ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাটোরে সিরিজ বোমা হামলা

পাঁচ জেএমবি নেতার যাবজ্জীবন, দু’জন বেকসুর খালাস

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৯ মার্চ ২০১৬

পাঁচ জেএমবি নেতার যাবজ্জীবন, দু’জন বেকসুর খালাস

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ২৮ মার্চ, ২০১৬ ॥ নাটোরে সিরিজ বোমা হামলা মামলার রায়ে পাঁচ জেএমবি নেতাকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় দিয়েছে আদালত। সোমবার দুপুরে নাটোরের অতিরিক্তি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক প্রদীপ কুমার রায় এ সাজা দেন। রায়ে একইসঙ্গে অপর দুই জেএমবি নেতাকে খালাস দেয়া হয়েছে। তারা অন্য মামলায় সাজা পাওয়ায় তাদের এ মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছে, আব্দুর রশিদ ওরফে আসিফ, দেলোয়ার হোসেন মিঠু ওরফে হাসিব, হাফিজুর রহমান হাফিজ, শিহাব উদ্দিন শিহাব, আব্দুল মতিন ওরফে ইসমাইল। খালাস পেয়েছেন অপর দুই জেএমবি ক্যাডার শহীদউল্লাহ ওরফে ফারুক ও শফিউল্লাহ ওরফে তারেক। তারা রাজশাহীতে সিরিজ বোমা হামলা মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় সাজা প্রাপ্ত আাসমি। গত ৭ মার্চ নাটোরের অতিরিক্তি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক প্রদীপ কুমার রায় উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে সিরিজ বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে গাজিপুরের কাশিমপুর কারাগারের আটক জেএমবি নেতা শফিউল্লা ওরফে তারেককে আদালতে হাজির না করায় বিচারক সোমবার মামলাটি পুনরায় রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে। তবে গতকাল সোমবারও নিরাপত্তার কারণে জেএমবি নেতা শফিউল্লা ওরফে তারেককে আদালতে হাজির না করায় বিচারক তার অনুপস্থিতিতেই মামলার রায় ঘোষণা করেন। আদালত সূত্র জানায়, সোমবার সকালে রাজশাহী ও নাটোর কারাগার থেকে বিশেষ পুলিশী নিরাপত্তায় জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য আসামি আব্দুর রশিদ, দেলোয়ার হোসেন মিঠু, হাফিজুর রহমান হাফিজ, শিহাব উদ্দিন শিহাব, আব্দুল মতিন ওরফে ইসমাইল, শহীদউল্লাহ ওরফে ফারুককে কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামা’আতুল মুজাহেদিন ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট নাটোরের জজ আদালত, ডিসি অফিস, ট্রেজারি, বাসস্ট্যান্ড ও পেট্রোলপাম্পসহ ৮টি স্থানে সকাল ১১টা থেকে ১১টা ১৫মিনিটের মধ্যে একযোগে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় বোমা বিস্ফোরণের স্থানে ইসলামী শাসন বাস্তবায়নের আহ্বান সংবলিত জেএমবির প্রচারপত্র বা লিফলেট পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ওই দিনই নাটোর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নাটোর থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করেন। এরপর ২০০৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জেএমবির সদস্য শহীদুল্লাহ ওরফে তারেক বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই, লিফলেট ও বিস্ফোরক দ্রব্যসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে জেএমবির উত্তরাঞ্চলীয় অপারেশন হেডকোয়ার্টার নাটোরের মীরপাড়ার খাদেমুল ইসলামের তিনতলা ভবন থেকে নাটোর ও রাজশাহী জেলা পুলিশ যৌথ অভিযান চালালে কয়েক ঘণ্টার বন্ধুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পরে কয়েকজন জেএমবি সদস্য পালিয়ে গেলেও ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধ ও বোমা ফাটিয়ে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়েখ আব্দুর রহমানের জামাতা আব্দুল আওয়ালসহ অন্যরা বাড়ির পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই, মোবাইল, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, বিস্ফোরক দ্রব্য ও হিট লিস্ট উদ্ধার করে। ২০০৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নাটোরের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট এমএম আরিফ পাশার কাছে আসামি শিহাব, দেলোয়ার হোসেন মিঠু, হাফিজুর রহমান হাফিজ ও আব্দুল মতিন ১৬৪ ধারায় নিজেদের জেএমবি আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য জানিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। এ মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান তদন্ত শেষে আত্মস্বীকৃত জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য হাফিজুর রহমান হাফিজ ওরফে নোমান, দেলোয়ার হোসেন ওরফে মিঠু ওরফে হাসিব, শিহাব উদ্দিন ওরফে শিহাব ওরফে হানজালা ওরফে আনজালা, আব্দুল মতিন ওরফে ইসমাইলসহ শহীদউল্লাহ ওরফে ফারুক, শফিউল্লাহ ওরফে তারিক ও আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে নাটোরের চীফ জুডিশিয়াল আদালতে ২০০৬ সালের ১৬ নবেম্বর অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে বিচারের জন্য ২০০৬ সালের ২৯ নবেম্বর মামলাটি জজ আদালতে প্রেরণ করেন। দীর্ঘ ১১বছর ধরে মামলার মোট ৬৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। রায়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল হাই বলেন, সিরিজ বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ ১১ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। মামলায় আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়ায় কোন জঙ্গী সংগঠন আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট আমেল খান চৌধুরী বলেন, তার মক্কেল আদালত থেকে ন্যায় বিচার পাইনি। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য প্রমাণ উপস্থাপনা করতে পারেনি। তাই আসামি যাতে ন্যায় বিচার পায় সে জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
×