ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্যপ্রযুক্তি ঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৩ মার্চ ২০১৬

তথ্যপ্রযুক্তি ঝুঁকি

বাংলাভাষায় একটি প্রবাদ রয়েছে- জুতা পরার আগে পেরেক সারাই করে নিতে হয়। প্রযুক্তির বিকাশের পাশাপাশি তার অপব্যবহার রোধের প্রস্তুতি নেয়া না হলে যা হতে পারে, সেই ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে এখন। যদিও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় উন্নয়নের হাওয়া বইছে এখন গাঁও-গেরামেও। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ এত দ্রুতই ঘটেছে যে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষরা এখন ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে উপকারভোগী দেশের ধনী-দরিদ্র সর্বশ্রেণীর মানুষ। অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এই তথ্যপ্রযুক্তি খাত। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে এই খাতের বিকাশে নবোদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। তারপর ক্রমেই বেড়েছে এই খাতের পরিধি। ইন্টারনেট সুবিধার বিস্তৃতি ঘটার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে গড়ে ৩০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। দেশে নিবন্ধনকৃত আইসিটি কোম্পানির সংখ্যা ৮ শতাধিক। এসব কোম্পানি বছরে ২৫ কোটি ডলারের ব্যবসা করছে। এত দ্রুত বিকাশমান এই খাতের উদ্যোক্তাদের ৬০ ভাগই দেশীয় বাজার টার্গেট করেই কাজ করছে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে গড়ে বছরে সাড়ে ৫ হাজার আইসিটি গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। এই খাত এতটা দ্রুত এগিয়ে যাবে তা হয়ত গোড়াতেই অনেকে অনুধাবন করতে পারেননি। তাই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশের আরও উন্নয়নে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে যা আজ চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। দক্ষ জনশক্তি স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশ প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত আইটির শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রীর আইটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের মতে, বাংলাদেশে সংঘটিত হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে হ্যাকারদের টার্গেটের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এক নম্বরে। দেশ দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের কারণে এটি ঘটছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা হ্যাকিং হওয়ার পর পরই এই খাতের নেতিবাচক দিকটি উন্মোচিত হয়েছে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা যে ঝুঁকিতে তা আবার সামনে উঠে এসেছে। বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শুরু নব্বইয়ের দশকে। তখন অবশ্য প্রযুক্তি এত ভাল ছিল না; অর্থও ছিল না। ছোট ছোট সফটওয়্যার ব্যবহার করা হতো। কেন্দ্রীয়ভাবে আইটির ব্যবহার বেশি ছিল না। ২০০৯ সালের পর এই খাতে আইটির বড় ধরনের ব্যবহার শুরু হয়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে প্রযুক্তিতে। প্রায় পাঁচ হাজার আইটি পেশাজীবী রয়েছেন এ খাতে। বর্তমানে ব্যাংকের ৯০ শতাংশ শাখা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির আওতায়। অনেক ব্যাংকের আইটি উৎকর্ষ আন্তর্জাতিক মানের হলেও অধিকাংশের তা নয়। আইটি ব্যবহারের দিক থেকে দেশ যতটা এগিয়েছে, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলো সেভাবে এগোয়নি। ব্যাংক খাতে এখন আইটির ক্ষেত্রে বড় সমস্যা অভিজ্ঞ ও দক্ষ লোকের অভাব। পাশাপাশি সচেতনতার অভাব। আইটি এক ধরনের প্রকৌশল বিদ্যা ও বিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ বিষয়। কিন্তু দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর যারা আইটি খাত পরিচালনার দায়িত্বে তারা বাণিজ্য বিভাগের লোক। প্রযুক্তির কিছু কিছু ঝুঁকি থেকেই যাবে। প্রতিনিয়ত বিশ্বজুড়ে বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তি। তাই ঝুঁকি মোকাবেলা করতে পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে হবেই। ২০১৪ সালের আগে আইটি নিরাপত্তার বিষয়টিতে ব্যাংকগুলো উদাসীন ছিল। বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট যে ব্যয় হয়। তার মাত্র ৪ শতাংশ খরচ করা হয় আইটি নিরাপত্তায়। আইটি প্রশিক্ষণে খরচ করা হয় ২ শতাংশের কম অর্থ। আর আইটি নিরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতে খরচ করা হয় ১ শতাংশ। এ নিরীক্ষা করা হয় তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত নয়Ñ এমন ব্যক্তিদের দিয়ে। ফলে সামগ্রিকভাবে প্রযুক্তির ত্রুটিগুলো ধরা পড়ছে না। এতে তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তায় একটি বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনা সাইবার ঝুঁকির দুর্বলতা প্রকট করেছে। সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংক খাতে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ঝুঁকি নিরসনের উপায় উদ্ভাবনে জাতীয় কমিটি গঠন করা সঙ্গত। ডিজিটাল বাংলাদেশকে আইটি নিরাপত্তায় সচেষ্ট হওয়ার কোন বিকল্প সামনে নেই।
×