ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকারী অফিসে নাগরিক সেবার মান সন্তোষজনক নয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১০ মে ২০১৬

সরকারী অফিসে নাগরিক সেবার মান সন্তোষজনক নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী অফিসগুলোর নাগরিক সেবার নমুনা সন্তোষজনক নয় বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কমিশনার ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার কথা চিন্তা করে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। অপরদিকে বিআরটিএর যে কোন কর্মকা-ে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত দালাল অথবা যে কোন উর্ধতন কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত থাকলে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে ও সেবামূলক সকল আবেদনের এক মাসের মধ্যেই সমাধানের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম। সোমবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে দুদক কর্তৃক আয়োজিত বিআরটিএর নানা অভিযোগের ওপর আয়োজিত এক গণশুনানি অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. নাসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমরা সরকারী সকল অফিসে নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করতে আগামী রমজানের পর দালাল, ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ ধরতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করব। তখন বিআরটিএ অফিসেও অভিযান পরিচালনা করা হবে। আমরা চাই জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হোক। এমনকি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সরকারী বা বেসরকারী কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী যদি থাকে তাহলে আমাদের এ বিষয়ে তথ্যসহ জানালে আমরা তাদের গ্রেফতার করতে বাধ্য হব। এদের আইনের আওতায় আনা হবে। বিআরটিএসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে অভিযোগ রয়েছে। আমরা চাই প্রতিষ্ঠানটি তাদের দুর্নাম ঘুচিয়ে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত করুক অথবা তাদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা- আর নানা উদ্যোগের মাধ্যমে দুর্নীতি সহনশীল পর্যায়ে আনতে কাজ করুক। আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি কমাতে প্রতিকার চাই। তিনি বলেন, গণশুনানি হচ্ছে দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক কর্মসূচী। এর মাধ্যমে সরকারী অফিসগুলো সেবার মান উন্নয়নের চেষ্টা করছে। এর পাশাপাশি দুদক দুর্নীতি দমন ও প্রতিকারের কাজটিও করে থাকে। সেক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের হুঁশিয়ারি করে দিতে চাইÑ কেউ দুর্নীতি করলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। জনগণ সাংবিধানিকভাবে সেবা পাওয়ার অধিকার রাখে। জনগণের টাকায় এসব সরকারী অফিস চলে। তাই তাদের সেবার মান আরও বাড়াতে হবে। আমরা সরকারী অফিসগুলোর সেবা নিয়ে গণশুনানি করছি। পাশাপাশি সেবা গ্রহীতার ভোগান্তি কমাতে প্রতিনিয়ত ফলোআপ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। দুদক কমিশনার বলেন, সকল সরকারী অফিসে নাগরিকদের নির্দিষ্ট সময়ে সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে দুদক এ রকম গণশুনানির আয়োজন করছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এ পর্যন্ত মোট ১৩টি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন গণশুনানিতেই সরকারী অফিসগুলোর সেবা নিয়ে ভাল মন্তব্য শুনিনি। সরকারী অফিসে যদি সেবাই না পাওয়া যায় তাহলে অফিস থাকার কী দরকার? নাগরিকদের বঞ্চনা কমাতে কাজ করুন; তাদের সেবা দিন ও কষ্ট দূর করুন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা গত মার্চ মাস থেকে আগামী এক মাসের মধ্যেই সকল আবেদনকারীর আবেদনের বিষয়ে সমাধান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা কার্যকর রয়েছে। এ সময়ের মাঝে যে কোন বিষয়ে সমাধান করা হবে। কাউকে হয়রানি করা যাবে না। আপনারা জানেন, বিআরটিএ’র অফিসে ভোগান্তি রয়েছে। আমরা অস্বীকার করছি না। এসব ভোগান্তির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দালালদের