ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনায় টর্চার সেলে জমাট রক্তের কাদা

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৬ মার্চ ২০১৬

পাবনায় টর্চার সেলে জমাট রক্তের কাদা

পাকসেনাদের পৈশাচিক নির্যাতনের ভয়াবহতার দৃশ্য আজও ভুলতে পারেনি প্রত্যক্ষদর্শীরা। দুঃসহ সে স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে তারা এখনও শিউরে ওঠে। পাকসেনারা ওয়াপদা ভবন, ডাকবাংলা, এডওয়ার্ড কলেজ, পুরাতন পলিটেকনিক ভবনে ক্যাম্প করে পাকসেনারা। এসব ক্যাম্পে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। সবচে ভয়াবহ নির্যাতন কেন্দ্র ছিল ওয়াপদা ভবন। ওয়াপদার যে ভবনটি বর্তমান আনসার ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, সেটিই ছিল পাকসেনাদের নির্যাতন কেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে রাজাকারের সহায়তায় ধরে এনে ইলেকট্রিক শক, পায়ুপথে গরম ডিম ঢোকানো, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পেরেক ঢোকানো, নাকে গরম পানি ঢালা, আঙ্গুলের নখ তুলে ফেলা, শরীর কেটে মরিচ-লবণ লাগানোসহ পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে পাকসেনারা। এ ক্যাম্পে রাজাকাররা গ্রাম থেকে বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের ধরে এনে পাকসেনাদের হাতে তুলে দিয়েছে। দিনের পর দিন আটকে রেখে তাদের ধর্ষণ করেছে হানাদার বাহিনী। যাতে পালিয়ে যেতে কিংবা আত্মহত্যা করতে না পারে, এ জন্য আটক নারীদের জামা-কাপড় পরতে দেয়নি পাকসেনারা। মেয়েরা উলঙ্গ হয়ে ক্যাম্পে দিন কাটিয়েছে। অসহায় এসব নারী যত চিৎকার করেছে, পাষ- পাকসেনারা তত উল্লাসে মেতে উঠেছে। ওয়াপদার পেছনের প্রাচীর সংলগ্ন বাড়ির মালিক বৃদ্ধ রমজান আলী বিশ্বাস সেদিনের স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে কেঁপে ওঠেন। তিনি জানান, প্রতিরাতেই নারী-পুরুষের ভয়ার্ত চিৎকারে তিনি ঘুমাতে পারতেন না। এক বীরাঙ্গনা সেসব ভয়ার্ত দিনের স্মৃতি বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। তিনি জানান, ঘুটু রাজাকার তাকে বাড়ি থেকে তুলে ওয়াপদা পাক ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে অন্য নারীদের সঙ্গে পাকসেনারা তাঁকেও ধর্ষণ করে। এদের মধ্যে অল্প বয়সী কিশোরীও ছিল। পাকবাহিনীর ২য় বৃহত্তম নির্যাতন কেন্দ্র ছিল সরকারী এডওয়ার্ড কলেজের ৩য় তলা ডিগ্রী ভবন। এ ভবনের পাশের আমতলায় পাকসেনারা প্রকাশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারসহ সাধারণ মানুষকে ধরে এনে ঝুলিয়ে বিচার করে জনগণকে ভয় দেখিয়েছে। পাকসেনারা ক্যাম্প ছেড়ে যাবার সময় গানপাউডার দিয়ে ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এলাকার সাধারণ মানুষ ওই ভবনে গিয়ে আঁতকে ওঠে। সে দৃশ্য স্মরণ করে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু জানিয়েছেন, ভবনের এক কক্ষে ঢুকে হতভম্ব হয়ে পড়ি। কাদার মধ্যে যেন পা আটকে গেল। তাকিয়ে দেখি, কাদা নয় রক্ত আর রক্ত। বিসিক ক্যাম্পেও অসংখ্য মানুষকে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয়। এ ক্যাম্পে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয় বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন, ভাষানী ন্যাপ নেতা দন্ত চিকিৎসক অমলেন্দু দাক্ষী, ব্যবসায়ী সাঈদ তালুকদারকে। -কৃষ্ণ ভৌমিক, পাবনা থেকে
×