যায়নি।’ নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার প্রয়োজন, তা না হলে কালো টাকার দৌরাত্ম্য এবং হানাহানি বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, আগামী কিছুদিনের মধ্যে পার্টির কাউন্সিল হচ্ছে। আমার ধারণা কাউন্সিল থেকে বাড়ি ফিরে গিয়ে সব ভুলে যাবেন। আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে। সেই সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না। এরশাদ বলেন, বিএনপি ক্ষয়িষ্ণু আর জাতীয় পার্টি বর্ধিষ্ণু। তাই জাতীয় পার্টি মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। দলকে এখনও মানুষ ভালবাসে। ভোট দেয়। নির্বাচিত করে। কিন্তু আমরা আমাদের দায়িত্বটুকু পালনের চেষ্টা করি না। এটা ঠিক নয়। আমাদের মধ্যে যারা নেতা তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী থাকা উচিত। তিনি বলেন, আসন্ন কাউন্সিলে লাখো জনতার সমাবেশ করে দেখিয়ে দিতে হবে যে, জাতীয় পার্টি জেগে আছে, জাতীয় পার্টি হারায়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পার্টির নতুন লোগো উন্মোচন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘শান্তির জন্য পরিবর্তন এবং পরিবর্তনের জন্য জাতীয় পার্টি’ সেøøাগান সংবলিত এ মোড়ক উন্মোচনের সময় জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের নেত্রী রওশন এরশাদ, জিএম কাদের এবং মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এরশাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন। সাবেক এ রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন করে জাতীয় পার্টি আবার জেগে উঠবে। এ সম্মেলন হবে সবচেয়ে ঝাঁকজমকপূর্ণ। নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবে। মানুষও পার্টি সম্পর্কে নতুন বার্তা পাবে। আমাদের উপর যে অন্যায় অত্যাচার করা হয়েছে, ষড়যন্ত্র করে বারবার নিঃশেষ করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। সে তুলনায় আমরা অনেক ভাল ফলাফল করেছি। বিএনপি ২৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলে তাদের অস্তিত্বই থাকত না। বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে এরশাদ বলেন, এভাবে নির্বাচন চলতে পারে না। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ভোটাররা ব্যক্তিকে ভোট দেয় না, ভোট দেয় দলকে। এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশে নির্বাচনী সহিংসতা হবে না। দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হবে। সারাদেশে জাতীয় পার্টি আমলের উন্নয়ন কর্মকা- আজও সাক্ষী হয়ে রয়েছে। এ সময় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে’ কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনান রওশন।
×