ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বকাপে প্রথম তিন ম্যাচেই হার মানা বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আজ নিউজিল্যান্ড

খালি হাত ভরতে পারবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৬ মার্চ ২০১৬

খালি হাত ভরতে পারবে বাংলাদেশ?

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ এমনিতেই দলের অবস্থা বেহাল। ভারতের বিপক্ষে এমনভাবে হারায় সবার মন খারাপ। বলতে গেলে শোকের ছায়া ঘিরে ধরার মতোই অবস্থা। সেখানে যদি আবার বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে প্রশ্ন করা হয়, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি খেলবে বাংলাদেশ, সেটিই কী আপনার শেষ টি২০ ম্যাচ হবে? তখন কী আর মাশরাফি ভালভাবে উত্তর দেয়ার মতো অবস্থায় থাকেন। একে তো কিভাবে আজ কলকাতার ইডেন গার্ডেনে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে অন্তত ‘সুপার টেনে’ একটি জয় তুলে নেয়া যায়, সেই ভাবনায় আছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। শেষটা ভাল করতে চায়। আগের তিন ম্যাচে যা হয়েছে, তা ভুলে ভাল খেলায় মনোযোগী ক্রিকেটাররা। সেখানে এমন প্রশ্নে মাশরাফি একটু রাগও করলেন মনে হলো। অবসরের প্রশ্ন শুনতেই, ভ্রু কুঁচকে গেল তার। তবুও গম্ভীর মুখে জবাব দিলেন, ‘দেশে গিয়ে বাসায় গিয়েই সিদ্ধান্ত নেব।’ এর বাইরে এ নিয়ে আর একটি কথাও বললেন না। শুধু কিভাবে নিজেদের সামলে নিয়ে আজ ভাল খেলা যায়, সুযোগ পেলে জেতা যায়; সেই কথাগুলোর মাঝেই থাকলেন।বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ আজ। অথচ এখনও সবাইকে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচই আচ্ছন্ন করে রেখেছে। সেই ম্যাচের স্মৃতি যে দাগ কেটেছে। দুঃখস্মৃতি যুক্ত হয়ে গেছে। ম্যাচটি যে কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে, চাপ তৈরি করেছে সবার ভেতর; তা হার্ট এ্যাটাক করে উত্তর প্রদেশের ওমপ্রকাশ শুকলা নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুতেই আঁচ পাওয়া গেছে। ম্যাচটিতে এমনই অবস্থা হয়েছে, শেষ বলে গিয়ে হেরেছে বাংলাদেশ। ডেকান ক্রোনিকেল পত্রিকার দেয়া তথ্য মতে, যখন শেষ ওভারে জিততে ১১ রান দরকার থাকে, উত্তেজনায় কাঁপতে থাকেন শুকলা। পান্ডের করা টানা দুই বলে দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দেন মুশফিকুর রহীম। তখন বুকে ব্যথা অনুভব করেন শুকলা। যখন শেষ বলে মুস্তাফিজুর রহমানকে রান আউট করে দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, ১ রানের জয় তুলে নেয় ভারত; তখন হার্ট এ্যাটাক করে মারা যান শুকলা। তার মৃত্যুতেই বোঝা যায়, বাংলাদেশ ম্যাচটিতে হারলেও কতটা ভাল খেলেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পাওয়া কঠিনই। গ্রুপের সেরা দল এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডই। টানা তিন ম্যাচ জিতেছে কিউইরা। অপরাজিত আছে। সেখানে বাংলাদেশ টানা তিন ম্যাচ হেরেছে। গ্রুপে সবার নিচে বাংলাদেশের অবস্থান। তবে শেষ দুটি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষে যেভাবে জয়ের আশা জাগিয়ে হেরেছে, তাতে নিউজিল্যান্ড যে শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকবে; তা বলা মুশকিল। ম্যাচটি একে তো টি২০ ম্যাচ। যে কোন দলই জিততে পারে। সেখানে বাংলাদেশের একটি ম্যাচ জেতা যেন প্রাপ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত ভাল খেলতে থাকা নিউজিল্যান্ডের একটি খারাপ দিন কি আসবে না? ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানের মতো দলকে উড়িয়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। দলটি যে সব বিভাগেই অনেক শক্তিশালী, তাও বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু খারাপ দিন তো সব দলেরই আসে। সেটি যদি আজ হয়ে যায়, তাহলেই বাংলাদেশের হাতে জয় ধরা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে খালি হাতে এবারও বাংলাদেশকে দেশে ফিরতে হবে না। টানা তিন ম্যাচে হেরে এখন পর্যন্ত যে খালি হাত আছে তা ভরে যাবে। