ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভোগান্তির শহর মুম্বাই

ফাইনালের আশায় ভারত, প্রতিপক্ষ উইন্ডিজ

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৩০ মার্চ ২০১৬

ফাইনালের আশায় ভারত, প্রতিপক্ষ উইন্ডিজ

মিথুন আশরাফ, মুম্বাই থেকে ॥ ‘যাচ্ছে-তাই’ অবস্থা মুম্বাইয়ে। ২৬/১১ মুম্বাই জঙ্গী হামলার প্রভাব এখনও আছে। ঘটনা ঘটেছে, ২০০৮ সালের নবেম্বরের ২৬ তারিখে। ঘটনা ঘটিয়েছিল পাকিস্তান জঙ্গীরা। অথচ এর প্রভাব এমনভাবে বিস্তৃত হয়ে আছে যে সাত বছর পরও সব কিছু তাজা! ১৬৪ নিরীহ প্রাণের ক্ষত এখনও দগদগে! আর তাতে ভুগছে বাংলাদেশীরাও। কোনভাবেই বাংলাদেশীদের বিশ্বাস করতে রাজি নয় মুম্বাইবাসী। নিরাপত্তারক্ষীদের কড়া নির্দেশ, কোন বাংলাদেশীদের যেন হোটেলে অবস্থান না হয়। আর তাতে করে কোন রকমে অবস্থান হলেও চরম ভোগান্তির শিকারে পরতে হয়। অমুক করা যাবে না, তমুক করা যাবে না। কত রকমের সতর্ক বার্তা। এমন ভোগান্তির শহর মুম্বাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ফাইনালেও উঠতে চায় মহেন্দ্র সিং ধোনির দল ভারত। এরই মধ্যে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দলই মুম্বাইয়ে অবস্থান করছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল মুম্বাইয়ে একদিন অনুশীলন করলেও ভারত দল আজ অনুশীলন করে বৃহস্পতিবারই সেমিফাইনালে খেলতে নামবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আসলে ভারতের মাথা ঘামানোর সময়ই নেই। তারা যে উড়ছে। বিরাট কোহলির ব্যাটে ভর দিয়ে শুধু জিতেই চলেছে। সেমিফাইনালেও কী সেই রকম কিছুই ঘটবে? তাহলেই তো ফাইনালে উঠে যাবে ভারত। কোহলি এখন এমন একটি পর্যায়ে চলে গেছেন, সবাই তাকে শচীন টেন্ডুলকরের স্থানে বসিয়ে দিচ্ছেন। স্পিনার হরভজন সিং যেমন বলে দিয়েছেন, ‘চ্যাম্পিয়ন কোহলিই হবে পরবর্তী টেন্ডুলকর।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘বিশ্ব যত ক্রিকেটার দেখে তার মধ্যে নিঃসন্দেহে টেন্ডুলকর বিরল। যদি কোহলি এমনভাবে আর কয়েকটি বছর খেলতে থাকে, তাহলে টেন্ডুলকর হয়ে উঠবে।’ সেমিফাইনালেও কোহলির কাছ থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেমন ৫১ বলে অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছেন, তেমন খেলাই চান হরভজন। এমন খেললে তো ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ফাইনালেই উঠে যাবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কী তা হতে দেবে? যে অবস্থা বোঝা যাচ্ছে, তাতে বিপদে আছে ভারতও, কোহলিও। হেলমেটে পতাকা থাকায় যে মামলা হয়েছে, বিতর্ক হচ্ছে; একটু হলেও ধোনি, কোহলিদের ভাবনা হচ্ছে। আর আনুষ্কা শর্মাকে নিয়ে তো সমর্থকরা যা শুরু করেছেন, তাতে কোহলি বিরক্তই। এর প্রভাবও পড়তে পারে খেলায়। তাতে করে কোহলি ব্যাটিং নৈপুণ্য না দেখাতে পারলেই বিপদে পড়ে যাবে ভারত। ভারতকে বিপদেই ফেলতে চান ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। যার ওপর আবার নির্ভরশীল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তার বক্তব্য একটাই, ‘শুধু কোহলি নিয়ে নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভাবতে হচ্ছে ভারত দলটি নিয়েই।