ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানে ফের বর্বরতা!

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ৩০ মার্চ ২০১৬

পাকিস্তানে ফের বর্বরতা!

আবারও জঙ্গী হামলায় রক্তাক্ত হলো অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে খ্যাত পাকিস্তান। বর্বরতা যে দেশটির জনজীবনকে প্রাণবন্ত করে, সেই দেশটির জঙ্গীরা সাধারণ মানুষ তথা নারী ও শিশুদের হত্যা করে নিজেদের বর্বর হিসেবে প্রমাণ করেছে। পাকিস্তানী তালেবানের একটি অংশ জামায়াত উল আহরার এই হত্যার দায় স্বীকার করে বলেছে, খ্রিস্টানদের ইস্টার সানডে উৎসবই ছিল তাদের হামলার লক্ষ্য। জঙ্গী ও জঙ্গীবাদ সৃষ্টি এবং বিকাশে পাকিস্তান যে ‘অবদান’ রেখেছে, তা আজ বিশ্বজুড়েই প্রসারিত। তালেবান, আল কায়েদাসহ আরও অনেক জঙ্গী সংগঠনের আস্তানা পাকিস্তানজুড়ে। ইস্টার সানডে সন্ধ্যায় খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা তাদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন লাহোরের আবাসিক এলাকায় অবস্থিত গুলশান-ই-ইকবাল পার্কে। অথচ সেখানে কোন নিরাপত্তা রক্ষীর উপস্থিতি ছিল না। আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী সেখানে অনায়াসে ঢুকে ইস্টারের জীবন উৎসব স্তব্ধ করে দিয়ে একে একে মৃত্যুর মিছিলে পরিণত করে। পাঞ্জাবের প্রাদেশিক মুসলিম লীগ (নওয়াজ) সরকার এর দায়ভার এড়াতে চায় যদিও। রবিবার সন্ধ্যায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় যখন অসংখ্য মৃত্যুর আহাজারি, ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ ছিটকে পড়া হাত-পা-চোখ রক্তে ভাসছে, হাসপাতালে মৃত্যুযন্ত্রণায় আর্তনাদ করছে আরও অনেকে, এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য টিভিতে দেখার পর সুস্থ থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আরও ক্ষোভ জাগায়, যখন একই সময়ে পাঞ্জাবের সাবেক গবর্নর সালমান তাসিরকে হত্যাকারী কট্টরপন্থী মুমতাজ কাদরীর ফাঁসির প্রতিবাদে প্রায় ১০ হাজার জঙ্গী ইসলামাবাদের ‘রেড জোনে’ ঢুকে পড়ে। উদ্দেশ্য ছিল তাদের ইসলামাবাদ অচল করে দেয়া। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পিছু হটলেও তাদের ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে গেছে। লাহোর ও ইসলামাবাদের ঘটনা দুটি একই সূত্রে গাঁথা। তেহেরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (জামাতুল আহরার) ইসলামাবাদের বিক্ষোভের ফলাফলের জন্য আক্ষেপ করতে গিয়ে লাহোরে হামলার দায় স্বীকারে কয়েক ঘণ্টা সময় নেয়। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের (নওয়াজ) সঙ্গে জামায়াতের ঐতিহাসিক দহরম-মহরমের কারণে এর আগে সেখানে একটি অলিখিত চুক্তি ছিল, গোটা পাকিস্তানে বোমা হামলা হলেও শুধু নওয়াজ শরীফের ঘাঁটি পাঞ্জাবে কোন হামলা হবে না। সাম্প্রতিক অতীতে পিপলস পার্টি ক্ষমতায় থাকতে তাদের বেকায়দায় ফেলতে এই অলিখিত চুক্তির বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হয়েছে। পরে নওয়াজ ক্ষমতায় এলে জঙ্গীবাদী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ করতে অনুরোধ জানায় জামায়াত। কিন্তু সর্বদলীয় ঐকমত্য ও জনদাবির চাপে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে বদ্ধপরিকর ভাব প্রদর্শন করে ইসলামাবাদ। নওয়াজ এক্ষেত্রে জঙ্গীদের পক্ষে কিছুই করতে না পারায় শুরু হয় পাঞ্জাব প্রদেশে বোমা হামলা। সাপ নিয়ে খেললে যা হয়, ঠিক তাই ঘটেছে নওয়াজ সরকারের ক্ষেত্রে। এর মধ্যেও নওয়াজের দলের কতিপয় জামায়াতঘনিষ্ঠ নেতা জঙ্গী উৎপাদনের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে সেগুলো তল্লাশিতে বাধা দেয়। অথচ পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশে বেশকিছু মাদ্রাসায় তল্লাশি চালিয়ে জঙ্গীবাদীদের গ্রেফতার করা হয়। পাঞ্জাবের চিরাচরিত অস্বীকার প্রবণতাই লাহোর ট্র্যাজেডির কারণ বলা যায়। আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ছিলেন মাদ্রাসার শিক্ষক। কথিত জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে চলমান সেনা অভিযানে যেসব শীর্ষ জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে, তাদের দ্রুত বিচার আদালতে মৃত্যুদ- দেয়া হচ্ছে। জামায়াত তাদের মুক্তির দেন দরবার করে ব্যর্থ হয়েছে। কারাগারে হামলা করে আটক জঙ্গীদের মুক্ত করে নিয়ে যাওয়ার বেশকিছু প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে পাকিস্তানী জঙ্গীরা অত্যন্ত মরিয়া হয়ে পড়েছে ব্যর্থ রাষ্ট্রটিকে পুরোপুরি অচল করে দেয়ার চেষ্টায়। জঙ্গী মুমতাজের ফাঁসিকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদে ‘শো-ডাউন’-এর মাধ্যমে জঙ্গীপন্থীরা সেই লক্ষ্য স্পষ্ট করেছে। এই সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য স্পষ্টতই এখন নারী, শিশু, ছাত্রছাত্রীরা। সর্বশেষ আত্মঘাতী বোমা হামলা পাকিস্তানের কফিনে আরেকটা পেরেক পুঁতে দিল।
×