ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মাসেও বাগমারায় আহমদিয়া মসজিদে হামলার ক্লু মেলেনি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৯ মার্চ ২০১৬

তিন মাসেও বাগমারায় আহমদিয়া মসজিদে হামলার ক্লু মেলেনি

শংকর কুমার দে ॥ কে এই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে বোমা হামলাকারী আত্মঘাতী? আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে বোমা হামলা করেছে কি কোন জঙ্গী গোষ্ঠী? রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে বোমা হামলার ঘটনার তদন্ত গত তিন মাস ধরে অন্ধকারে ঘুরপাক খাচ্ছে। কোন প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না তদন্তকারীরা। বোমা হামলার তিন মাস পর এখনও রহস্যাবৃতই। সেই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী নিহত হওয়ায় তার পরিচয় মেলেনি এখনও। তিন মাস আগে গত ডিসেম্বরে শুক্রবার জুমার নামাজে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ বোমা হামলার ঘটনাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে তদন্ত করে র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্ত যে তিমিরে ছিল এখনও সেখানেই রয়ে গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানায়, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় বোমা ফাটাতে গিয়ে ওই যুবক মারা যায় অথবা সে নিজেই আত্মঘাতী হয়েছিল। ঘটনার দিন র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার যারাই ঘটনাস্থলে এসেছে তারা সবাই অভিন্ন সুরে বলেছেন, এটি আত্মঘাতী ঘটনা নয়। হামলাকারীর সঙ্গী অপর এক যুবক বিস্ফোরণের পর ছোটাছুটির সুযোগে পালিয়ে গেলেও তার কোন হদিস করতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। মসজিদে দুই যুবক এবং মসজিদের বাইরে দুই বা তার অধিক হামলাকারী ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। বোমা হামলায় আহত হন তিন মুসল্লি। ঘটনার একদিন পর আইএসের পক্ষ থেকে এ ঘটনার দায় স্বীকারের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ। তবে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দেশে এখনও পর্যন্ত আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই বলে জানানো হয়েছে। দেশী কোন জঙ্গী সংগঠন বিশেষ করে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আত্মঘাতীরা বোমা হামলা করে আইএসের নাম দিয়ে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে বলে তদন্ত সূত্রে জানানো হয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, মসজিদে বোমা হামলার কিছুক্ষণ আগে একটি মোটরসাইকেলে দুই ব্যক্তি দ্রুতগতিতে মসজিদের পাশ দিয়ে চলে যায়। তারা মনে করছেন, হামলাকারীদের পরিকল্পনাই ছিল বোমা হামলা করে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যাবে। আহমদিয়া জামে মসজিদটিতে সাধারণত দুই থেকে তিন কাতার মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করেন। দুপুর দেড়টায় জামাত শুরুর কথা থাকলেও খুতবা আগে শেষ হওয়ায় একটা ২৫ মিনিটে নামাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় রাকাতে যাওয়ার সময় ওই বোমা হামলাকারী তার কোমর থেকে কিছু একটা বের করছে, এমন বুঝতে পেরে নড়েচড়ে ওঠেন নামাজে অংশগ্রহণকারী এক প্রত্যক্ষদর্শী ময়েজ। এতে হামলাকারীর শরীরেই বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারী পালানোর চেষ্টা করলে তার চাচাত ভাই সাহেব আলী তাকে ধরে ফেলেন। এর কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তদন্তকারীরা মসজিদে নামাজে অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, আহমদিয়া মুসলিম জামাতের জামে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী নিহত অজ্ঞাত ওই যুবক নিজেকে রাজশাহী পলিটেকনিকের ছাত্র বলে মুসল্লিদের পরিচয় দিয়েছিল। জুমার নামাজের আগে নিহত যুবক ওই মসজিদে যায় এবং নামাজের কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজের প্রস্তুতি নেয়। এ সময় তার পাশে কাতারে দাঁড়ানো মুসল্লিরা যুবকের পরিচয় জানতে চাইলে সে নিজেকে মোহনপুরে বাড়ি এবং রাজশাহী পলিটেকনিকের ছাত্র বলে জানায়। বোমা হামলার সময়ে নিহত যুবক মুসল্লিদের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে নানা প্রশ্নের জবাবে বলেছিল, মচমইলে তার এক বন্ধুর কাছে এসেছে এবং নামাজের সময় হওয়ায় ওই মসজিদে নামাজ আদায় করতে এসেছে। এরপর ওই যুবককে আর কেউ সন্দেহের চোখে দেখেনি। পরে মসজিদের ইমাম খুতবা শুরু করলে সে মনোযোগ সহকারে শোনছিল। নিহত যুবকের পরনে ছিল নীল রঙের জিন্সের প্যান্ট ও কালো জ্যাকেট। বোমা বিস্ফোরণের আগে তাকে খুব স্বাভাবিক দেখায়। বোমা হামলায় এই যুবকের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়।
×