ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শৈশব বাঁচানোর লড়াইয়ে শিক্ষিকা

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ২৫ মার্চ ২০১৬

 শৈশব বাঁচানোর লড়াইয়ে শিক্ষিকা

অনলাইন ডেস্ক ॥ দেশ বিচ্ছিন্নতায় বিদীর্ণ। বিপর্যস্ত মানুষ। বিপন্ন শৈশব। আর তাদের বাঁচাতেই তাঁর লাগাতার লড়াই। তিনি প্যালেস্তাইনের শরণার্থী শিবিরের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা হানান আল হ্রাউব। তিনিই এ বছরের ‘বিশ্ব শিক্ষক পুরস্কার’ বিজয়ী। ‘ভার্কি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি বেসরকারি স‌ংস্থা গত বছর থেকে ‘বিশ্ব শিক্ষক প্রতিযোগিতার’র আয়োজন করছে। গত বছর খেতাব জিতেছিলেন মার্কিন স্কুল শিক্ষিকা ন্যান্সি অটওয়েল। এ বছর অনুষ্ঠানটি হয় দুবাইয়ে। সেখানেই ১০ লক্ষ ডলারের পুরস্কারটি জিতে নেন হানান। সেরার পুরস্কার হাতে প্যালেস্তাইনের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বলছিলেন হানান। সন্ত্রাসবাদ আর ইজরায়েলি দখলদারির চাপে প্যালেস্তাইন বিধ্বস্ত। দুই দেশের লড়াই নতুন নয়। কিন্তু তার জেরে আজ বিপদের মুখে নতুন প্রজন্ম। আর তাদের বাঁচাতেই বদ্ধপরিকর হানান। বয়স চল্লিশের কোঠায়। মাথায় হিজাব আর দু’চোখে আত্মবিশ্বাস। হানান জানান, যুদ্ধ-দাঙ্গার মধ্যে বছরের পর বছর কাটাতে কাটাতে বদলে যাচ্ছে প্যালেস্তাইনের শিশুরা। ওরা হাসতে ভুলে গিয়েছে। খেলতে ভুলে গিয়েছে। স্কুলের গণ্ডির মধ্যে অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে হিংসা। বিদ্বেষও। তাই শিশুদের শান্তির ভাষা শেখাতে নতুন পাঠ্যক্রম তৈরি করেছেন তিনি। লিখে ফেলেছেন একটা বই— ‘উই প্লে অ্যান্ড লার্ন’ (আমরা খেলাধুলো করি, পড়াশোনাও)। এতেই একটু একটু বদলাচ্ছে ক্লাসঘরের ছবিটা। এবং হানান বিশ্বাস করেন, এ ভাবেই বদলে যেতে পারে হিংসা-দীর্ণ দেশের ছবিটা। পৃথিবীর অন্য দেশের মতোই প্যালেস্তাইনি শিশুদের ‘স্বাভাবিক’ রাখতে অনুপ্রেরণা জোগান তিনি। এই কাজে স্কুলের অন্য শিক্ষকদেরও উৎসাহ দেন। হাজার আলোর রোশনাইয়ে রাঙা মঞ্চে সে দিন সেরা দশ। আর রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় দর্শকেরা। ভিডিও কনফারেন্সে পোপ ফ্রান্সিস যখন ঘোষণা করলেন বিজয়ীর নাম, আরবি মেশানো ভাঙা ইংরেজিতে হানান বললেন, ‘‘এই জয় প্যালেস্তাইনের জয়। আমরা দশজনেই পৃথিবী বদলে দিতে পারি।’’ সেরা দশের তালিকায় ছিলেন ভারতীয় শিক্ষক রবিন চৌরাশিয়াও। তিনি মুম্বইয়ের যৌনপল্লিতে মেয়েদের জন্য একটি অবৈতনিক স্কুল চালান। প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী বেছে নেওয়া হয়েছিল এমনই ব্যতিক্রমী শিক্ষকদের, যাঁরা সমাজটাকে বদলে দেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন। যাঁদের আদর্শে শিক্ষকতা শুধু পেশা নয়, হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের হাতিয়ারও। হানান সেই তাঁদেরই একজন। শরণার্থী শিবিরের প্রতিকূলতার মধ্যেও এই পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন এই ‘বিশ্ব শিক্ষিকা’। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×