ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংসদ ভবন ঘিরে স্বাধীনতা দিবসে বর্ণিল আলোর ঝর্ণাধারা

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ২৭ মার্চ ২০১৬

সংসদ ভবন ঘিরে স্বাধীনতা দিবসে বর্ণিল আলোর ঝর্ণাধারা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে লেজাররশ্মি। আলো-আঁধারের খেলায় সংসদ ভবনের দেয়ালে ভেসে উঠছে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। বাংলা ভূখ-ের স্বাধীন মানচিত্র। উৎসুক হাজারো চোখ সংসদ ভবনের দেয়ালজুড়ে। নান শ্রেণী-পেশার মানুষ উপভোগ করে আলো-আঁধারে এই খেলা। অনুষ্ঠান জুড়ে থ্রিডি প্রদর্শনী ছাড়াও ছিল সঙ্গীতানুষ্ঠান। ক্ষণে ক্ষণে মাইকে ভেসে আসছে জাতির পিতার দরাজ কণ্ঠ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, সেই ভাষণের শেষ উচ্চারণ ‘জয় বাংলা’র মধ্য দিয়ে বক্তব্য শেষ হতেই শুরু হচ্ছে জয় বাংলার গান। দেশের গান Ñএ সময় দেশাত্মবোধক গানে কণ্ঠ মেলান আগত লাখো মানুষ। জাতীয় সংসদ ভবন ঘিরে এবারই প্রথমবার এই অনুষ্ঠানমালা সাজায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। কালরাত স্মরণেও ছিল নানা আয়োজন। দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষদিন ছিল স্বাধীনতা দিবসের রাতের বর্ণিল এই অনুষ্ঠান। নজর কাড়ে উৎসবে অংশ নেয়া শহরবাসীর। শনিবার রাতে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া এ্যাভিনিউ ঘুরে দেখা যায়, দক্ষিণ প্লাজায় হাজারো মানুষের ঢল। সবার দৃষ্টি সংসদের দেয়ালজুড়ে। কেউ কেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত। আগত শিশুরা পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে জেনে নিচ্ছে ইতিহাস। সঙ্গীতানুষ্ঠানের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি থাকলেও আবালবৃদ্ধবনিতাকেই টেনেছে সংসদের দেয়ালজুড়ে বর্ণিল আলোয় ফুটে ওঠা ইতিহাস আর ঐতিহ্য। শুধু আলো-আঁধারী খেলা নয়, সঙ্গীত অনুষ্ঠানেরও আয়োজন ছিল। রাতভর চলে কনর্সাট। কনসার্টে অংশ নেন রুনা লায়লা, মমতাজ, এলআরবিসহ দেশবরেণ্য জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পীরা। দেশাত্মবোধক গান ছাড়াও তারা তাদের স্ব স্ব জনপ্রিয় গান গেয়ে শোনান। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘ওয়ান মোর জিরো কমিউনিকেশন্স’ এই থ্রিডি প্রদর্শনীর আয়োজনে দুদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের শেষদিন ছিল শনিবার। সন্ধ্যার পর পরই শনিবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা বর্ণিল আলোকছটায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। উজ্জ্বল আলোয় কথা হয় তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈমের সঙ্গে। বাবা জহির উদ্দিন বাবরের সঙ্গে মানিক মিয়ায় এসেছে সে। ভাষায়, অনুষ্ঠান তার খুব ভাল লাগছে। খুব মজা হচ্ছে। নানা ধরনের আলো, জাতীয় পতাকা, সঙ্গীত অনুষ্ঠান খুব ভাল লাগছে। তার বাবা মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা বাবর জানান, থ্রিডি প্রদর্শনীসহ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানগুলো মেয়ে খুব উপভোগ করছে। শুধু জান্নাত নয়, তার মতো এসেছে হাজারো শিশু। সবার উৎসুক দৃষ্টি। দর্শনার্থীদের প্রায় সবাই দীর্ঘ সময় ধরে উপভোগ করেন সংসদ ভবনে আলো-আঁধারের এই খেলা। দক্ষিণ প্লাজায় চলেছে স্বেচ্ছায় রক্তদানের কর্মসূচী। অনেককেই লাইন ধরে রক্ত দিতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, মাইক থেকেও ভেসে আসে রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণ বার্তা। মানিক মিয়া এ্যাভিনিউয়ের ফুটপাথে বসে এক শিল্পীর তুলির নিখুঁত আঁচড়ে অঙ্কিত হচ্ছে মানুষের মুখচ্ছবি। সেখানেও মানুষের ভিড় কম নয়। তবে নারীই বেশি। অঙ্কিত হচ্ছে তাদেরই পোট্রেট। ভয়াল কালরাত স্মরণে আঁধারের কালো মুছে দিতে মোমের আলোয় উদ্ভাসিত পুরো শহর। বাদ যায়নি মানিক মিয়াও। এখানেই নতুন সূর্য উদয়ের প্রতীক্ষায় ছিল লাখো মানুষ। তাদের অধিকাংশই তরুণ। ভয়াল কালরাত স্মরণে সবার দৃপ্ত উচ্চারণ ছিলÑবিষবাষ্প প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। পঁচিশের সূর্যাস্ত থেকে ছাব্বিশের সূর্যোদয় পর্যন্ত রাতভর সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার মানিক মিয়া এ্যাভিনিউয়ে জেগে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রায় ৩শ’ শিল্পী। সবার হাতে রঙ, আল্পনায় উঠে আসে কালরাতের ভয়াল চিত্র। কালরাত স্মরণে চারুকলা অনুষদ ২০০২ থেকে প্রতিবছর রোড পেন্টিং করে আসছে। প্রতিবছরের মতো এবারও ছিল একই আয়োজন। পরিবারপরিজন নিয়ে কালরাত স্মরণের এই আয়োজনে অংশ নেন অনেকেই। এছাড়া এখানেই অনুষ্ঠিত হয় গ্রামীণফোনের আয়োজনে আলোর যাত্রা শীর্ষক কর্মসূচী। অনুষ্ঠানে মোমবাতি প্রজ্বলন করে স্মরণ করা হয় একাত্তরের শহীদদের।
×