ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যে ১৫ বছরে ১৭ লক্ষ্য নির্ধারণ

’৩০ সালের মধ্যে দেশ হবে পুরো দারিদ্র্যমুক্ত

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৮ মার্চ ২০১৬

’৩০ সালের মধ্যে  দেশ হবে পুরো দারিদ্র্যমুক্ত

এম শাহজাহান ॥ স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজির) ১৭টি লক্ষ্য আগামী পনেরো বছরে পূরণ করা হবে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয় হচ্ছে অর্থায়ন। তবে এসডিজি বাস্তবায়নে এবার নিজস্ব অর্থায়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। লক্ষ্য অর্জনে বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরতা কমানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এমডিজি অর্জনে অভাবনীয় সাফল্যের পর এবার জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হবে বর্তমান সরকার। এ লক্ষ্যে আগামী বাজেটে বিশেষ কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। বাজেটে এসডিজিবিষয়ক খাতগুলোতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি এডিপি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ নজর দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এসডিজি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার রূপকল্প-২১ ঘোষণা করেছে। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এসডিজি অর্জনের সবগুলো লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) অর্জনে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত করতে চায় সরকার। এছাড়া বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়িয়ে রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ২০২১ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। এজন্য আগামী এসডিজির লক্ষ্যসমূহ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েই বাজেট প্রণয়ন করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, সবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে রূপরেখা পাওয়ার পরই এসডিজি বাস্তবায়নে একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মকৌশলের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। পরবর্তীতে এ রূপরেখা বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনা বিষয়ক কমিটির অনুমোদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। শুধু তাই নয়, এমডিজির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে এসডিজির সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এসডিজির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবগুলো মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই পূর্ণাঙ্গ ধারণা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা এসডিজি বাস্তবায়নকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ জিইডি। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এসডিজির ১৭টি অভীষ্ট লক্ষ্য এবং অন্তর্গত ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সমন্বয় করে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংশ্লিষ্ট এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছে। পরবর্তীতে এটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া হবে। এদিকে, এসডিজি হলো গত ১৫ বছরে প্রচলিত এমডিজির সম্প্রসারিত ও হালনাগাদ রূপ। এতে টেকসই উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ধনী এবং গরিব সকল দেশকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দিয়েছে জাতিসংঘ। আর এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধামুক্তি, সুস্বাস্থ্য, মানসম্মত শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, ব্যয়সাধ্য ও টেকসই জ্বালানি, সবার জন্য কর্মসংস্থান, উদ্ভাবন ও উন্নত অবকাঠামো, বৈষম্য হ্রাসকরণ, টেকসই শহর ও সম্প্রদায়, সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ, সমুদ্রের সুরক্ষা, ভূমির সুরক্ষা, শান্তি ও ন্যায়বিচার এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য অংশীদারিত্ব। এই ১৭টি লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার জন্য বিশ্বের প্রায় সকল দেশ একমত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ সম্প্রতি এসডিজিবিষয়ক এক সেমিনারে বলেন, এসডিজি অর্জন করতে হলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। গত ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর এমডিজি শেষ হয়েছে। এমডিজি ছিল সহায়তানির্ভর। সেজন্য বাংলাদেশ ছাড়া অনেক দেশই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। তবে এবারের লক্ষ্যমাত্রাগুলো খুব দর্শনভিত্তিক। এর মধ্যে বলা আছে মানুষের স্বাধীনতা, সাম্য ও মানবাধিকারের কথা। এতে দেশ ও দেশের অভ্যন্তরে মানুষে মানুষে সাম্য, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন ও সহমর্মিতার কথা বলা আছে। কাউকে বাদ না দিয়ে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে। জানা গেছে, এসডিজি বাস্তবায়নে যে ১৭টি লক্ষ্য নেয়া হয়েছে তার মধ্যে আটটিতে বাংলাদেশ ভাল অবস্থানে আছে বলে মনে করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিডিপি)। সেগুলো হচ্ছেÑ দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও পুষ্টি, শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, পানি ও স্যানিটেশন, জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব (গ্লোবাল পার্টনারশিপ)। আর নয়টি লক্ষ্যে বাংলাদেশের অবস্থান খারাপ বলে মনে করছে সংস্থাটি। সেগুলো হচ্ছেÑ স্বাস্থ্য, সবার জন্য প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান, অবকাঠামো, শিল্পায়ন ও উদ্ভাবন, অসমতা, শহর ও মানব বসতি, টেকসই ভোগ ও উৎপাদন, সমুদ্র ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার, বাস্তু সংস্থান ও জীববৈচিত্র্য ও সুশাসন। এদিকে, এসডিজির লক্ষ্যসমূহ সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে এ্যাকশন প্ল্যান তৈরির জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, শিক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তবে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই এসডিজির সবগুলো লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট ঘোষণায় বলেছেন, ২০১৫ সাল ছিল সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার শেষ বছর। এ কারণে এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘাটতিসমূহ এবং ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। শুধু তাই নয়, মাথাপিছু আয়ের উত্তরণ ঘটিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশের কাতারে শামিল হওয়া সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য। দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হবে ॥ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের লক্ষ্য আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। যদিও আগামী ২০২১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের অনুপাত ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশের বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতি প্রদান করেছে ফুড এ্যান্ড এ্যাগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও)। ইতোমধ্যে ৩৮টি দেশ ক্ষুধার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারণ করা মানদ- অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও জাতিসংঘের অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। এর আগে শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে এমডিজি-৪ অর্জনে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যমাত্রার এমডিজি-২ এর ক্ষেত্রে ২০১১ সালের মধ্যেই প্রায় ৯৫ শতাংশ শিশুকে প্রাইমারী স্কুলে পাঠানো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এমডিজি-৩ অর্জনে সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনেও সফল হবে।
×