ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেই কালরাত

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২৫ মার্চ ২০১৬

সেই কালরাত

পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী একাত্তরের ২৫ মার্চে পরিকল্পিত পন্থায় নেমেছিল এদেশের মানুষ হত্যার মহোৎসবে। একাত্তরের ভয়াল কালরাতের স্মৃতিবাহী সেই ২৫ মার্চ কালের পরিক্রমায় আবার ফিরে এসেছে। আমাদের স্বাধীনতার অব্যবহিত পূর্বরাত এই ২৫ মার্চ। এটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি স্মরণীয় দিন, যা এক ভয়াল নিষ্ঠুরতার স্মৃতি হিসেবে চিহ্নিত। এর পর পরই ঘোষিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী একাত্তরের ২৫ মার্চে পরিকল্পিত পন্থায় নেমেছিল রক্তের স্র্রোতে বাঙালীর সব স্বপ্নকে ভাসিয়ে দিতে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাঙালীর জীবন উৎসর্গ করার ঐতিহাসিক ঘটনার পথ ধরে এ দেশের মানুষকে পাড়ি দিতে হয় অনেক পথ। এই পথের ধারাবাহিকতায় আসে ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং এসবেরই ধারাবাহিকতায় আসে ১৯৭০ সালের নির্বাচন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে এবং সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু নির্বাচনের এই রায় দেখে চমকে যায় পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থবাদী স্বৈর-সামরিক চক্র। কিছুতেই তারা গণতন্ত্রের রায় মেনে নেবে না। শুরু হয় নানান অজুহাত এবং চলতে থাকে চক্রান্ত। দেশের মানুষ ভোট দিয়েছিল ছয় দফার পক্ষে। সেই ছয় দফা পরিণত হয় এক দফায়। শুরু হয় এক অভূতপূর্ব আন্দোলন, অহিংস অসহযোগ আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্সে (সোহ্্রাওয়ার্দী উদ্যান) উত্তাল জনসমুদ্রে দিলেন এক ঐতিহাসিক ভাষণ। সংগ্রামের পূর্বাপর ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তাঁর ওই ভাষণে ঘোষণা করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দিলেন তিনি, নির্দেশ দেন শত্রুর মোকাবেলা করার। চলতে থাকে নানা চক্রান্ত। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আলোচনার জন্য ঢাকায় আসেন এবং সুকৌশলে আলোচনার নামে সৈন্য ও সমরাস্ত্র আনা শুরু করেন। এভাবে সুকৌশলে শুরু হয় কালক্ষেপণ। তারপর এক পর্যায়ে আসে ২৫ মার্চ। এই ২৫ মার্চের রাতে সশস্ত্র পাকিস্তানী বাহিনী হায়েনার মতো নেমে পড়ে গণহত্যায়। একেবারে প্রথম পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বাসভবন এবং ছাত্রদের হল, রাজারবাগ পুলিশের হেডকোয়ার্টার, ইপিআর সদর দফতর, বিভিন্ন স্টেশন ও টার্মিনালে আক্রমণ চালানো হয়। ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালী হত্যার উৎসব শুরু হয় ওই রাতে। আজ ২৫ মার্চ। ’৭১-এর ভয়াল রাতে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন যাঁরা তাঁদের সবার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। এবারের ২৫ মার্চ এসেছে নতুন বার্তা নিয়ে। এগিয়ে চলছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ। কারও কারও রায়ও কার্যকর হচ্ছে। এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- এটাই সবার প্রত্যাশা।
×