ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলুন

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৯ মে ২০১৬

ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলুন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের দেশবিরোধী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ১৪ দলের নেতারা বলেছেন, অসাংবিধানিক পন্থায় বর্তমান সরকারকে উৎখাতে আগুনযুদ্ধে পরাজিত খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ছাতার তলে থেকেই সারাদেশে গুপ্তহত্যা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িকতা ও তালেবানির দিকে নিয়ে যাওয়ার রাজনৈতিক খেলার অংশ হিসেবেই আগুনযুদ্ধের পর এখন গুপ্তহত্যার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। লেডি লাদেন খালেদা জিয়া ও তার সহযোগী জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্মূল করতে হবে। ‘বিএনপি-জামায়াত জোটের অব্যাহত গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, জঙ্গীবাদী তৎপরতা এবং গণতন্ত্র উন্নয়ন স্থিতিশীলতা ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে রবিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কেন্দ্রীয় ১৪ দল আয়োজিত বিশাল গণসমাবেশে জোটের নেতারা এসব কথা বলেন। গণসমাবেশের সভাপতি কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করে বলেন, চলমান পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে মাঠে নামবে ১৪ দল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে আগামী ১৫ মে রাজশাহীতে এবং আগামী ২৪ মে সারাদেশের সকল জেলায় সমাবেশ করবে ১৪ দল। এদিকে গণসমাবেশ চলাকালে ১৪ দলের নেতাকর্মীরা জুতো পায়েই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে উঠে পড়েন। এ নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ দেখা দেয় সেখানে। পরে অবশ্য নেতারা জুতো খুললেও অনেক কর্মীকেই জুতো পায়েই হাঁটতে দেখা গেছে। মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাসদ অপর অংশের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান ন্যাপের এ্যাডভোকেট এনামুল হক, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির জাকির হোসেন, বাসদের রেজাউর রশীদ খান, গণআজাদী লীগের এস কে শিকদার, জাতীয় পার্টি জেপির এএইচ সালাউদ্দিন মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ড. আব্দুর রাজ্জাক, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আহমদ হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের শাহে আলম মুরাদ, সাদেক খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ পরিচালন করেন এড্ভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি। সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের অন্য দলগুলোর সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশবিরোধী চক্রান্ত শুরু করেছেন। আমরা ১৪ দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অতীতে বিএনপি-জামায়াতের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছি এবং তারা আমাদের কাছে বারবার পরাজিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে প্রতিহত করবে। তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াত যতই ষড়যন্ত্র করুক ২০১৯ সালের একদিন আগেও দেশে নির্বাচন হবে না। তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়ে বন্ধ করতে না পেরে এখন দেশকে অস্থিতিশীল করতে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। এই গুপ্তহত্যার প্রতিবাদে ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকবে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সাহস থাকলে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে প্রমাণ করুন আপনি সত্য না মিথ্যা। দেশবাসী ভাল করেই জানেন যে আপনি একজন মিথ্যাবাদী ও চক্রান্তকারী। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া হচ্ছেন লেডি লাদেন। তিনি ক্ষমতায় থাকলেও মানুষ মারেন, ক্ষমতায় না থাকলেও মানুষ মারেন। লেডি লাদেন ও তার সহযোগী জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি নির্মূলের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বানÑ আসুন শান্তির পক্ষে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অপশক্তিকে শুধু প্রতিহত নয়, নির্মূল করি। বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, অনেকেই বাংলাদেশকে নিয়ে খেলতে চাচ্ছেন। জঙ্গীবাদের উত্থানের নাম করে বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন খেলা খেলতে দেয়া হবে না। তাদের কোন ষড়যন্ত্রই সফল হতে দেবে না ১৪ দল। তিনি বলেন, দেশবিরোধী এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে এ দেশের মানুষই যথেষ্ট, বাইরের কোন শক্তির দরকার নেই। আমাদের দুর্ভাগ্য দেশে যখন জঙ্গীবাদী কর্মকা- হচ্ছে তখনই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকা- করছেন। তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। সাম্প্রতিক হত্যাকা-গুলোকে ‘অনেক বড় রাজনৈতিক খেলা’ আখ্যা দিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, অনেক বড় রাজনৈতিক খেলার অংশ এ গুপ্তহত্যা। সরকারের উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তালেবানি কায়দায় এ হামলা চালানো হচ্ছে। সবই ঘটছে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার ছায়াতলে। তিনি মানুষ হত্যার দায়ে জামায়াতে ইসলামীর মতো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ারও বিচার দাবি করে বলেন, একাত্তরের গণহত্যার দায়ে যদি নিজামীর ফাঁসির রায় হতে পারে, তাহলে মানুষ পোড়ানোর দায়ে খালেদা জিয়ার বিচার ও ফাঁসি দাবি করছি। আর দেশে শান্তি, উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হলে যে কোন মূল্যে জঙ্গীবাদ, জঙ্গী-সন্ত্রাসের সকল ঘাঁটি-খুঁটি ধ্বংস করে দিতে হবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে, বিদেশী নাগরিক হত্যা করে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট এখন গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এখন তারা মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা করতে পারলে এ সরকারের ভিত কেঁপে উঠবে। তাই বিএনপি-জামায়াত জোট এখন জয়কে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দুপুর তিনটা থেকেই মিছিল নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও থানা-ওয়ার্ড থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হন সমাবেশস্থলে। এক পর্যায়ে গণসমাবেশটি রীতিমতো বিশাল সমাবেশে রূপ নেয়।
×