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর যে আর টি২০ বিশ্বকাপে কোন টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে জেতা হয়নি বাংলাদেশের, তখন সেই জয়টিও মিলে যাবে। পারবে বাংলাদেশ সেই জয়টি তুলে নিতে? মাশরাফি বললেন, ‘সুযোগ এলে সম্ভব।’ সেই সুযোগটি কী মিলবে? নিউজিল্যান্ডের বোলিং কোচ এখন অস্ট্রেলিয়ান শেন জার্গেনশন। যখন শুক্রবার সকালে ইডেন গার্ডেনে নিউজিল্যান্ড দল অনুশীলন করে, তখন জার্গেনশনকে দেখা যায়। এ কোচ হচ্ছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ। বাংলাদেশের শক্তি ও দুর্বলতা ভাল করেই জানা আছে জার্গেনশনের। সেই বিষয়গুলো কিউই ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিশ্চয়ই শেয়ার করবেন জার্গেনশন। তাতে করে বাংলাদেশের বোলিংটাই যে এখন সবচেয়ে শক্তিশালী এবং এ বোলিংয়ের বিপক্ষে কিভাবে খেলতে হবে, সেটিও জার্গেনশন জানিয়ে দেবেন। তাতে করে নিউজিল্যান্ড দলের ক্রিকেটাররা যেন বাংলাদেশের বিপক্ষে আরও শক্তিশালীই হয়ে উঠছে। কারণ, অন্য দলগুলো যেখানে পরিপূর্ণভাবে বাংলাদেশের বোলিং সম্পর্কে আঁচ করতে পারেনি, সেখানে জার্গেনশন থাকায় সেই কাজটি নিউজিল্যান্ডের জন্য সহজই হয়ে যাচ্ছে। ম্যাচটিতে জিততে অপরাজিত থেকেই আগেই নিশ্চিত করে নেয়া সেমিফাইনালে খেলবে নিউজিল্যান্ড। ২০০৭-২০১৪ সাল পর্যন্ত ৫ টি২০ বিশ্বকাপ হয়। প্রথম বিশ্বকাপেই শুধু সেমিফাইনালে খেলে নিউজিল্যান্ড। এরপর আর একটি টুর্নামেন্টেও সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি। এবার যখন বিশ্বকাপের আগে দলের সেরা ব্যাটসম্যান, টি২০তে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম অবসর নিয়ে নেন, নিউজিল্যান্ড দলটি ধাক্কাই খায়। দুর্বল হয়ে পড়ে। ‘গ্রুপ অব ডেথে’ খেলে নিউজিল্যান্ড। মনে হয়েছিল, যে তিনটি দল ‘সুপার টেন’ থেকে বাদ পড়বে, নিউজিল্যান্ড সেই দলগুলোর মধ্যে নিচেই থাকবে। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে যখন জিতে গেল নিউজিল্যান্ড, এরপর থেকেই বিশ্বকাপের আগে কাগজে-কলমে দুর্বল দলটি কী দুর্বার হয়ে উঠল। কোন দলকেই পাত্তা দিচ্ছে না। সেখানে বাংলাদেশকেও কী আমলে নেয়ার কথা? আর কোন দলকে আমলে না নিলেও বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবতেই হবে নিউজিল্যান্ডকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে যে ওয়ানডেতে সিরিজ হারের রেকর্ড তাদের সবচেয়ে বেশি। দুইবার বাংলাদেশের কাছে সিরিজে হেরেছে। তবে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ সুখস্মৃতি বার বার অর্জন করতে পারলেও দেশের বাইরে কিন্তু নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ কখনই। টি২০তেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় শূন্য। তিন ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছে। আবার ২০১২ সালে যে টি২০ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই করেছে বাংলাদেশ, সেই ম্যাচটিতেও হার হয়েছে বাংলাদেশেরই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এবার টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জিতে যাবে, তা কোন হিসেবেই ধরা দিচ্ছে না। তবে টি২০তে সব সম্ভব। দিনটি ভাল হলেই হয়ে গেল। আর সেই দিনটিতে নিজেদের মেলে ধরতে পারলেই হলো। বাংলাদেশও জিতে যেতে পারে। সেই জয়টি মিললে ভারতের কাছে হারের প্রলেপও মিলে যাবে। অন্তত শেষপর্যন্ত যে জয় মিলেছে, সেই শান্তি পাওয়া যাবে। দেশের মাটিতে একেবারে খালি হাতে ফিরতে হবে না মাশরাফিদের।
×