ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের নীতিমালা জারি ;###;নতুন প্রকল্পের চেয়ে সমাপ্য প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব

নতুন এডিপিতে ১১ কৌশল নেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৫ মার্চ ২০১৬

নতুন এডিপিতে ১১ কৌশল নেয়া হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য নতুন এডিপি তৈরিতে ১১টি বিশেষ কৌশল নিচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আরও নয়টি এবং প্রকল্পভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নয় বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতেই এসব শতর্কতা বলে জানা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধীর গতির প্রকল্পে বরাদ্দ করা অর্থ কেটে নেয়ার কৌশল নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে যে সব প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি দ্রুত সেগুলোতে প্রয়াজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে। নতুন এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট ও সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছর থেকেই এ নয়া কৌশল বাস্তবায়ন করবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব তারিক-উল-ইসলাম এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য নিরসন ও জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। বাংলাদেশের উন্নয়ন ‘রূপকল্প ২০২১’-এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) এবং মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনার উন্নয়ন কৌশলের আলোকে গৃহীত অর্থনৈতিক খাতভিত্তিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহ অর্জনের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)। সরকারের গৃহীত এসব পরিকল্পনা ও বিভিন্ন খাতে বিদ্যমান নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে আগামী অর্থবছরের জন্য নতুন এডিপি তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্তিযোগ্য প্রকল্প এবং বরাদ্দের ক্ষেত্রে জারিকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হবে। নতুন এডিপি গ্রহণের ক্ষেত্রে যে ১১টি কৌশল নেয়া হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে, প্রথমত, এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অনুমোদিত প্রকল্প অগ্রাধিকার পাবে। দ্বিতীয়ত, নতুন প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে চলমান প্রকল্প সমাপ্ত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের সুষম উন্নয়ন ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য নিরসন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক দারিদ্র্য ও আয় বৈষম্য দূরীকরণ, খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন ও পুষ্টিমান উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তার অগ্রগতি সম্প্রসারণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কৃষি-পানি সমম্পদ ও পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, রফতানি প্রসার ও শিল্পায়ন, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, রেল-নৌ ও সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিস্কাশন, লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার, সুশাসন এবং জলবায়ু সংবেদনশীল ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কর্মসূচীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। চতুর্থত, জাতীয় প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণে সরাসরি সহায়ক প্রকল্প ছাড়া কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প প্রস্তাব পরিহার করতে হবে। পঞ্চমত, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনাশীপ (পিপিপি) লিংক কম্পোনেন্ট হিসেবে বাস্তবায়নযোগ্য সম্ভাব্য প্রকল্প অগ্রাধিকার দিতে হবে। ষষ্ঠত, এডিপিতে প্রকল্পসংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে হবে, মেয়াদ উত্তীর্ণ কোন প্রকল্প এডিপিতে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত হবে না। সপ্তমত, বৈদেশিক সাহায্য চুক্তি সম্পাদিত বা বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুনিশ্চিত অঙ্গীকারপ্রাপ্ত ছাড়া কোন অননুমোদিত কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এডিপি অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে না। অষ্টমত, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তথ্য প্রযুক্তি সহায়ক এবং এ খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিমূলক প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। নবম, উন্নয়নের মূল ধারায় জলবায়ু পরিবর্তনকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে বিশেষ কার্যক্রম সম্পন্ন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দশম, প্রকল্পকে টেকসই ও অধিকতর জলবায়ু সংবেদনশীল করার জন্য চলমান অথবা নতুন প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পাশাপাশি দারিদ্র্য,পরিবেশ, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তঃসম্পর্ক বিবেচনায় রাখতে হবে। এগারতম, নদী ভাঙ্গন ও জলাবদ্ধতা রোধে ড্রেজিং, নদী শাসন ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে পরিবেশ ও প্রতিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণে অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত প্রকল্পে তথ্য প্রদান করাতে হবে, যা এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের নতুন এডিপিতে প্রকল্পভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, নতুন এই অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত এবং দ্রুত অগ্রগতি সম্পন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। চলতি প্রকল্পসমূহের অনুমোদিত প্রকল্প দলিলে উল্লেখিত প্রাক্কলিত ব্যয় এবং এ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতির ভিত্তিতে সম্ভাব্য যৌক্তিক ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে নতুন এডিপিতে ব্যয়ের প্রস্তাব করতে হবে। প্রকল্প সাহায্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী দেশ বা সংস্থার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির মেয়াদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরে প্রাপ্য বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারের জন্য পরিপূরক স্থানীয় মুদ্রা (ম্যাচিং ফান্ড) বরাদ্দের দাবি অগ্রাধিকার পাবে। এলাকা বা অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে এডিপিতে গৃহীত প্রকল্পসমূহের বরাদ্দ প্রদানও নিশ্চিত করতে হবে। আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এডিপিতে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে নীতিমালায় বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের এডিপি বা এডিপিভুক্ত স্থগিত বা শূন্য বরাদ্দ দেয়া অথবা বরাদ্দহীনভাবে সংযুক্ত অননুমোদিত প্রকল্পসমূহ আগামী অর্থবছরের এডিপিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে না। তবে বিশেষ যৌক্তিকতা (যদি থাকে) সাপেক্ষে নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য তা প্রস্তাব করা যাবে। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে একান্ত অপরিহার্য এবং উচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত না হলে সরকারী অর্থায়নে সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব পরিহার করতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের আগামী অর্থবছরে সমাপ্য প্রকল্প সংখ্যা, এডিপি বাস্তবায়নের দক্ষতা ও সংশ্লিষ্ট সেক্টরের প্রবেশাধিকারের সঙ্গে নতুন প্রকল্প সংখ্যা সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। ক্ষুদ্র প্রকল্প পৃথকভাবে প্রণয়ন না করে একটি গুচ্ছ প্রকল্পের আওতায় এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) সহায়ক নতুন প্রকল্প অগ্রাধিকার পাবে। বেসরকারী উদ্যোগে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে এমন প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পরিহার করতে হবে। যে সব প্রকল্প ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াকরণ করার জন্য বিবেচিত হয়নি সে সব প্রকল্প পুনরায় অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব পরিহার করতে হবে।
×