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমি আশা করছি কোহলি যাতে খেলতে না পারে। সে এখন দুর্দান্ত ফর্মে আছে। আমরা আসলে আমাদের শক্তি নিয়েই ভাবছি। আমরা শুধু কোহলিকে নিয়ে ভাবছি। ভারত দলে অনেক ম্যাচ উইনার আছে। ব্যাটিং লাইন আপ দুর্দান্ত।’ ‘সুপার টেনে’ প্রথম তিন ম্যাচ দুর্দান্ত খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু চতুর্থ ম্যাচে গিয়ে আফগানিস্তানের কাছে হেরে গেছে। গেইল এ নিয়ে ভাবছেন না। বলেছেন, ‘আমরা জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই। টি২০ এমন খেলা, যেখানে যে কোন দল যে কোন দলের কাছে হারতে পারে। আমরা প্রতিপক্ষকে (ভারতকে) হারাতেই নামব।’ খুব সহজে ভারতকে হারানোর কথা বলে দিলেন গেইল। কিন্তু ভারত যে কোন দলকেই এখন সামনে ভিড়তে দেবে না, দুমড়ে মুছড়ে দেবে; তা গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিতেই বুঝিয়ে দিয়েছে। স্বাগতিক দল ভারত। সমর্থকদের প্রত্যাশা অনেক। দল চ্যাম্পিয়ন হোক, সেটিই চায় সমর্থকরা। ক্রিকেটাররাও সেই চাহিদা পূরণ করার চেষ্টাই করবে। চাহিদা পূরণ করতে হলে আর দুটি ম্যাচ জিতলেই হবে। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল জিতলেই দ্বিতীয়বারের মতো টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলবে ভারত। তা কী সম্ভব? ভারতের পক্ষে সম্ভব। দলটি যে সবার মুখে মুখে এখন। সবাই এখন ভারতকেই চ্যাম্পিয়ন মানছে। সেই ভারত সেমিফাইনাল ম্যাচটি খেলবে মুম্বাইয়ে। যে মুম্বাইয়ে বাংলাদেশীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে। কলকাতা থেকে একঝাঁক সাংবাদিক মঙ্গলবার মুম্বাইয়ে হাজির হয়েছে। উদ্দেশ্য, মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার সেমিফাইনাল ম্যাচ কাভার করবে। কলকাতা, ব্যাঙ্গালুরুতে অনায়াসে হোটেল মিলে গেলেও এখানে একেবারেই ভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে সাংবাদিকরা। কোন হোটেলেই তাদের অবস্থান হচ্ছে না। এক এক করে ১৯ হোটেল ঘুরেও কোন হোটেলে অবস্থান হয়নি। কী যে কঠিন পরিস্থিতি। শুরুতে হোটেলে গেলে রুম দেখানো হয়, হোটেল ভাড়াও বলা হয়। যেই বলা হয় বাংলাদেশী। তখনই আর হোটেল কর্তৃপক্ষ থাকার অনুমতি দিতে চায় না। বাংলাদেশী পাসপোর্ট মানেই হচ্ছে, ‘নো এ্যালাউড’ বলে দেয়া। অবশেষে কোন রকমে একটি মুসলিম হোটেলে থাকার নিশ্চয়তা মিললেও কত নির্দেশ; অমুক করা যাবে না, তমুক করা যাবে না। সব মেনেই শেষপর্যন্ত সেমিফাইনাল কাভার করার জন্য থাকার স্থান হয়। এতটা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে মুম্বাইয়ে। কয়েকটি হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল বাংলাদেশীদের হোটেলে থাকার অনুমতি না দেয়ার কারণ। জানানো হলো, ২৬/১১’র পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশীদের জন্য মুম্বাইয়ে কড়া নির্দেশনা রয়েছে। দুই একটি হোটেল আছে, যারা বাংলাদেশীদের স্থান দেয়। সেখানে রুম খালি থাকলে মিলতে পারে। তবে বেশিরভাগ হোটেলেই বাংলাদেশীদের না রাখার নির্দেশ দেয়া আছে। ভয় যদি কোন হামলার পরিকল্পনা হয়। সেই ভোগান্তির শহরেই ফাইনালে ওঠার আশা দেখছে ভারত।
×