ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মঞ্চে ঝুমুরগানে আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে নাচের তালে পাও মেলান – মমতা

প্রকাশিত: ২১:০৩, ২৭ মার্চ ২০১৬

মঞ্চে ঝুমুরগানে আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে নাচের তালে পাও মেলান – মমতা

অনলাইন ডেস্ক ॥ মাওবাদী ধাত্রীভূমিতে নির্বাচনী প্রচার। তবু একবারও মাওবাদীদের নাম মুখে আনলেন না। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও চড়ল না সুর। গরমের শুরুতেই জঙ্গলমহলে ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন কমিশন ভুল করেছে বলেও জানালেন। আর তার থেকেও বেশি নরম সুরে ভোট ভিক্ষে করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে শিলদা, সাঁকরাইল ও খড়িকামাথানির সভায় মোটের উপর এই ছবিই সামনে এল। এ দিন বেলপাহাড়ি ব্লকের শিলদায় প্রথম জনসভাটি করেন মমতা। নীলকুঠি ময়দানে বিনপুর আসনের তৃণমূল প্রার্থী খগেন্দ্রনাথ হেমব্রমের সমর্থনে সেই সভায় আদিবাসী আবেগ উস্কে সাঁওতালিতে মমতা বলেন, “আপে ঝতহড় ভাগি মেনাঃপেয়া?” (আপনারা সবাই ভাল আছেন তো?)। ভোটও চান সাঁওতালিতে, ‘‘জোড়াফুলরে ভোট এমঃপে (জোড়াফুলে ভোট দিন), খগেন্দ্রনাথ হেমব্রম ভোট এমায়পে (খগেন্দ্রনাথ হেমব্রমকে ভোট দিন)। মারাংবুরুর কাছে যাতে তাঁর নামে আদিবাসীরা কল্যাণ কামনা করেন, সেই অনুরোধও করেন মমতা। সভা শেষে মঞ্চে ঝুমুরগানে আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে নাচের তালে পা-ও মেলান। ২০১১ সালে পরিবর্তনের ঝড়েও বিনপুরে জিতেছিল সিপিএম। এ বারও ভোটের আগে বেলপাহাড়ির ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী এলাকায় মাওবাদীদের উঁকিঝুঁকি শুরু হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। এই অবস্থায় জঙ্গলমহলে নাশকতার স্মৃতি উস্কে দেন মমতা। বলেন, ‘‘শিলদার ইএফআর ক্যাম্প ‘অ্যাটাক’ করে আমার অনেক ইএফআর জওয়ানকে মেরে দেওয়া হয়েছিল। ২০১০-১১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার আগে এক বছরেই চল্লিশ জন পুলিশ-সহ চারশো জন খুন হয়েছিল। আমাদের সরকারে আসার পরে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে।’’ এ দিন খড়িকামাথানিতে নয়াগ্রামের প্রার্থী দুলাল মুর্মুর সমর্থনে সভাতেও মমতা বলেন, ‘‘জানেন না আপনারা জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস? ১৭০ জনকে ষড়যন্ত্র করে মেরে দেওয়া হয়েছিল। খুন-সন্ত্রাস আর নরকঙ্কাল ছাড়া গ্রামগঞ্জে কোনও দিন উন্নয়ন ওরা করেনি।’’ সেই সঙ্গে ভসরাঘাট সেতু, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, বিনা পয়সার ওষুধ সব কিছু করে দেওয়ার জন্য জোড়াফুলে ভোট দেওয়ার আর্জি জানান। উন্নয়ন আর শান্তির দাবির পাশাপাশি বারবার মমতা আক্রমণ করেছে সিপিএম-কংগ্রেস জোটকে। তাঁর কটাক্ষ, “মার্কস, লেনিন, হো চি মিন বাদ দিয়ে এখন কংগ্রেসবাদ জিন্দাবাদ হয়ে গিয়েছে।’’ আগামী দিনে বাংলা থেকে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপিকে রাজনৈতিক ভাবে খালি করার হুঁশিয়ারিও দেন। কুলটিকরির সভাতেও তৃণমূল নেত্রী বলেন, “এখানে কংগ্রেস সিপিএম জোট করে নির্বাচনে লড়াই করছে। কিন্তু কেরালাতে তা নয়। এটা ভীষণ খারাপ এবং অপ্রত্যাশিত। এটা নীতিহীন ও স্বার্থপর রাজনীতি।’’ বিঁধেছেন বিজেপিকেও, “বিজেপি শুধু দাঙ্গা লাগায়। ঝাড়খণ্ড থেকে কিছু গুন্ডা এনে কখনও ঝাড়গ্রাম, কখনও নয়াগ্রাম, কখন বেলপাহাড়ি একটু গণ্ডগোল লাগিয়ে দেব। এটা ওদের কাজ।” তবে গোপীবল্লভপুরের প্রার্থী চূড়ামণি মাহাতোর সমর্থনে কুলটিকরির সভাতেও ভোট প্রার্থনায় মমতার সুর ছিল নরম। তাঁর কথায়, ‘‘সবাইকে বলব একটু আশীর্বাদ দিন। মা গো একটু ভালবাসা দাও। একটু দোয়া দাও। আদিবাসী ভাইবোনেরা একটু তোমাদের মারাং থান থেকে ভালবাসা দাও। সবাইকে পরাস্ত কর।” মুখ্যমন্ত্রীর এই বিনয়ী হাবভাবে দলীয় নেতা-কর্মীরাও হতবাক। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×