ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সামিট পোর্টের মূলধন বাড়লেও মুনাফা কমছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৮ মার্চ ২০১৬

সামিট পোর্টের মূলধন  বাড়লেও মুনাফা কমছে

অপূর্ব কুমার ॥ পুুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সেবা খাতের কোম্পানি সামিট এ্যালায়েন্স পোর্টের ফি-বছর মূলধন বাড়ালেও বিনিয়োগকারীদের কোন সুফল নেই। উল্টো মূলধন বাড়ার বিপরীতে কোম্পানিটিতে ধারাবাহিকভাবে মুনাফার পরিমাণ কমেছে। এমতাবস্থায় কোম্পানিটি রাইট শেয়ার ছেড়ে আরও মূলধন বাড়াতে যাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোম্পানির রাইট শেয়ার ছেড়ে টাকা উত্তোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। কোম্পানিটি দীর্ঘমেয়াদে ক্রেডিট রেটিংয়ে এ১ এবং স্বল্পমেয়াদে এসটি-৩ ঋণমানসম্পন্ন। জানা গেছে, সামিট এ্যালায়েন্স পোর্ট প্রতিটি শেয়ার ১৫ টাকা দরে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৪৬৬টি শেয়ার ছেড়ে মোট ৫১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা উত্তোলন করার অনুমোদন পেয়েছে। এই টাকার মধ্যে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ দিয়ে জমি ও ১৭ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করবে বলে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এজন্য ৩০ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কোম্পানিটির রাইট শেয়ারের আবেদন সংগ্রহ করা হবে। কোম্পানিটির রাইট আবেদনের ইস্যু মানেজার হিসেবে কাজ করছে লঙ্কা বাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এছাড়া আন্ডার রাইটার হিসেবে রয়েছে লঙ্কা বাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, কসমোপলিটন ফাইন্যান্স লিমিটেড, প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, ব্যানকো ফিন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। কোম্পানিটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সামিট এ্যালায়েন্স পোর্র্ট নামের কোম্পানিটি ২০০৮ সালে পুঁজিবাজার থেকে ১০ টাকা দরে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩ কোটি টাকায়। এর পর ধারাবাহিকভাবে বোনাস শেয়ার দিয়ে ৯৯ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭২ কোটি টাকায়। এছাড়া ২০১৫ সালের জন্য আরও ১৭ কোটি টাকা বোনাস শেয়ার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটির ধারাবাহিকভাবে মূলধন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একই ভাবে কমেছে মুনাফার পরিমাণ। কোম্পানিটিতে ২০০৯ সালের থেকে ২০১০ সালে ৯ কোটি টাকা মূলধন বেড়ে হয় ৯৬ কোটি টাকা। তবে ২০০৯ সালের ৩৫ কোটি মুনাফা বা ৪.০৩ টাকার শেয়ারপ্রতি আয় ২০১০ সালে হয়েছে ২০ কোটি ৫১ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ২.১২ টাকা আয়। এর পর ২০১১ সালে মূলধন বাড়ে ২৪ কোটি টাকা, এর বিপরীতে মুনাফা হয় ১৭ কোটি বা ১.৪৪ টাকা। এদিকে, ২০১২ সালে ১২ কোটি টাকার মূলধন বৃদ্ধির বিপরীতে মুনাফা হয় ১৮ কোটি বা ইপিএস ১.৩৫ টাকা। ২০১৩ সালে এসে ৩১ কোটি টাকার মূলধন বাড়ে। এ বছরে মুনাফা হয় ১৪ কোটি বা শেয়ারপ্রতি ০.৮৮ টাকা। ২০১৪ সালে কোম্পানিটির মূলধন অপরিবর্তিত থাকে, তবে মুনাফা কমে হয় ১৩ কোটি বা শেয়ারপ্রতি ০.৮২ টাকা। ২০১৫ সালে এসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ০.৮৭ টাকা। এ সময়ে মূলধন বেড়েছে ৮ কোটি টাকা। কোম্পানিটির মূলধনের বিপরীতে মুনাফা কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিমত। পাশাপাশি কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি যে পরিমাণ আয় করে তাতে ১৫ টাকা করে রাইট শেয়ার ইস্যুমূল্যও ঠিক না। কোম্পানিটি সর্বশেষ বছরে ০.৮৭ টাকা ইপিএস করেছে। কিন্তু একজন বিনিয়োগকারী কোন ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই ব্যাংকে ডিপোজিট থেকে ৬ শতাংশ হারেও ০.৯০ টাকা পেতে পারে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, মূলধন বৃদ্ধির পরও যদি কোন কোম্পানির ব্যবসায় সম্প্রসারণ না হয় তাহলে রাইট শেয়ার ভাল না। এমনকি সেই কোম্পানির বোনাস শেয়ার ইস্যু করাও ঠিক না। প্রিমিয়াম সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম বিষয় হলো যে যত টাকা তুলে নিতে পারে। এই বিষয়ে সামিট পোর্ট এ্যালায়েন্সের ম্যানেজার আব্দুল্লাহ ওসমান সাজিদ বলেন, সুদজনিত ব্যয় ও বড় ধরনের বিনিয়োগ থাকার কারণে টার্নওভার কম হয়েছে। আগামীতে মুনাফা ও টার্নওভার বাড়বে।
×