ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যতিক্রমী আবহে আবেগের হোলি খেললেন কোহালি

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ২৩ মার্চ ২০১৬

ব্যতিক্রমী আবহে আবেগের হোলি খেললেন কোহালি

অনলাইন ডেস্ক ॥ বিরাট, তোমাকে আমি ভালবাসি! বিয়ে করবে আমাকে? চিন্নাস্বামীর বিকেল। তবে সময়-অনুপাতেই শুধু বিকেল, সূর্যের তেজ বিকেল পাঁচটাতেও গায়ে দিব্য হুল ফোটাবে। ভারতীয় টিমও তো তীব্র রগড়ানি ছেড়ে এখনও ওঠেনি। টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে দু’টো নেটের মধ্যভাগে হাত পিছমোড়া করে দাঁড়িয়ে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি একটা নেটে ওড়াচ্ছেন, উড়িয়েই যাচ্ছেন। মাঠের একটা দিক ছাড়া শিখর ধবনের জন্য। ছোটখাটো একটা ম্যাচ সিচুয়েশনের আয়োজন হয়েছে ওখানে। কিন্তু বিরাট কোহালি, তিনি গেলেন... আরে, প্রেসবক্সের নীচে না? প্রেসবক্সেরই নীচে! ভারতের ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে চিন্নাস্বামীর বিশেষত্ব হল প্রেসবক্সের লাগোয়া বারান্দাটা। তা সেই বারান্দা থেকে একটু ঝুঁকে দেখা গেল, নীচে আবেগের মোহিনী জলসা বসেছে! ভারতের লজিস্টিকস ম্যানেজারকে ঠেলতে ঠেলতে এক ঝাঁক উনিশ-কুড়ি চত্বর থেকে বার করে দিতে উদ্যত। মিডিয়া ম্যানেজার হাতে ফোন নিয়ে একবার ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন আর বাধ্য হয়ে ফিরে আসছেন। উর্দিধারীরা পর্যন্ত কেমন বিহ্বল, চিত্রার্পিতের মতো দাঁড়িয়ে। কিছুই না, ওখানে বিরাট কোহালি গিয়েছেন। গ্রুপ সেলফি তুলে যাচ্ছেন একটার পর একটা। কলেজপড়ুয়ার দল মোটামুটি কাছে ঘেঁষতে-ঘেঁষতে প্রায় ঘাড়ে। অটোগ্রাফের আবদার, ওটাও বা উপেক্ষিত থাকে কী ভাবে? প্রথমে একটা, একটা থেকে দশটা, শেষে অগুনতি! ধন্য কোহালি। যে কোনও ক্রিকেটারের যে অবস্থায় ধৈর্যচ্যুতি ঘটে যাওয়ার কথা, সেখানে তিনি কোহালি কি না একফোঁটা বিরক্ত হচ্ছেন না! অটোগ্রাফের একটা খাতাও ফেরাচ্ছেন না! তরুণীর মিষ্টি প্রেম-নিবেদনে হাসছেন মিটিমিটি! চর্মচক্ষে দেখলে এর পর ক্রিকেট-সাংবাদিকের প্রাক-যুদ্ধ প্রিভিউ অ্যাঙ্গল পেয়ে যাওয়া উচিত। লিখে ফেলা উচিত যে, দোলপূর্ণিমার আবির্ভাবের আগেই আবেগের হোলি খেলতে শুরু করে দিলেন কোহালি। তা-ও এমন একটা ম্যাচের আগে, যেখানে যুদ্ধের গনগনে উত্তাপটাই যেন ফ্যাকাশে মেরে যাচ্ছে। ভাবা যায়, ম্যাচটার নাম ভারত বনাম বাংলাদেশ! মঞ্চও আর পাঁচটা টুর্নামেন্ট নয়, বিশ্বযুদ্ধ। দিন কুড়ি আগে ঢাকায় এশিয়া কাপ ফাইনালে এই একই ম্যাচ ঘিরে কী না হয়েছে। টিকিট-হাহাকার থেকে শুরু করে মীরপুরে ম্যাচের আগে হোয়াটসঅ্যাপে ভারত নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ছবি