ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিউইরা যে কারণে দুর্বার...

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৮ মার্চ ২০১৬

কিউইরা যে কারণে দুর্বার...

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট, সেখানে ধুন্ধুমার টি২০ আরও বেশি অনিশ্চয়তাময়। ২০ ওভারের ম্যাচে দলগুলোর শক্তির পার্থক্য খুবই কম। তাই তো হট-ফেবারিটের তকমা নিয়েও শেষ চারের পথে তথৈবচ ভারত! আবার হিসেবের বাইরে থেকে ‘গ্রুপ অব ডেথ’ গ্রুপ-২ থেকে সবার আগে সেমিতে নিউজিল্যান্ড। ব্ল্যাক-ক্যাপসরা একে একে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে। স্বভাবতই জানতে ইচ্ছে হয়, কিউইদের এমন সাফল্যের রহস্য কি? ‘সুখী ড্রেসিং রুম’Ñ এক বাক্যে এমনটাই জবাব অভিজ্ঞ রস টেইলরের। তবে তারা এখানেই থেমে থাকতে চান না। লক্ষ্য ফাইনাল। বুধবার প্রথম সেমিতে নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। ছন্দ ধরে রেখে শিরোপার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে মরিয়া কেন উইলিয়ামসনের দল। ‘এখনও অনেক পথ যেতে হবে, তবে এতটুকু বলতে পরি আমাদের ড্রেসিং রুম এখন দারুণ সুখী। কেউ সেভাবে হিসেবে ধরেনি, অথচ আমরাই সেমিতে, সবাই মনের ভেতর ফাইনালের বীজটা বুনে ফেলেছে। তার আগে সেমির বাধা পেরোতে হবে এবং কাজটা করতে আমরা ভীষণ রকমের উজ্জীবিত।’ এজন্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল নিয়ে সতর্ক কিউইরা। টি২০তে যে কোন দিন যে কোন কিছুই হতে পারে। বিষয়টা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ৩২ বছর বয়সী তারকা ব্যাটসম্যান আরও যোগ করেন, ‘টি২০ খেলাটা খুবই পিচ্ছিল একটা পথ। যে কোন দিন একজন ব্যাটসম্যানই ম্যাচ বের করে নিয়ে যেতে পারে।’ উপমহাদেশের কন্ডিশনে, বিশেষ করে ভারতের মাটিতে বাইরের দলগুলোর অবস্থা সবসময় খারাপ। অতীতে কিউইরা এখানে অনেকবার খাবি খেয়েছে। অথচ সেই তারাই এবারের বিশ্বকাপে প্রতিকূল কন্ডিশনটা ভাল বুঝতে পারছে। মনে হচ্ছে নিজ দেশে খেলছে। স্বাগতিকদের তো তাদেরই পাতা ফাঁদে আটকে দিয়েছে উইলিয়ামসন-বাহিনী। নিজেদের মাটিতে ভারতের ফর্মুলা পুরনোÑ স্পিন সহায়ক পিচ বানিয়ে প্রতিপক্ষকে বিষের ছোবলে নীল করে দেয়া। নাগপুরের প্রথম ম্যাচে উল্টো সেখানেই ধরা মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। ১২৬ রানের পুঁজি নিয়েও জয় ৪৭ রানে। ভারতকে ৭৯ রানে অলআউট করার দিনে ১০ উইকেটের ৯টিই নেন তিন কিউই স্পিনার মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি ও নাথান ম্যাককুলাম! মাত্র ৪ ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ উইকেট তরুণ বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার স্যান্টনারের। সরসারি সুপার টেনে খেলা দলগুলোর মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সমান ম্যাচে সোধির শিকার সংখ্যা ৮। এরপর ওয়ানডের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান ও ‘বিচ্ছু’ বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা জয় তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ড এখন আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর। প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে কিউইরা যেভাবে দাপটের সঙ্গে সেমিতে উঠে এসেছে, ফাইনালে যেতে না পারলে তাদের জন্য সেটি হবে আরেকটি স্বপ্নভঙ্গ। গত বছর প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও শিরোপা ছোঁয়া হয়নি। আসর শুরুর আগে অবসর নেন বড় তারকা ও অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। কিংবদন্তি মার্টিন ক্রোর মৃত্যু ব্ল্যাক-ক্যাপস শিবিরে আরও শোকাবহ আবহ নিয়ে আসে। সেই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে এভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, কজনই বা ভেবেছিল। ভারতীয় কন্ডিশনে তারা ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছে, বিশেষ করে নতুন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। সুপার টেনে চার ম্যাচের সবকটিতেই টসে জিতেছেন তিনি! প্রয়োজনে জ্বলে উঠে ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাত্র ২৫ বছর বয়সী এই সুপার উইলোবাজ। গত বেশ কিছুদিন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের অপর নাম ছিলেন ম্যাককুলাম। সেই তিনি অবসরের পর উইলিয়ামসন কেমন করেন, সেটি নিয়েও ছিল বাড়তি আগ্রহ। সংশয় কেটে গেছে। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে ঝানু অভিভাবকের মতো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন টগবগে এই তরুণ। টেইলর নিজেও আর সংশয় দেখছেন না। সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান দলের অভিজ্ঞতম সদস্য বলেন, ‘ক্রিকেটে প্রভাব বিস্তার করতে পারা একজন অধিনায়ক মানে অনেক কিছু। হ্যাঁ সবে শুরু, কেনকে এখনও অনেক দূর যেতে হবে। সকালের সূর্য যেমন দিনের পূর্বাভাস দেয়, তেমনি আমি জানি সে কয়েক বছরের মধ্যে নিজের একটা ধরন দাঁড় করিয়ে ফেলবে। ইতোমধ্যে কিছুটা করেও ফেলেছে। ম্যাককুলামের কাছ থেকে সে অনেক কিছু শিখেছে। আমি নিশ্চিত আগে ম্যাককে নিয়ে যেমন কথা হয়েছে, কেনকে নিয়েও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তেমনটাই হবে।’
×