দৌরাত্ম্য। গত আড়াই বছরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ৩ শতাধিক দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। এর বাইরে অনেক সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসারগণও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পরে। তবে অনেক সময় মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে এসে বিআরটিএ অফিসকে হয়রানি করার নজিরও আছে। নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা করতে বর্তমানের চেয়ে আরও অধিকসংখ্যক দক্ষ ড্রাইভার গড়ে তুলতে ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের জন্য আরও অনেক প্রশিক্ষক থাকা প্রয়োজন। গাড়ির ফিটনেস প্রদান করবে বলে কোন কোন দালাল গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এসব অর্থের একটি ভাগ বিআরটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও হয়ত পেয়ে থাকে। কারণ কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে দালালদের যোগাযোগ না থাকলে কিভাবে তারা এত বড় বড় কাজ অতি দ্রুত করে দেয়ার সাহস পায়। তবে এ বিষয়ে প্রমাণ করতে পারলে আমরা দুর্নীতিবাজ এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করব। অনুষ্ঠানে দুদক সচিব বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রধানত তিনটি সমস্যা বেশি লক্ষ্য করা যায়। অভিযোগের সমাধান করতে অতিরিক্ত সময় নেয়া, গ্রাহককে হয়রানি করা ও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ফি নেয়া। আমরা এসব সমস্যা সমাধানে গণশুনানি চালাব এবং তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিনি এ গণশুনানির জন্য বেসরকারী সংস্থা জাইকার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। সেবা প্রদান করতে বা গ্রহণ করতে হলে দাতা ও গ্রহীতা উভয়কেই সহায়তা করতে হবে। দুদক সচিব আবু মোঃ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেনÑ দুদক কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম, জাইকা প্রতিনিধি হিরোকি ওটানাবি ও দুদক মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া। গণশুনানিতে বিআরটিএর মেট্রো সার্কেল উত্তর ও দক্ষিণ, সার্কেল-৩ এর কর্মকর্তা ও ৩৮ জন সেবাগ্রহীতা অংশগ্রহণ করেন। গণশুনানিতে সাইফুল ইসলাম নামের একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, আমরা বিআরটিএ অফিসে গেলে দালালদের খপ্পরে পড়তে হয়। কোন বড় কর্মকর্তার কক্ষে যেতে পারি না। নিম্ন পদের কর্মচারীরা আমাদের বিভিন্ন কাগজের অজুহাতে আটকে রাখেন। সরকারের কর্মকর্তা কর্মচারী হয়ে তাদের সঙ্গে দেখা না করতে পারার কারণ কী? এর সমাধান হওয়া জরুরী। এর উত্তরে বিঅরটিএর মিরপুর সার্কেলের উপ-পরিচালক মাসুদ বলেন, যে কোন প্রকার সমস্যা হলে দালাল বা অন্য কারও কাছে নয়, সরাসরি আমাদের কাছে চলে আসবেন। রংপুর থেকে আসা আগত চালক আকমল হোসেন বলেন, আমি ভারি যানবাহনের জন্য আবেদন করলেও আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সে হাতে লেখা হালকা যান বলে উল্লেখ করা হয়েছে; ফলে আমাকে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গাড়ির মালিকানা বদলের বিষয়ে এক গ্রাহক বলেন, ৫ বছর আগে গাড়ির মালিকানা বদলের জন্য আবেদন করেছি। আজও কোন প্রকার সমাধান পাইনি। এ বিষয়ে বারবার বিআরটিএতে গেলে তারা বলেন, আপনার গাড়ির কাগজ দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা আছে। তাই গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করা যাবে না। এ বিষয়ে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা শুনানিতে বলেন, আমরা ওয়ান ইলেভেনের সময় কিছু গাড়ির কাগজের ব্যাপারে জানতে চেয়েছি কিন্তু এসব গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করিনি। তাই এক্ষেত্রে দুদকের কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা নেই। এ সময় বিআরটিএর কর্মকর্তারা ওই গ্রাহককে মঙ্গলবার যোগাযোগ করতে বলেন। এছাড়া অধিকাংশ সমস্যার সমাধান করতে কর্মকর্তারা এক থেকে দুই দিন সময় নেন। ঢাকা জেলা প্রশাসক মোঃ সালাউদ্দীন আহমেদের সঞ্চালনায় গণশুনানিতে ৩৮ জন সংক্ষুব্ধ গ্রাহক অংশ নেন।
×