ছেড়ে দেওয়া, বাদ যায়নি কিছু। অথচ এ বার যুদ্ধের আকাশে সেই হানাহানির ব্যাপারটাই যেন কোথাও নেই। তাসকিন আহমেদের নির্বাসন, অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজার ভেঙে পড়া, পদ্মাপারের বিশ্বাসটাকেই যেন দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। ক্রিকেট-বিশ্বে বাংলাদেশ সাংবাদিককুলের আলাদা জায়গা আছে বল্গাহীন দেশাত্মবোধের জন্য। মঙ্গলবার তাঁরাও কেমন ঝিমিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গত রাতে ভগ্নপ্রায় মাশরাফির টিমের মরিয়া পারফরম্যান্সও যেন তাঁদের উজ্জীবিত করতে পারছে না। বরং কেউ কেউ সমর্থন দিলেন মাশরাফিকে। বললেন, ক্যাপ্টেন হলেও মাশরাফি মানুষ। আর তাসকিন টিমে তাঁর ছোট ভাইয়ের মতো ছিলেন। ম্যাশ সামলাবেন কী ভাবে? দু’টো সাংবাদিক সম্মেলনও সমান উত্তাপহীন। আশিস নেহরাকে খোঁচাখুঁচি করা হয়েছিল ম্যাচটার পারিপার্শ্বিক ঘিরে বৈরিতার ছবি নিয়ে। বিশেষ করে ফেসবুক-টুইটার পৃথিবীতে। গত দেড়-দু’বছর ধরে যা চলছে। শুনে নেহরা যে উত্তরটা দিলেন তাতে উত্তেজনা নয়, তুমুল হাসি পাবে। ভারতীয় পেসার বললেন, “আয়্যাম নট ইন সোশ্যাল মিডিয়া, আই ইউজ মাই ওল্ড নোকিয়া!” সাকিব আল হাসান কৌতুকের রাস্তাতেও গেলেন না। দু’টো ম্যাচ হেরে বাংলাদেশ এমনিই খাদের ধারে। নিউজিল্যান্ড তিন ম্যাচ জিতে শেষ চারে। আর বাংলাদেশ অঙ্কের বিচারেই শুধু টুর্নামেন্টে বেঁচে। তার উপর অসুস্থ তামিম ইকবাল বুধবারও অনিশ্চিত। আগুন তা হলে জ্বলবে কী ভাবে? জ্বালাবেন কে? এ সব দিনেই বোধহয় একজন ক্রিকেট-দেবদূতের প্রয়োজন পড়ে যে বাঁচিয়ে দেবে মিডিয়াকুলকে। এ দিন কোহালি যা হয়ে উঠলেন। আর শুধু আবেগের হোলি কে বলল, ক্রিকেটের হোলিও তিনি অক্লান্ত ভাবে খেলে গেলেন। নেটে ব্যাটিং ছেড়ে দিন, ফিল্ডিং সেশনেও তাঁর যে গভীর প্যাশন দেখা গেল তার ভিডিও করে প্রত্যেক কোচিং ক্যাম্পে পাঠানো উচিত। বিরাট বারবার বলেন, বেঙ্গালুরু তাঁর দ্বিতীয় বাড়ি। সেকেন্ড হোম। ফাঁকা আওয়াজ যে নয়, সেটাও পরে বোঝা গেল। নইলে নেট বোলারদের ক্রিকেট-শিক্ষা দিয়ে যান ক’জন? একজন তরুণ ক্রিকেটার তাঁর কাছে এ দিন জানতে গিয়েছিল, ব্যাকফুটে ভাল খেলার টেকনিক কী? নেটে বল করতে আসা ওই ক্রিকেটারকে নাকি বিরাট বলে দেন, বলটাকে আগে পুরোপুরি পা পর্যন্ত আসতে দেবে। তার পর খেলবে। কিন্তু দিনভর কোহালির আবেগের আবির খেলা দেখেও বোধহয় শেষ পর্যন্ত নিখাদ ক্রিকেটপ্রেমীর মনে একটা অপূর্ণতা কাজ করবে। পরিচিত মহাযুদ্ধের ব্যতিক্রমী আবহ দেখলে হয়তো বেরিয়ে আসবে আফসোসের একটা লাইন। গঙ্গায় কাপ-আশার স্রোত তো এখনও বইছে। পদ্মাটাই যে কেন এমন মোক্ষম সময়ে শুকিয়ে গেল! সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×