ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশাখ বরণের আগাম প্রস্তুতি

হাতি-ঘোড়া তৈরির ধুম

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২৫ মার্চ ২০১৬

হাতি-ঘোড়া তৈরির ধুম

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ সামনে বৈশাখ। আসছে বাঙালীর প্রাণের উৎসব। বৈশাখ বরণের আয়োজনে এবার আগাম কাজ শুরু হয়েছে রাজশাহীর পবা উপজেলার বসন্তপুরের পালপাড়ায়। বংশ পরম্পরায় এ গ্রামে বৈশাখকে কেন্দ্র করে শখের হাঁড়ি-পাতিল তৈরির হিড়িক পড়ে। তবে এবার একটু আগাম কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কাজের কিছু অংশ বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে পৌঁছে গেছে। নানা কারণে ঝিমিয়ে পড়া এ গ্রামটিতে এবার নতুন করে বৈশাখী হাওয়া লেগেছে। এই প্রথমবারের মতো প্রশিক্ষণের মাধমে পহেলা বৈশাখের অনুষঙ্গ শখের হাঁড়ি, মুখোশ, মাটির পুতুল, পঞ্চসাজি, শোখিন পাখা তৈরি করা হচ্ছে। এবার এ কাজে যুক্ত হয়েছে নতুন প্রজন্মের শিশুরাও। তারাও বসে একসঙ্গে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তৈরি করছে মাটির পুতুল থেকে শুরু করে হাতি, ঘোড়া, পাখি, কলস, বাটি-ঘটি ইত্যাদি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্পী ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় মাটির পুতুলসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরির প্রশিক্ষণ শুরু করেছে এ গ্রামটিতে। যাবতীয় খরচ যোগাচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এখানে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি একদিকে যেমন শেখানো হচ্ছে মাটির কাজ অন্যদিকে আয়ও হচ্ছে। প্রতিদিন প্রতি শিক্ষার্থী পাচ্ছে ১০০ করে টাকাও। এজন্য দু’জন প্রশিক্ষকও নিয়োগ করা হয়েছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে এ গ্রামে মাটির পুতুল তৈরি করেন তাদের মধ্য থেকে মমতা রানী পাল ও বিজলী রানী পাল দায়িত্ব পালন করছেন প্রশিক্ষকের। তারাও প্রতিদিন পাচ্ছেন ৫০০ টাকা করে। মাসব্যাপী এ প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে ১৫ দিন আগে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে প্রশিক্ষণ। এরপর প্রশিক্ষণকালীন ও পরবর্তীতে তৈরি তৈজসপত্রে রঙের প্রলেপ দিয়ে তোলা হবে পহেলা বৈশাখের বিভিন্ন মেলায়। নতুন ১০ জন শিশু এবার প্রথমবারের মতো মাটির জিনিসপত্র তৈরির কাজে প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে। সারাবছর প্রায় ঝিমানো থাকলেও এখন কর্মচঞ্চল পবা উপজেলার বসন্তপুরের পালপাড়া। এ গ্রামে হয়ত বৈশাখ আসবে নীরবে। তবে এ গ্রামের তৈরি বৈশাখী উপকরণে সাজবে দেশ, নগর-বন্দর। তাই এত তাড়া। হাতেও সময় নেই। দ্রুত মাটির তৈরি নানা উপকরণ প্রস্তুতির কাজ চলছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বৈশাখীমেলায় যাবে এসব পণ্য। বুধবার রাজশাহী নগরী থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পবা উপজেলার বসন্তপুরের পালপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, যেন এখনই বৈশাখের ছোয়া লেগেছে সেখানেই। সবাই কর্মব্যস্ত। থরে থরে সাজানো মাটির তৈরি কাঁচা শখের হাঁড়ি, পুতুল, খেলনা, মুখোশ ইত্যাদি। সেগুলোতে এখন রঙের প্রলেপ পড়েনি। শিশুরাই মূলত এগুলোর কারিগর। আর পাশে বসে নির্মাণের পাশাপাশি তাদের কাজ শিখিয়ে দিচ্ছেন মমতা রানী পাল ও বিজলী রানী পাল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওই গ্রামের ৫০ পরিবার দীর্ঘদিন ধরে এ পেশায় জড়িত। তবে নানা কারণে এ পেশা থেকে বিমুখ হয়েছে অনেক পরিবার। তাদের আবার উজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে নতুন করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। গত ২৭ বছর ধরে এ পেশা ধরে রেখেছেন শখের হাঁড়ির কারিগর সুশান্ত কুমার পাল। এরই মধ্যে অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। জাপানে গিয়েও মাটির কারুকাজ রপ্ত করে এসেছেন। কথা হয় সুশান্ত কুমার পালের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ওই পাড়ায় ৫০ পরিবার আদিযুগ থেকেই ধরে রেখেছে বংশীয় পেশা। তবে নানা কারণে এখন পেশা বদলেছেন অনেকে। তবে এখনও তিনি (সুশান্ত কুমার পাল) ও তাঁর পরিবার ধরে রেখেছে এ পেশা। বাড়ির সবাই মিলে কাজ করেন।
×