ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংক থেকে মিলছে দেড় হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১ এপ্রিল ২০১৬

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংক থেকে মিলছে দেড় হাজার কোটি টাকা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে প্রথম ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। এর পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। বিদ্যুত ও রেল খাত মিলে মোট তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নে এ ঋণ দেবে সংস্থাটি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-কে অবহিত করেছে ব্যাংকটি। সে অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তুতের কাজ অব্যাহত রয়েছে। একেবারেই সহজ শর্তে না হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এই ঋণ প্রয়োজন বলে মনে করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ঋণ বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন উৎস থেকে ঋণ পাওয়া শুর হচ্ছে এটি বড় বিষয়। অর্থের পরিমাণ যাই হোক, শুরু তো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের মধ্য আয়ের দেশে যেতে হলে প্রচলিত উৎসগুলোর বাইরে নতুন নতুন উৎস খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন তাছাড়া সরকার অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন এ সময় বৈদেশিক সহায়তা প্রয়োজন। ইআরডি সূত্র জানায়, যে তিনটি প্রকল্পে অর্থায়ন করতে যাচ্ছে এআইআইবি সেগুলো হলো, ডেসকোর ডিজাইন সাপ্লাই এ্যান্ড ইনভেষ্টলেশন অব ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন এ্যাট বসুন্ধরা এ্যান্ড উত্তরা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণ দেবে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা (৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার), ডিজাইন সাপ্লাই এ্যান্ড ইনভেস্টলেশন অব কনভেনশন অব একজিসটিং ৩৩ কেভি আন্ডার গ্রাউন্ড লাইন্স। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণ দিচ্ছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা (১০ কোটি মার্কিন ডলার)। রেল মন্ত্রণালয়ের আওতায় এয়ারপোর্ট থেকে রেল স্টেশন পর্যন্ত লাগেজ ভ্যান শীর্ষক একটি প্রকল্প রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ঋণ পাওয়া যাবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা (৫ কোটি মার্কিন ডলার)। চলতি বছরে (২০১৬) এআইআইবি বিদ্যুতের দুটি প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্রুত ১৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ প্রদান করবে। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে রেলের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৫ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ প্রদান করবে। এআইআইবি থেকে পাওয়া ঋণের সুদের হার বিষয়ে জানা গেছে, এই ঋণ কিছুটা কঠিন শর্তের হবে। বার্ষিক সুদের হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং এর সঙ্গে লন্ডন ইন্টার অফার ব্যাংক অফার রেট (লাইবর) যুক্ত হবে। তাছাড়া ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তবে ঋন পরিশোধের ক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচটি অপসন রয়েছে বলেও জানা গেছে। যেমন যদি সময় কম নিয়ে অর্থাৎ ১০ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করা হয় তাহলে সুদের হার কিছুটা কম আসবে ইত্যাদি। এ বিষয়ে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেসমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আসিফ-উজ-জামান জনকন্ঠকে বলেন, সুদের হার অনুযায়ী একেবারেই সহজ শর্তের ঋণ বলা যায় না। কিছুটা অনমনীয় ঋণ হলেও মধ্য আয়ের দেশে যেতে হলে এই ধরনের ঋণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সূত্র জানায়, বিদ্যুতের এ দুটি প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য প্রথম পর্যায় গত বছরের (২০১৫ সাল) ২৫ জুন কে এফ ডব্লিউএর কাছে অনুরাধ জানায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। কিন্তু সংস্থাটি এ দুটি প্রকল্পে অর্থায়নে সাড়া না দেয়ায় পরবর্তীতে এশিয়ান অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের কাছে অর্থায়নের প্রস্তাব করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর তারা তারা ঋন দিতে সম্মতি জানায়। ফলে গত ৭ ফেব্রুয়ারি এআইআইবির যাচাই কমিটি প্রকল্প দুটির মাঠ পর্যায় সরেজমিন পরিদর্শন করে। অন্যদিকে সম্প্রতি শেয়ারমূল্য বাবদ ৬৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। চলতি মাসের প্রথম দিকেই এই অর্থ পরিশোধ করা হয়। সম্প্রতি এশিয়ান ইনফ্রাসট্রাকচার ব্যাংক (এআইআইবি) আইন ২০১৬ পাশ করেছে সরকার। এই আইনের মাধ্যমে চীনের নেতৃত্বে গঠিত এ ব্যাংকে বাংলাদেশের নির্ধারিত শেয়ারের মূল্য পরিশোধসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ আইনের আওতায় এআইআইবির শেয়ারমূল্য বাবদ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। উদ্বোধনী দিন পর্যন্ত ব্যাংকে অংশগ্রহণকারী ৫৭টি দেশের মধ্যে মাত্র ৩০টি দেশ নির্ধারিত শেয়ারমূল্য পরিশোধ করেছিল। বাকি ২৭টি দেশ এখন শেয়ারের মূল্য পরিশোধ করছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অর্থ পরিশোধের সময় রয়েছে। বিদ্যুত খাতের অন্য যেসব প্রকল্প প্রস্তাব এআইআইবিতে রয়েছে সেগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন কঞ্জুমার কানেকশন থ্রোট রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন প্রোগ্রাম। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুত, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়। গত ৭ মার্চ এ কর্মসূচীটির বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। আপগ্রেডেশন অব পাওয়ার ডিস্ট্র্রিবিউশন সিস্টেম ইন ওয়েস্ট জোন এরিয়া প্রকল্প। মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৮ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়। গত ১ মার্চ এ প্রকল্পটিতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এক্সপানসন এন্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার চিটাগাং এরিয়া (পিজিসিবি)। মন্ত্রণালয় থেকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়। গত ৭ মার্চ এ প্রকল্পটিতে পরিকল্পনা মন্ত্রী নীতিগত অনুমোদন প্রদান করেন। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর বিশ্বব্যাংকের গত বছরের এক সমীক্ষায় বলা হয়, আগামী ১০ বছরের প্রতিটি বছরে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের দরকার ৭০০ থেকে এক হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ ১০ বছরে মোট দরকার পড়বে ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
×